somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবার কলকাতা ৬

২৩ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আবার কলকাতা ৫

পিয়ারলেস হাসপাতাল

পিয়ারলেস হাসপাতালে যাবার কথা কেউ আমাকে বলে দেয়নি। এই হাসপাতালে পৌছানোর লম্বা চওড়া কাহিনীর সার সংক্ষেপ হলঃ

২০১৩’র অক্টোবর থেকে দীপার ভয়াবহ এলার্জি সমস্যা। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে চুলকাতে চুলকাতে হাত পা, লাল হয়ে যাচ্ছে। সিএমএইচের ডাক্তাররা সাধ্যমতন চেষ্টা করলেন, কাজ হলোনা। স্কয়ার হসপিটালের এক সিঙ্গাপুর ফেরত ডাক্তার কিছুদিন নাড়া চাড়া করলেন। তাঁর ওষুধে এলার্জি কমে গ্যসট্রিক বেড়ে গেল l সব মিলিয়ে একই অবস্থা। প্রেসকিপশন পয়েন্টে এক হাসি খুশি ডাক্তারনি বসেন, তাঁর চিকিৎসায় কিছুটা কমল। তবে ডাক্তার বা দীপা কেউওই সন্তুষ্ট হলনা। ডাক্তারনির পরামর্শে শমরিতার এক প্রফেরসরও দেখলেন। বললেন এলার্জি অনেক কিছু থেকেই হতে পারে, খাওয়া দাওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। দীপা বলল, কোন কিছু খাওয়া বাদ দেবো?
– হ্যা দিতে হতে পারে
– কি, কি?
– বলা মুসকিল, এক এক জনের তো একএক খাবারে হয়, পরীক্ষা করে বলা দরকার। তবে পরীক্ষাটা এদেশে হয়না।
এতক্ষণ আমি শুনে যাচ্ছিলাম। এবার মুখ খুললাম। ইন্ডিয়ায় কি হয়? আমরা ইন্ডিয়া যেতে পারি।
ডাক্তার বললেন ইন্ডিয়ায় হয়, তবে বুঝে শুনে যেতে হবে। অনেকেই আসলে টাকা পয়সা নেয় কাজের কাজ হয়না।

সেবছর ভিসা জটিলতায় ইন্ডিয়া যাওয়া হলনা। সিঙ্গাপুর বেড়াতে গেলাম। সেখানে ডাক্তারও দেখানো হলে, হাসপাতালে বেড়াতে যাবার মত। ফেরত আসার দিন দুই আগে টেস্ট করাতে চাইলাম। ৫০০ টাকা (ডলার) আর ৩ দিন শুনে দীপা করাতে চাইলো না। আমি যে জোর করে প্রেম দেখাবো, সে সামর্থ সেই মুহুর্তে আমার নেই, দিনের দোহাই দিয়ে দেশে ফিরলাম।

আমার ছোট মেয়ের ঠান্ডা লাগার ধাৎ, তার ওপর এজমার ভাব। সেসব ছোট বেলায় আমারও ছিলো। বড় বেলায় সব বাদ দিয়ে মাইগ্রেণ আমার স্থায়ী রোগ। মাঝে ডায়াবেটিস উঁকি দিয়েছিল। তবে ছোট কন্যা আবার মাইগ্রেণের সমস্যায়ও ভোগে। গত বছর ঠিক করলাম, কাছের দেশ ইন্ডিয়া ঘুরে আসি।
ওয়েব সাইটে কলকাতার হাসপাতাল নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে করতে পিয়ারলেস পছন্দ হয়ে গেলো। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালের সুনাম এবং দুর্ণাম দুইই তাদের ওয়েব সাইটে আছে। একজন লিখেছেন এর চেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা তাঁর আর হয়নি, আর একজন লিখেছেন এই হাসপাতালের ডাক্তারদের সেবায় তাঁর বাবার প্রাণ বেঁচেছে। আরও নানান রকম কথা বার্তা আলোচনা হয়েছে।Gastroenterology আর রেস্পিরেটরি মেডিসিনের ডিপার্টমেন্টের সুনাম আছে দু’একজনের রিভিউয়ে, বদনাম কোথাও নেই।
৪০০ বেডের এই হাসপাতালটি আসলে যে কত বড় বাইরে থেকে বোঝা যায়না। প্রায় ২৮টি ডিপার্টমেন্ট আছে এখানে। বিকে রায় ন্যাশন্যাল নিউরোসাইন্সেস সেন্টার এই হাসপাতালেরই অংশ।
_______________________________________________________________________________
এই হাসপাতালের ঠিকানা টেলিফোন নম্বর সবি পেলাম ওয়েবসাইটে। ঠিকানা হলঃ
৩৬০, পঞ্চশায়র রোড কলকাতা। টেলিফোন নম্বরঃ+৯১৩৩২৪৬২০৯৫৫

( কলকাতায় গিয়ে পঞ্চ শায়ার বললে, পৌছানো মুসকিল আছে, কলকাতার ট্যাক্সিতে এখনও জিপিএস বাধ্যতা মূলক নয়, যে যেকোন ক্যাব ওয়ালা শুধু গন্তব্য সেট করলেই হল, তারচেয়ে ঢের সোজা পিয়ারলেস হাসপাতাল যাবো বলা।)
_________________________________________________________________________________

দোতলার রিসেপসনে পাসপোর্ট দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশনের পর চিকিৎসা শুরু হয়। Gastroenterology, চোখের ডাক্তার, নিউরো সাইন্সেস আরও কী সব ডিপার্টমেন্ট আছে দোতলায়। তিন তলায় রেস্পিরেটরি মেডিসিন, প্যাথোলজি ইত্যাদি।

দীপার ডাক্তার প্রকাশ ঝাঁ , যেসব ওষুধ পত্র দিলেন, তাঁর গুনাগুন জানিনা। তবে তাঁর এলার্জির সমস্যা দূর হয়েছে।

শ্রেয়ার ডাক্তার সঞ্জয় গুপ্তের সাথে আমাদের সম্পর্ক দেড় বছরের। মাথা ভরা টাক, গোলগাল মুখের উপর পেল্লাই গোঁফ আর পাকা রঙ দেখে আমার সব সময় সুকুমার রায়ের গোঁফ চুরি কবিতাটা মনে হয়। শ্রেয়াকে যখন বললেন, চান করতে ঢুকে পানি নিয়ে খেলিস? খাওয়া নিয়ে মাকে জ্বালাস ?
সাথে সাথে দীপার মনে হল, সে সঠিক ডাক্তারের কাছেই এসেছে? আমার মনে হল, এ গুলো ডাক্তারের অনুমান। কম দিনতো আর বাচ্চা কাচ্চা পালছি না। বাচ্চারা এর থেকে আর কী ই বা আলাদা হয়!
সঞ্জয় গুপ্তের সমস্যা হল, সময় ঠিক রাখতে না পারা। সকালে সিরিয়াল দিয়েও তিনটে বেজে গেলো ডাক্তার দেখাতে দেখাতে, এর মধ্যে অবশ্য দুই একটা টেস্টও করা হয়েছে। ডাক্তার বললেন এজমা, এলার্জি আর ঠান্ডা লাগা ভাবটা অনেক কমে গেছে। টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে দু’দিন পরে দেখা করতে হবে।

আমি ভাবলাম যাক বেড়ানোর জন্যে দু’দিন পাওয়া গেলো।
শিবু সাহাকে ফোনে পেলাম। বলল, স্যার আমি তো অনেক দূরে চলে এসেছি। বললাম ঠিক আছে আশেপাশে ভালো কোন শপিং সেন্টার আছে কিনা বলেন, আর খাবারের দোকান।

খুব দূরে নয়

শিবু একটু সময় নিয়ে বলল,স্যার সবই তো আপনার হাতের কাছে। হাসপাতালের দোতালার বারান্দায়ই তো খাবার পাওয়া যায়।
বললাম ও সব ফাস্ট ফুড বাদ দিয়ে বলেন।
আহলে স্যার হেটে গেট পর্যন্ত আসুন একেবারে গেট বরাবর ওষুধের দোকান আর খাবার হোটেল আছে। বেরিয়ে হাতের ডানে পাবেন পুরি টুরির দোকান। এক কাজ করুন না স্যার সন্তোষ পুর চলে আসুন না। ওখানে মেগা মার্টে, বিগ বাজার, শ্রী নিকেতন, ফুড কর্ণার, ট্যাক্সি ফ্যাক্সি সব পাবেন।
– সেটা আবার কত দূর?
– দূর বলছেন কি স্যার? অটোতে পঞ্চাশ টাকার বেশি নেবে না। ওইযো আমরা যে মেইন রোড থেকে বায়ে নাবলাম না, ওখানে রোডটা ক্রসকরলেই ওপারে সন্তোষপুর। বিগ বাজারের সাইনবোর্ড তো দূর থেকেই দেখা যায়। পিয়ারলেস থেকে ছ’ সাতশ’ গজও না।
মে মাসের ভয়ংকর রোদে ঘামতে ঘামতে অটোর খোঁজে রাস্তায় নামলাম।

সন্তোষ পুর বিগ বাজার
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৪:২৯
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×