somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিয়ে অনুসরণ করা যেতে পারে বাংলাদেশেও!

২৫ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘জান্নাত পর্যন্ত সহযাত্রী’-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে গত ১১ মার্চ তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২তম বিবাহ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ৬০০ শিক্ষার্থী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রীহলে ট্রাঙ্কের ভিতর থেকে নবজাতক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। অথচ ইরানের ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহ উৎসব’ এহেন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াবার অন্যতম সুন্দর সমাধান।

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব হবার পর সেদেশের আলেমসমাজ তারুণ্যের নৈতিক উন্নতির প্রতি বিশেষ নজর দেন। সমাজ থেকে জেনা, ব্যাভিচার, একাধিক প্রেম, তাতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা, কিংবা অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক, ভ্রুন হত্যা, গর্ভপাতের মত জঘন্য বিষয়গুলো থেকে তরুণদের রক্ষা করতে প্রায় দুই যুগ ধরে এ ধরণের ‘বিবাহ উৎসব’ চলে আসছে। সাধারণত ইরানের সর্বোচ্চ নেতার অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে প্রতি বছর এই ‘বিবাহ উৎসবের’ আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ বছর ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১২ হাজার ছাত্রছাত্রীর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা অবিবাহিত ছেলেমেয়েদেরকে পরস্পরের কাছাকাছি আসার অনেক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এখানে পরস্পর চিন্তা বিনিময়ের সুযোগ ঘটছে; যেসব বিষয়কে একটি ছেলে বা মেয়ে গুরুত্ব দেয়, তার ভিত্তিতেই অপরজনকে পছন্দ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কেবল এই বিষয়টিকে স্থায়ীবন্ধনে রূপ দিলেই তা সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনবে; যে প্রচেষ্টা ইরানে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার পক্ষ থেকে করা হয়ে আসছে গত দুই যুগ যাবত। বিপরীতে আমাদের বাংলাদেশে ছেলে-মেয়েদের কাছাকাছি আসার সুযোগ ঠিকই ঘটছে কিন্তু বিয়েকে সামাজিকভাবে আরো কঠিন করে দেয়া হয়েছে। যে সম্পর্কের কোনো নিশ্চয়তা নেই, সেই প্রেমের সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তরুণদের, এতে যৌবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, প্রোডাক্টিভিটি কমে যাচ্ছে। যে তরুণ নিজের আবেগ ও যৌনজীবন সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে, যা আমাদের অভিভাবক সমাজ দীর্ঘদিন যাবৎ উপেক্ষা করছেন।

বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজারের বেশি স্বেচ্ছা-গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে। তবে বিভিন্ন ক্লিনিকের সূত্রে যা জানা যাচ্ছে, তাতে এর মাঝে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অবিবাহিত ছাত্রীদের সংখ্যাই বেশি। এতো গেল গর্ভে সন্তান এসে যাবার পরিসংখ্যান। জন্মনিরোধক বিভিন্ন সামগ্রীর সহজলভ্যতার এই যুগে তাহলে প্রতিদিন কত হাজার কিংবা লাখ অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক ঘটছে ষোল কোটি মুসলমানের এই দেশে, তা দেশের অভিভাবক মহলকে ভেবে দেখা উচিৎ। কোনো পিতামাতাই তার নিজের সন্তানকে চরিত্রহীন বলেন না কিংবা ভাবতে পছন্দ করেন না, এ কারণে তারা গোটা বিষয়টার দিকেই চোখ বুঁজে থাকেন। বাবা-মা’র কাছে সে সন্তান পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ভদ্র ছেলে-মেয়েটিই হয়ে রয়েছে কিন্তু তার জীবনসঙ্গীর চাহিদা তো আর থেমে নেই। আল্লাহতায়ালা তো আর আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর অপেক্ষা করিয়ে রাখেননি যে, আদমের উন্নত ক্যারিয়ার হোক, তারপর হাওয়া (আ.)-কে এনে দিবেন তার কাছে! তিনি আদমকে সৃষ্টি করেই হাওয়াকে সৃষ্টি করে তাদেরকে সঙ্গী করে দিয়েছেন।

নারী’ কিংবা ‘পুরুষ’ হিসেবে বৈশিষ্ট্য, চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা বিশ্বের সব দেশ ও জাতির মানুষের মধ্যে একই রকম। কিন্তু আমরা এমন এক সমাজ ব্যবস্থায় সেই আদম সন্তানদের গড়ে তুলছি, যেখানে মাঝখানে শিক্ষা ও ক্যারিয়ার নামক জিনিসকে প্রবেশ করিয়ে নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্ককে ব্যাহত করা হচ্ছে। মাঝখানে কেবল অবাধ মেলামেশার সমাজে তাদেরকে যথাবয়সে বিয়ে না দিয়ে অবৈধ সম্পর্কের সুযোগই করে দিচ্ছি। বাংলাদেশের সচেতন অভিভাবকরা ইরানের বিবাহ উৎসবের এই মডেল অনুসরণ করলে এদেশের তরুন-তরুণীরা মানসিকভাবে আরো স্থিতিশীল হবে; প্রেম, বিষণ্ণতা, আত্মহত্যা কিংবা অবৈধ মেলামেশা আর ট্রাঙ্কের ভিতরে সন্তান- এ ধরণের বিষয় থেকে রক্ষা পাবে।

প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পুর্বে বিয়ে দিলে নব দম্পত্তি চলবে কীভাবে বলে অনেকেই হয়ত চিন্তা করছেন। অথচ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পূর্বে কিন্তু তারা ঠিকই সন্তানদের সমস্ত খরচ বহন করে চলছেন। তাহলে ছেলে ও মেয়ের দুই পরিবারই যদি প্রতিষ্ঠিত না হবার পূর্ব পর্যন্ত দম্পত্তিকে একত্রে সহায়তা করেন তবেই কিন্তু আর কোন সমস্যা থাকে না। সবাই এক সময় নিজের মত করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় আজকের যে তরুন ২৫ বছর বয়সে অপ্রতিষ্ঠিত সেও ৪০ বছরের মধ্য বয়স্ক হবার সময় প্রতিষ্ঠিত হবে। সমাজে বৈধ সম্পর্কগুলোকে সহজ করে দিলেই অবৈধ সম্পর্কের প্রতি আর কারও আগ্রহ জন্মাবে না। সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে।

কার্টেসিঃ আশরাফুর রহমান, খণ্ডকালীন শিক্ষক, তালিন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, এস্তোনিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৩০
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×