বুশের উত্তরসূরী রিপাবলিকান প্রার্থী জন ম্যাককেইন (৭২) তাঁর দলের কনভেনশনে বলছিলেন, ‘আমেরিকানরা এক দল অন্য দলের বিরুদ্ধে আর বিষোদগার দেখতে চায় না। আমি দুই দলের সদস্যদের সাথেই কাজ করেছি। আমাদের সমস্যাটা কোথায় তা আমি জানি। আর এও জানি নিরপেক্ষভাবে দলের উর্ধ্বে ঊঠে কিভাবে এর সমাধান করতে হয়। আসুন, আমরা দুই দলের মধ্যকার ভাল ভাল ধারনাগুলো কাজে লাগাই। আমরা সবাই এক খোদার বান্দা, সবাই আমেরিকান। এই আমেরিকানদের জন্যই আমি যুদ্ধ করেছি। আর এবার আমি ঠিক আপনার জন্যই লড়ছি’। তিনি আমেরিকানদের তাঁর নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি যাচাইয়ের আহবান জানিয়ে যখন আরো বললেন, ‘আমরা নির্বাচিত হয়ে ওয়াশিংটনে পরিবর্তন আনব আর ওয়াশিংটনকেও সুযোগ দিব আমাদেরকে বদলাতে। দেশ চালাতে ভবিষ্যত ক্যাবিনেটে আমি ডেমোক্রেটদেরও অন্তর্ভূক্ত করব’। তখন আমি ভাবছিলাম আমাদের দেশের রাজনীতিকদের মিডিয়াতে হরহামেশা বোমা ফাটানো দায়িত্বহীন কথাবার্তা। এরকম একজনও জীবিত রাজনীতিবিদ পাওয়া গেলনা যিনি কিনা দেশের সব মানুষকে স্বনির্ভর বাংলা গড়ার সুরের মূর্চ্ছনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন দেখাবেন। আমেরিকার দুই দলের নামকরা মোটামুটি সব প্রেসিডেন্টেরই অতীত ঘাঁটলে দেখা যাবে তাঁদের মেয়াদে কোন না কোন বড়সড় কেলেংকারীর ছাপ রেখে গেছেন। বুশের তো কেলেংকারীর অন্তই নেই। তাঁর বাবারও ছিল। ক্লিনটন, রিগ্যান সবারই ছিল। কিন্তু নির্বাচন এলে তাঁরা শুধুমাত্র ঠিক আগের প্রেসিডেন্ট টার্ম ছাড়া খুব বেশী দূর যেয়ে অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘঁটি করেন না। বর্তমান ও সামনের অনাগত দিনের পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বর্তমান প্রজন্ম কি রেখে যেতে পারে তার কথা শোনায়। ব্যারাক ওবামা (৪৭) তাঁর স্বাস্থ্যসেবা, ট্যাক্স হ্রাস, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য সহজল্ভ্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চাকুরি নিশ্চিত করণসহ প্রভূত নির্বাচনী ওয়াদার ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, ‘প্রত্যকে প্রজন্মের মানুষদেরই দায়িত্ব রয়েছে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটা ভবিষ্যত রেখে যাওয়া। বুশের বিধ্বস্ত ও ধ্বংসাত্মক নীতিতে জাতি বিভক্ত হওয়ায় আমি চাই সব আমেরিকানদের একসাথে নিয়ে চলতে। কারন, আমি দেশকে বড্ড বেশী ভালবাসি’।
যাহোক, আমরা আজকে আমেরিকার সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ ছড়ানো নিয়েই আমাদের আলোচনা বৃত্তাবদ্ধ করে রাখব।
বিশ্বব্যাপী বর্তমান ভাঙা ভাবমূর্তি মেরামতে নিজেকেই সবচেয়ে বেশী যোগ্য কারিগর প্রমান করতে ওবামা-ম্যাককেইন বাগযুদ্ধ এখন তুঙ্গে। জন ম্যাককেইন রিপাবলিকান দলের আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন লাভের পর অর্থ যোগানদাতাদের নিকট ই-মেইলে জানিয়ে দেন তিনি সারাহ পলিনকে ‘ওয়াশিংটন সংস্কার’-র জন্য রানিংমেট হিসেবে বাছাই করেছেন। অর্থাত এর মাধ্যমে তিনিও স্বীকার করে নিলেন আট বছর বুশ অফিস করায় ‘ওভাল অফিস’কে এখন ‘রিফর্ম’ করতে হবে। তিনি তাঁর নিজ দলের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘কিছু রিপাবলিকানরা দূর্নীতি উতসাহিত করায় আজ আমরা আমেরিকানদের বিশ্বাস নষ্ট করেছি।’ আমেরিকার অংগরাজ্য মিনোসোটার সেন্ট পল এনার্জি সেন্টারে দলের কনভেনশনে ম্যাককেইন আলাস্কার গভর্ণর ১৯৮৪ সালের সাবেক রানারস্ আপ মিস আলাস্কা সারাহ পলিনের (৪৪) নাম ঘোষনা করেন। সারাহ তাঁর দীর্ঘ অনলবর্ষী বক্তৃতায় নিজের পরিচয় ‘হকি মাতা’ বলে ওবামার বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী ভাষন দিয়ে রিপাবলিকানদের ভীষন উত্তেজিত ও উতফুল্লিত করেছেন। ডায়াসে তিনি স্বামী টড পলিন ও পাঁচ সন্তান নিয়ে হাজির হন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সন্তান ডাউন সিনড্রোম ছেলে ট্রিডের বয়স মাত্র পাঁচ মাস। সাধারনভাবে আমেরিকায় পারিবারিক বন্ধন অত্যন্ত নাজুক হলেও শাসকদের ক্ষেত্রে আমেরিকানরা উলটো দেখতে চায়। প্রার্থীরা তাই পরিবার-পরিজনদের সাথে করে স্টেজে উঠে শক্ত পারিবারিক বন্ধন প্রদর্শনের প্রথম অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে হয়। সারাহ বললেন, ‘তাদের সংসার দু’যুগের বেশী সময় ধরে আজো অভঙ্গুর’। সন্তানদের মধ্যে ১৭ বছর বয়স্কা ব্রিস্টল পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্বা। বন্ধু ও হবু স্বামী সমবয়সের লেভী জনস্টনও উপস্থিত ছিল। গর্ভপাতবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী সারাহ তার কুমারী মেয়ের পেটের বাচ্চা নষ্ট না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই আন্দোলনকে আরো বেগবান করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। রিলেজিয়াস কমিউনিটির ব্যক্তিত্বরা এতে বাহ্বা দিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে পলিন এতগুলো সন্তান লালন-পালন ও সংসার সামলানোকে তাঁরা ‘অসাধারন’ বলে অভিহিত করেছেন।
সবাইকে চমকে দিলেও রিপাবলিকানরা মনে করছেন, ম্যাককেইন রানিং মেট নির্বাচনে ভুল করেননি। পলিনকে মনোনয়ন করার মূল কারনসমূহের একটি হল ‘জেন্ডার কার্ড’। হিলারীর ১৮ মিলিয়ন ভোট বাগানোর মোক্ষম হাতিয়ার একমাত্র সারাহ্ই। বাছাই পর্বে ওবামাকে হারাতে হিলারী খুব নোংরা ও ব্যক্তিগত আক্রমন করে এড দিয়েছিলেন। হিলারী সর্বশক্তি দিয়ে ওবামাকে এখন সমর্থন করলেও তাঁর ব্যবহৃত পূর্বের কৌশলগুলো বুমেরাং হয়ে ওবামাকে বারে বারে আঘাত করছে। হিলারীর পূর্বের ওই টেপ বাজিয়ে নেপথ্যের কন্ঠ বলছে, ‘হ্যাঁ, হিলারী সঠিকই বলেছেন’। হিলারীর ওই বিজ্ঞাপনটির সারমর্ম ছিল এরূপ, ভোর তিনটায় ওয়াশিংটন হাউসে ফোন এলে ওবামার সাহস নেই ফোন ধরার। কারন তিনি ‘অপরিপক্ক’, একমাত্র হিলারীই পারবেন অসময়ে উদ্ভূত যেকোন পরিস্থিতি সামাল দিতে। স্বামী বিল ক্লিনটনসহ তিনি তাঁদের গোঁড়া সমর্থক বিশেষকরে মহিলা ভোটারদের ওবামার পক্ষে ভোট দেয়ার প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হিলারী বলছেন, ‘এই ২০০৮ সালেও ম্যাককেইন মনে করেন না যে, পুরুষ ও মহিলাদের বেতনে বৈষম্য থাকা বাঞ্চনীয় নয়’।
প্রতিপক্ষের এরকম অপবাদ আগেভাগে আঁচ করেই ওবামা তাঁর রানিংমেট হিসেবে ৬৬ বছর বয়স্ক জো বাইডেনকে পছন্দ করেছিলেন। বাইডেন ৬ মেয়াদ ধরে সিনেটর নির্বাচিত হয়ে আসছেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। আমেরিকার ‘ফরেন রিলেশন কমিটির’ চেয়ারম্যান ছাড়া ‘ইয়ুগোশ্লাভ যুদ্ধ’, ‘ইরাক যুদ্ধ’-র রেজুলেশন তৈরীতেও তাঁর প্রধান ভূমিকা রয়েছে। ‘সিনেট জুডিসিয়ারী কমিটি’, ‘ড্রাগ পলিসি’, ‘অপরাধ প্রতিরোধ’, ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন’, ‘ভায়োল্যান্টক্রাইম কন্ট্রোল এন্ড ল এনফোর্সমেন্ট অ্যাক্ট’, ‘ভায়োলেন্ট এগেইনস্ট উইমেন অ্যাক্ট’ ইত্যাদির সাথে তাঁর জড়িত থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
জো বাইডেনের বিপরীতে পলিনকে রক্ষনশীল দল রিপাবলিকান-কৌশলীদের পছন্দ করার আরো একটি কারন রয়েছে। সেটি হল সারাহ্র কট্টর ধার্মিক ইমেজ। যিনি ইরাক যুদ্ধকে ‘পবিত্র যুদ্ধ’ মনে করেন, এতে করে আনূমানিক ৮৭ মিলিয়ন ক্যাথলিকদের ‘সুইং ভোট’ ঝুঁকে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। গত জুনে পলিন তাঁর সাবেক গীর্জার বাইবেল ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় ইরাকে আমেরিকান সৈন্য মোতায়েন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘Our national leaders are sending them out on a task that is from God (অর্থাত আমাদের নেতৃবৃন্দ ঈশ্বর অর্পিত কর্ম সম্পন্ন করতেই ইরাকে সৈন্য পাঠিয়েছেন।‘) তিনি আরো বলেছেন, ‘That’s what we have to make sure that we’re praying for , that there is plan and that plan is God’s plan (অর্থাত এই কারনেই আমাদেরকে অবশ্যই তাদের জন্য প্রার্থনা করতে হবে। আর সেখানে একটা পরিকল্পনাও রয়েছে এবং সেই পরিকল্পনাটা হল ঈশ্বরের পরিকল্পনা।‘) পলিনের বিশেষ এই ভাষনটি তাঁর নিজ শহর ওয়াসিলার ‘ওয়াসিলা এসেম্বলী অব গড’ সাইটে দেখানো হয়। তিনি ছাত্রদেরকে নিজেকে ‘বাইবেল বিলিভিং’ পরিচয় দিয়ে আরো বলেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে এই বুঝাতে চাই যে, তোমরা যীশুর ভালবাসা আলাস্কার সর্বত্র ছড়িয়ে দাও। আমি গভর্ণর অফিসে বসে যীশুর ইচ্ছারই বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে চেষ্টিত। রাজ্যের ৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপ লাইনের প্রজেক্ট বাস্তবায়নের চেষ্টাও ঈশ্বরের ইচ্ছায়। আমার স্টাফরা কখনো কোন ভাল কাজ করতে পারত না যদি না আলাস্কাবাসীদের হৃদয়-মন ঈশ্বরের সাথে মিশে না থাকত’। তিনি আরো বলেন, ‘I think God’s will has to be done in unifying people and companies to get that gas line built.’
(চলবে)
আলোচিত ব্লগ
তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???
তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???
আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।
১ম ধাপঃ
দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি
গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন
জানা আপুর আপডেট
জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।
বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন
বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।
এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন