খুব ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছি মসজিদগুলোতে দেশ বা বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ছোট দলে কিছু ধার্মিক মানুষ আসতেন যারা মসজিদেই থাকতেন এবং নামাজের পর মুসল্লিদের সাথে বিভিন্ন আমল, ইবাদাত, ধর্মের প্রচার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। এই ধর্ম প্রচারকারী মানুষদের বলা হয় তাবলিগ জামাত।
তাবলিগ জামাত একটি ইসলাম ধর্মভিত্তিক সংগঠন যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা। সাধারণত মানুষকে আখিরাত, ঈমান, আমল-এর কথা বলে তিনদিনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। এর পর যথাক্রমে সাতদিন ও চল্লিশদিন-এর জন্য আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত-এর কাজে উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে। তাবলিগ জামাত-এর মুল ভিত্তি হিসেবে ধরা হয় ৬টি উসুল বা মূলনীতিকে। এগুলো হলো: কালিমা, নামায, ঈল্ম ও যিকির, একরামুল মুসলিমিন বা মুসলমানদের সহায়তা করা, সহিহ নিয়ত বা বিশুদ্ধ মনোবাঞ্ছা, এবং তাবলিগ বা ইসলামের দাওয়াত। মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস ভারতের দিল্লীতে তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন এবং তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার ফলে তাবলিগ জামাত একটি বহুল প্রচারিত আন্দোলনে রূপ নেয়।
ঢাকার কাকরাইল এলাকায় অবস্থিত কাকরাইল মসজিদ বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের মারকায বা প্রধান কেন্দ্র। তাবলিগ জামাতের জন্ম ভারতে হলেও তাদের বার্ষিক সর্ববৃহৎ সম্মেলন "বিশ্ব ইজতেমা" বাংলাদেশের টঙ্গীর তুরাগে অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত প্রতিবছর শীতকালে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়ে থাকে, এজন্য ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসকে বেছে নেয়া হয়। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতি বছর এই সমাবেশ নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-শহর-বন্দর থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং বিশ্বের প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি দেশের তাবলিগি দ্বীনদার মুসলমান জামাতসহ ৪০ থেকে ৫০ লক্ষাধিক মুসল্লি বিশ্বের হজের পর বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন বা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন।
আগে এই সম্মেলনটি ৩ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হলেও এখন কয়েক বছর ধরে স্থান সঙ্কটের জন্য দুই পর্বে তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে গতবারের সম্মেলনে প্রথম তাবলীগদের মধ্যে কিছু নীতিগত দন্দ দেখা দেয় এবং তাবলিগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষের নেতা সাদ ও অন্য পক্ষ যুবায়ের কে নিজেদের নেতা বলে দাবী করে। তবে গতবার তাবলিগ নেতা সাদকে বাংলাদেশে সম্মেলনে আসতে বাঁধা দেয় যুবায়ের পক্ষ। পরে সিদ্ধান্ত হয় দুই পক্ষ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তাদের সমাবেশ করবে। সাদপন্থীরা ৩০ নভেম্বর থেকে পরের ৪ দিনের মধ্যে সম্মেলন করে চলে যাবে এবং যোবায়েরপন্থীরা ৭ ডিসেম্বরের থেকে তাদের সম্মেলন করবে। কিন্তু নির্বাচনের কারনে এবারের বিশ্ব ইজতেমা করতে নিষেধ এবং ইজতেমা মাঠে প্রবেশ বা কোন তৎপরতা চালাতে নিষেধ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। তবে কোন পক্ষই এই নির্দেশনা না মেনে বরং ৪ দিন আগ থেকে যোবায়েরপন্থীরা তুরাগের মাঠে বিভিন্ন এতিম খানার ছাত্রদের এনে মাঠ দখল করে নেয়। অন্যদিকে আজ সকাল থেকে সাদপন্থীরাও সারা দেশ থেকে এসে মাঠে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে দুইপক্ষের মারামারি ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ায় শতাধিক আহত এবং কমপক্ষে একজন নিহত হবার খবর শোনা যায়। নিহত ব্যক্তির নাম ইসমাইল মণ্ডল (৬৫)। বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। আজ শনিবার সকালে ছেলে জাহিদ হাসানের সঙ্গে তিনি টঙ্গী এসেছিলেন।
সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী সংঘর্ষ থামাতে কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করে নাই। এমনকি আগ থেকেই খারাপ কিছু হতে পারে জেনেও সংঘর্ষ থামাতে তাদের কোন দায় আছে বলে তারা প্রমান করে নাই। আর সম্পূর্ণ বিনা বাঁধায় তাবলিগের দুই পক্ষ একে অন্যের ওপর হিংস্র পশুর মত জাপিয়ে পড়ে মারামারি করে নিজেদের অজ্ঞতার ও মূর্খতার পরিচয় দেয়।
নিউজ লিঙ্কঃ তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৭