সিনেমার নাম- Premam (mam, not "mum পানির বোতল")
মালায়ালাম সিনেমা। প্রেম না করলেও প্রেমাম শব্দের অর্থ বুঝাতে খুব একটা কষ্ট হওয়ার কথা না। জি হ্যাঁ, প্রেমাম মানে love, ভালোবাসা, প্রেম বা সোজা বাংলায় পিরীত।
অতি সাধারণ একটি সিনেমা, কিন্তু অতি অসাধারণ উপস্থাপন। সিনেমার কাহিনী অতি সাধারণ, এই কাহিনী এর আগেও আপনি দেখেছেন, এমনকি আমাদের অনেকের জীবনের সাথে এই কাহিনী ঘটেছে সেটাও চোখ বন্ধ করে বলা যায়। তাহলে ক্যান কথা বলছি সিনেমাটি নিয়ে? বিশেষ একটা কারণ আছে।
কাহিনী আগে একটু বলি, এক লাইনেই শেষ করা যাবে- একজন ছেলের জীবনের তিনটা স্তরে(স্কুল, কলেজ, চাকরি) তিনবার প্রেম আসে- এই তিন প্রেমের কাহিনী নিয়ে এই সিনেমা। প্রথম দুইবার ছেলেটি তার প্রেমকে "পাই পাই করেও পেলাম না" অবস্থায় থাকে। তিন নাম্বার প্রেমের ক্ষেত্রেও কি একই অবস্থা হবে? জানতে হলে দেখতে হবে।
প্রেমাম নিয়ে আলাদা করে দুই কলম বা দুই কীবোর্ড লেখার কারণ হচ্ছে এর অসাধারণ উপস্থাপন এবং বাস্তবতাকে বাস্তবতার মত করেই উপস্থাপন। কোন বাড়তি কিছু নাই। উল্টো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে কিছু জিনিস দেখিয়ে দেয়া যেগুলোকে আমরা মানতে চাই না। বেশি কঠিন হয়ে গেল? উদাহরণ দিচ্ছি।
দ্বিতীয় প্রেমের স্তরে বা কলেজ লাইফে গল্পের নায়ক জর্জ প্রেমে পড়ে তার কলেজ টিচারের। এই শিক্ষিকার চরিত্রে অভিনয়কারী মেয়েটির মুখে হালকা মেছতা থাকে। কিন্তু আমাদের গল্পের নায়ক এখানে সেইসব ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামায় না, উল্টো তার এক ফ্রেন্ড যখন তাকে এই কথা বলে তখন সে পাত্তা দেয় না, উল্টো বলে- মেছতা হইসে তো কি হইসে? ভালোবাসি- ব্যস! কেস ডিসমিস!
হলিউড আর বলিউড আমাদের মাথায় অনেকটা জোর করে ঢুকিয়ে দিয়েছে তাদের বেশিরভাগ সিনেমা দিয়ে- মেয়ে মানেই তাকে সুন্দরী ( পড়ুন সাদা চামড়া) হতে হবে। তার মুখে একটিও দাগ থাকা চলবে না, একদম ক্লাসরুমের হোয়াইট বোর্ডের মত চকচকে হতে হবে। তাকে জিরো ফিগার হতেই হবে, একটু মোটা হলেই তাকে এবং তার খাদ্যাভ্যাস নিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলা জায়েজ হয়ে যাবে, আপনি তাকে না খাওয়ালেও। নায়িকা মানেই খোলামেলা পোশাকের অধিকারী হতে হবে, তাকে তার ছোটবেলার পোশাকগুলো পড়তে হবে। যদিও ব্যতিক্রম সিনেমাও আছে তবে সেগুলোর সংখ্যা খুবই কম যেমন বলিউড এর রিসেন্ট সিনেমা dum laga ke haisha.
এই জায়গাতে প্রেমাম বাকি সব সিনেমা থেকে একদম আলাদা। মুখে মেছতা থাকা একজন মানুষকে কতটা সুন্দর আর আকর্ষণীয় লাগতে পারে, তার সাথে প্রেম করার জন্য সবকিছু কীভাবে বিসর্জন দিতে ইচ্ছা করে- সেটার প্রমাণ আপনি পাবেন প্রেমাম সিনেমাতে। প্রেম বা ভালোবাসার জন্য যে মুখের চেহারা, শারীরিক গঠন যে কোন ব্যাপার না, মনের মিলটাই বড় ব্যাপার, প্রিয় মানুষের ঠোঁট বাঁকানো একটা হাসি যে আমার হৃদয়কে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিতে পারে, প্রিয় মানুষের দীঘল কাল চুলের কথা (স্কুল জীবনের প্রেমের নায়িকাটা) স্মরণ করে আপনি যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করতে পারেন, এটাই যে প্রেম হতে পারে- সেটার উদাহরণ হল প্রেমাম সিনেমা।
সিনেমার মেকিং, অভিনয়, গান আর সিনেমেটোগ্রাফি যে কি পরিমাণ অসাধারণ, সেটা বলার ভাষা নাই। মেকিং কতটা জোস তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। নায়ক নায়িকাকে প্রপোজ করতে এসেছে, এইসময় কাট করে দেখানো হল একটি প্রজাপতি আস্তে উড়তে উড়তে ফুলের উপর বসেছে। পরের দৃশ্যে কাট করে দেখানো হল- নায়িকা নায়কের প্রেমের আবেদনে "না" বলে দিলেন, পরের সিনে কাট করে আবার সেই প্রজাপতি, যেই প্রজাপতি এবার আস্তে করে ফুল থেকে উড়ে চলে গেল! কি বুঝলেন?
আরেকটা মজার জিনিস শেয়ার করি- প্রতিটি সিনেমার শেষে বা শুরুতে যাঁদেরকে ধন্যবাদ দেয়া হয় তাদের নাম উল্লেখ করা হয়, এই সিনেমার প্রথমে তাদের নাম দেখানো হয় এবং তারা কারা জানেন? Thanks to God, thanks to sunlight, thanks to rain- অদ্ভুত সুন্দর না?heart emoticon
শুটিং এর জন্য রোদের আলো কতটা দরকার, সেটা আমরা জানি। কিন্তু সেটার জন্য সূর্যকে আমরা কে, কয়বার আজ পর্যন্ত থ্যাংকস বলেছি? কেন বলিনি? সূর্য মানুষ বা নায়ক বা আবেদনময়ি নায়িকা নয় বলে?
প্রেমাম দেখবেন, প্রেম করলেও দেখবেন, না করলেও দেখবেন, ছেঁকা খেলেও দেখবেন, ছেঁকা পান করলেও দেখবেন। অতি সাধারণ জিনিসের অসাধারণত্ব আপনাকে অদ্ভুত রকমের আনন্দ দিবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




