১৯৭৮ সালে আমরা তিন বিদ্রোহী সাইকেলে জামালপুর হয়ে ময়মনসিংহ গেলাম বেড়াতে । বিউটি আপা ময়মনসিঙ্ঘ শহরে নদীর পাড়ে থাকেন বাড়ি বানিয়ে । আমরা দুপুরে দাওয়াত খেতে গেলাম বিউটি আপার বাড়িতে । তেতো শাক খেতে খেতে জানলাম আজ চৈত্র সংক্রান্তি । তেতো খেয়ে সারা বছরের পাপ দূর করে বৈশাখ আবাহন হবে । বেশ , এরপর সংসার পাতলে সংক্রান্তির দিনে তেতো খাওয়া চলতে থাকল ।
সংক্রান্তি শব্দটি প্রচলিত অর্থে ‘শেষ’ নির্দেশ করে। মাসের শেষ। এর আভিধানিক অর্থ সংক্রমণ, সূর্যাদির রাশি অতিক্রমণ; ব্যাপ্তি; সঞ্চার; মাসের শেষ তারিখ। চৈত্র মাসের শেষ তারিখটি চৈত্রসংক্রান্তি, ঠিক যেমন পৌষ মাসের শেষ দিনটি পৌষ বা মকরসংক্রান্তি। প্রতি মাসের শেষ দিনটিই আসলে সংক্রান্তি। চৈত্রসংক্রান্তি বাঙালির জীবনে বিশেষ। কারণ, এটি বাংলা বছর পরিক্রমার শেষ দিন। পরের দিনটিই পয়লা বৈশাখ, অর্থাৎ নতুন বছরের শুরু।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চৈত্রসংক্রান্তির খাবার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে কিছু বিষয়ে মিলও আছে, যেমন তিতা স্বাদের খাবার। এর মধ্যে নিমপাতাভাজা, শুক্ত প্রধান। ঘিয়ে ভাজা নিমপাতা দিয়ে গরম ভাত, সঙ্গে আলু, কুমড়া, পটোল, বেগুন, করলাভাজা—এ পাঁচ রকমের ভাজা, ঢেঁকিশাক, পাটশাক, গিমাশাক, বথুয়াশাক, থানকুনি শাক ভাজা, ডালের বড়া মেশানো শুক্ত, পুঁটি মাছভাজা এগুলো চৈত্রসংক্রান্তির একেবারে ‘ট্রেডমার্ক’ খাবার। খেয়াল করলে দেখবেন, এ খাবারগুলোর কয়েকটি তিতা স্বাদের। ধারণা করা হয়, তিতা খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে শাক ও সবজির সঙ্গে সকালবেলা খাওয়া হয় চাল-বুট-গম-তিলভাজা। আর অবধারিতভাবে খাওয়া হবে শুকনা বরই কিংবা কচি আমের টক। তীব্র গরমে টক খাবার শরীরকে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রাখে। নোয়াখালী অঞ্চলের সংক্রান্তির খাবারের বড় আকর্ষণ পাঁচন বা পাজন। একসময় ১০৮ রকম উপাদানে রান্না হলেও এখন সেটা কমতে কমতে ২০–২৫টি উপকরণে এসে ঠেকেছে। পাজনে থাকে বিভিন্ন বনজ ওষধি লতাপাতা এবং শাকসবজি। করলা, কাঁকরোল, ঢেঁড়া, পটোল, বেগুন, পেঁপে, কাঁচকলা, শিম, বরবটি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কুমড়াসহ গ্রীষ্ম ঋতুতে যেসব শাকসবজি পাওয়া যায়, তার সবকিছু দিয়ে রান্না করা হয় এ পাজন। একেবারে নিরামিষ এ রান্নায় শেষে মেশানো হয় ভাজা নারকেল কোরা, আখের গুড় আর ভাজা শিমের দানা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪