প্রিয়, আমার জন্য ফেলো না অশ্রুজল
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আর্মেনিয়ান গির্জায় গিয়েছি শুক্রবারের শান্তএক বিকেলে। হোটেল আল রাজ্জাক থেকে একটু সামনে এগিয়ে ডানে মোড় নিয়ে কিছুদুর হাটার পরই আরমানিটোলা। অথবা নয়াবাজার থেকে কিছুটা গেলেই আরমানেিটালা। তবে অবাক ব্যাপার সেখানকার অনেকেই দেখলাম আর্মেনিয়ান গির্জার কথা জানেনা। ক'জনের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছুন মাথা চুলকে বললো সামনে। আমি আলরাজ্জাকের সামনে দিয়ে যেতে যেতে একসময় নয়াবাজার দিয়ে বের হলাম, গির্জার দেখা আর পেলাম না। এবার এক দোকানদারকে পাকরাও করলাম, সে সঠিক লোকেশন দেখিয়ে দিলো। অবশেষে খুজে পেলাম সেই গির্জা। কিন্তু গেট তালাবন্ধ। অনেকক্ষন তালা ধরে নাড়াচাড়ার পর একলোক বের হয়ে আসলেন। তিনি এর কেয়ার টেকার। উদ্দেশ্য বলতেই তালা খুলে ভেতরে নিয়ে গেলেন। শান্তু স্নিগ আর সুন্দর করে সাজানো এ গির্জাটি আর সংলগ্ন কবরখানাটি।
আর্মনিয়ান গির্জার প্রতিষ্ঠা হয় ১৭৮১ সালে। এর আগে এখানে ছিলো শুধু কবরস্থান। ঢাকায় বসবাসরত আর্মেনীয়দের মৃত্য হলে এখানে কবর দেয়া হতো। অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে বিশে¡র অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতো ভাগ্য বদলাতে আর্মেনিয়রাও ঢাকায় আসতে শুরু করে। একসময় তারা নেিজরা মিলে একটি সপ্রদায় গড়ে তুললেন। যদিও তাদের সংখ্যা ছিলো খুব কম (১৮৩২ সালের দিকে তারা ছিলো ৪২ টি পরিবার, ১২৬ জন সদস্য) তবুও তারা ছিলো ব্যপক প্রভাবশালী। লবন আর পাট ব্যবসা করে তারা রারাতি প্রভাবশালী বনে যান, বিপুল বিত্ত বৈভব বসেে যায় তাদেও হাতে। জানা যায় ১৮৬৮ সালের দিকে ৬ জন ইউরোপীয় জমিদারদের মধ্যে ৫ জনই ছিলেন আর্মেনিয়ান। তারা ঢাকায় বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলতে থাকেন। ঢাকার অনেক বিখ্যাত ভবনের মালিকানা ছিলো তাদের হাতে। বর্তমানে আমরা যে রুপলাল হাউস দেখছি তার মালিকও ছিলেন একজন আর্মেনিয়ান।
ভেতরে ঢুকে সৌম্য, স্নিগ্ধ এলাকাটি ঘুরে দেখতে লাগলাম কেয়ারটেকারের সাথে। কেয়ারটেকার এর নানা ইতিহাস বর্ননা করলো। ৭০০ ফুট লম্বা গির্জাটির রয়েছে ৪ টি দরজা আর ২৭ টি জানালা। ভেতরে সারি সারি চেয়ার সাজানো রয়েছে আর রয়েছে পাদ্রি বসার জন্য একটি বেদি। গির্জার আশেপাশে রয়েছে প্রায় শ'খানেক আর্মেনিয়ানের কবর। এপিটাফগুলো থেকে জানা যায় কবরগুলো প্রায় প্রতিটিই ২০০ বছরেরও বেশী পুরনো। খুব সুন্দর কিছু কথা লেখা রয়েছে সেসব এপিটাফে। ম্যাক. এস. ম্যাকারটিক নামের এক তরুনের কবরের এপিটাফে ইংরেজীতে লেখা আছে : প্রিয়, আমার জন্য ফেলোনা অশ্রুজল। অনেক কবরে দেখলাম জলদস্যুদের ছাপ আকা আছে। শুনলাম এরা নাকি নাবিক। জলদস্যুদের হাতে নিহত হয়েছে তাই এ চিহ্ন আকা হয়েছে তাদের এপিটাফে।
সুন্দর, স্নিগ, শান্ত একটা বিকেল কাটিয়েকেয়াটেকার সাহেবেটা কটা টাকা বকশিশ দিয়ে বের হয়ে এলাম সেখান থেকে। কানে বাজতে থাকলো, প্রিয়, আমার জন্য ফেলোনা অশ্রুজল।
৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।