বাঙালির অন্যতম প্রধান উৎসব পহেলা বৈশাখ। সর্বজনীন এ উৎসব ‘বৃহৎ বাংলা’— তথা বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছে। এ ভূ-মণ্ডলে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান উৎসব হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বৈশাখের প্রথম দিনটির বর্ণিল আয়োজন।
কৃষিনির্ভর ‘বৃহৎ বাংলায়’ সম্রাট আকবরের এই উদ্ভাবন এখনও বহুল স্বীকৃতি ও চর্তিত প্রথা। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ ও কৃষি অর্থনীতে ব্যবহার হয়ে আসছে বাংলা সন। ফসল থেকে আরম্ভ করে ব্যবসা- সব কাজেই এর গুরুত্ব অপরিসীম। এখনও গ্রামীণ সমাজে দোকান ভাড়া, জমি বন্ধক, বর্গাচাষ, হিসাব-নিকাশের ভিত্তি দিন হিসেবে ধরা হয় ৩০ চৈত্র কিংবা পহেলা বৈশাখকে।‘পহেলা বৈশাখকে বলা হয় বাঙালির একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় উৎসব। এছাড়াও আমাদের বাংলাদেশের বাঙালিদের জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ, ষোলই ডিসেম্বরের মতো আরও কিছু কিছু দিবস আছে যেগুলোর আবেদন ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য সমান। তবে সেসব কোনো কোনো দিনের সঙ্গে আমাদের শোক ও বেদনার স্মৃতিও জড়িত। অর্থাৎ অবিমিশ্র আনন্দের দিন তা নয়। বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস কয়েকশ’ বছরের পুরনো হলেও মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয় ১৯৮৫ সালের পহেলা বৈশাখ যশোরে। দেশের লোকজ সংস্কৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ছিল এর উদ্দেশ্য। সেই শোভাযাত্রায় অশুভের বিনাশ কামনা করে শুভশক্তির আগমনের প্রার্থনা করা হয়। এর উদ্যোগ নিয়েছিলেন চারুশিল্পী মাহবুব জামাল শামিম। শেষ পর্যন্ত যশোরে সীমাবদ্ধ থাকেনি মঙ্গল শোভাযাত্রা।
ঢাকার চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। শুরুতে এর নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। পরবর্তী সময় এটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবে পরিচিত হয়। ওই সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। সে সময় সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করেছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।সময়ের ব্যবধানে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা সবধরনের মানুষের অংশগ্রহণে একটি প্রধান অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আবহমান বাংলার বিভিন্ন লোকজ উপাদান এই শোভাযাত্রায় ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রা উপলক্ষে হাতে তৈরি করা হয় বিভিন্ন মুখোশ, মূর্তি, ট্যাপা পুতুল, নকশি পাখি, বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। এ শোভাযাত্রাকে শোভিত করার জন্য যে উপাদানগুলো লাগে, সেগুলো শুরু থেকেই নেওয়া হয় দেশের লোকশিল্পের নানা ধরনের খেলনা থেকে। এর বাইরে ঘোড়া, নকশি পাখা, ফুল, প্রজাপতি, মানুষ, প্রকৃতি এগুলো শোভাযাত্রায় স্থান পেতে থাকে।
যুদ্ধ, হিংসা, হানাহানির অবসান প্রত্যাশায়, পৃথিবীজুড়ে শান্তির বৃষ্টি প্রার্থনায় এবারের (১৪৩০ বঙ্গাব্দ) প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের বাণী ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’।
সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ।
সারাবাংলা থেকে আংশিক অনুসরন ।।