একক শাসক হওয়ার সপ্নে বিভোর সৌদি ক্রাউন প্রিন্স সালমান যখন অন্য যুবরাজদের বন্দী ও জব্দ তাঁদের বিলিয়ন ডলারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছেন, সেদেশ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী! আরেকটি যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে লেবাননের ওপর, আর এই মুহূর্তে ইহুদীবাদী ইসরায়েলের আনুগত্য মেনে নিয়েছে সুন্নি আরব দেশগুলো!
গত ৪ নভেম্বর সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি পদত্যাগের ঘোষণা করেন, যদিও দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন বলেছেন সৌদি আরব তাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হারিরিকে অপহরন করেছে।
হারিরি বিষয়ে সৌদি আরব বা ইসরাইল চুপ থাকলেও ইসরাইলের চ্যানেল ১০ টেলিভিশন বিশ্বের সব ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে পাঠানো ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ গোপনীয় তারবার্তা ফাঁস করেছে। তারবার্তায় ইসরায়েলি কূটনীতিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়, হারিরির পদত্যাগের ঘটনাটাকে তারা যেন ইরান ও হিজবুল্লাহকে চাপে রাখার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে এবং বিশ্বকে বোঝায়, ইরান কত খারাপ। তারা যেন লেবানিজ সরকার থেকে হিজবুল্লাহকে বহিষ্কারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ দেয় এবং সৌদি আরবকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাহায্য করতে হবে।
আইএস ও আল-কায়েদার প্রতি সৌদি-ইসরায়েলি মদদের বিষয়টি অনেক আগেই ফাঁস হয়েছে। ইয়েমেন ও সিরিয়াকে নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয়ে সৌদি-মার্কিন-ইসরায়েল জোট সুযোগ খুঁজছে লেবাননে। ইসরায়েলে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল শ্যাপিরো ইসরায়েলের শীর্ষ দৈনিক হারেটজে লিখেছেন, ‘সৌদিরা যুদ্ধের ময়দান সিরিয়া থেকে লেবাননে সরিয়ে আনতে চাইছে।’ এই কাজে সৌদি আরবের ইসরায়েলকে লাগবেই। মধ্যপ্রাচ্যের সেরা সামরিক গোয়েন্দা তথ্য ও সমরাস্ত্র ইসরায়েলেরই আছে। এ অবস্থায় শিয়া-সুন্নি-খ্রিষ্টান ভাগে বিভক্ত লেবাননই একমাত্র নরম জায়গা। অতীতে কয়েকবার তারা লেবাননে আগ্রাসন চালিয়েছে এবং প্রতিবারই প্রতিরোধের মুখে হাত গুটিয়ে ফেরত আসতে হয়েছে।
ধৈর্যের জন্য ইরানিরা খ্যাত, আর ইসরায়েলিদের গুণ হলো কূটবুদ্ধি নিয়ে আগ্রাসী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লেগে থাকা। সাদ হারিরিকে পদত্যাগ করিয়ে লেবাননের কোয়ালিশন সরকারে ভাঙন এনে অস্থিরতা সৃষ্টির চিন্তা তাদের। কোনো সন্দেহ নেই, খ্রিষ্টান ও শিয়া সংঘাত তৈরি করে সেই সুযোগে হিজবুল্লাহকে নির্মূল করাই সৌদি-ইসরায়েলি জোটের লক্ষ্য। কৌশলে সৌদি আরবকে সামনে রেখে ইসরায়েল হতে চাইছে সুন্নি দেশগুলোর নেতা।
আল-জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদন জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন, ইরানকে মোকাবিলায় তিনি “আধুনিক সুন্নি রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে” জোট গঠনে “কঠিন” চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আরব রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতার খেলায় কৌশলী ইসরায়েলই হয়ে উঠছে সুন্নি দুনিয়ার নেতা। সৌদি আরব বুঝতে শিখেছে যে তারা ইয়েমেনের শিয়া হুতিদেরও হারাতে পারে না। সুতরাং ইসরাইলের সামরিক শক্তি, ইউরোপে তাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে তাদের প্রভাব সৌদি আরবের খুব দরকার।’
ইসরায়েল চাইছে আমেরিকা ইরানে বোমা ফেলুক। আমেরিকা চাইছে সৌদি আরবকে দিয়ে ইরানকে দমাতে। আর সৌদিরা চাইছে ইসরায়েল ইরান অথবা ইরানের ছায়াসঙ্গী হিজবুল্লাহকে শায়েস্তা করুক। প্রস্তুতি হিসেবে গত সেপ্টেম্বর মাসে লেবানন সীমান্তে ইসরায়েল গত বিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া চালিয়েছে। উদ্দেশ্য, চতুর্থবারের মতো লেবানন আগ্রাসন। ২০০৬ সালে ইসরায়েল যেভাবে ব্যর্থ হয়েছে, এবারেও তেমন হওয়ার সম্ভাবনা।
সিরীয় যুদ্ধের সাফল্যে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা আরও পোড় খাওয়া আরও দৃঢ়চেতা এবং আরও চাঙা। তারাও জানে, এই যুদ্ধই হবে শেষ যুদ্ধ। হয় হিজবুল্লাহ বিনাশ হবে, নয়তো ইসরায়েল বড় ধাক্কা খাবে। সম্ভবত এই যুদ্ধই সৌদি রাজতন্ত্রের পতনের ঘণ্টা বাজাবে।
(সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩৮