বইয়ের নাম- সে আমার গোপন
লেখক- রাফিউজ্জামান সিফাত
প্রথম প্রকাশ- বইমেলা, ২০১৬
লেখকের নামটা অপরিচিত লাগতে পারে, তবে বইটা লাগবে না। আরও মোটা দাগে বলতে গেলে বইটার গল্পগুলো লাগবে না। শিরোনামে "গোপন" শব্দটা থাকলেও, গল্পগুলো আসলে আমাদের সবার জানা, তবে আমরাই সেগুলো গোপন করে রাখি, আমাদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়।
সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যমের মাঝে যেই মাধ্যমটা আমার সবচেয়ে বেশি কঠিন লাগে, সেটা হল ছোটোগল্প। এ এমন এক জিনিস, যেটাকে ঠিকমতো যত্ন করে লিখতে হয়, একটু এদিক সেদিক হলেই "অবস্থা কেরোসিন" থেকে শুরু করে "অবস্থা ডিজেল" হয়ে যায়। আনন্দের ব্যাপার হল, সিফাত ভাইয়া সেটি হতে দেন নাই, যত্নের সাথেই ছোটোগল্পগুলো লিখেছেন এবং নিজের প্রথম বইতেই প্রমাণ করেছেন তিনি আরও অনেকদূর যাবেন।
বইয়ের নাম শুনলে বইটাকে কোন ইঁচড়ে পাকা ছেলের রোম্যান্টিক বা লুতুপুতু গল্পের বই মনে হতে পারে। সিফাত ভাই ইঁচড়ে পাকা খানিকটা হলেও ( :p ) তার বই লুতুপুতু না। ১৮ টি ছোট গল্পের স্বাদ ১৮ রকমের। সে আমার গোপন শুরু হয় "প্রিয়দর্শন" গল্পের মাধ্যমে, যেখানে একটি ছেলে স্বপ্ন দেখার জন্য পাগল হয়ে ওঠে কারণ অনেক আগে সে স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা হারিয়েছে। এভাবে স্বপ্ন দেখার অভ্যাস দিয়ে শুরু করলেইও লেখক ধীরে ধীরে আমাদের স্বপ্নভঙ্গের গল্পতেও নিয়ে যান। নিয়ে যান বাস্তবতার গল্পেও, যেই গল্প অনেক নিষ্ঠুর।
সমাজের অপরাধীদের গল্প আছে এই বইতে, ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকা অপরাধী থেকে শুরু করে মুখোশ না পরা মানুষের গল্প,আছে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করা টোনাটুনির গল্প, আছে যৌতুকের নির্মম বলি হওয়া নারীদের গল্প(নাকি সত্যি?), বেকার ছেলের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার গল্প, আছে গৃহশিক্ষকের নিষিদ্ধ সুখ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর গল্প, সারারাত প্রিয় মানুষের ফোনের অপেক্ষায় সময় কাটানোর গল্প এবং last but not least, মুক্তিযুদ্ধের গল্প। "রাতভর কথোপকথন" নামের গল্পটা পড়ে আমার মনে হয়েছে- মুক্তিযুদ্ধকে যে এভাবেও দেখা যায়, সেটা কেন আগে আমরা ভাবতে পারিনি? মুক্তিযুদ্ধ মানেই কেন আমাদের অনেকের মগজে " শুধুই গোলাগুলি আর ধর্ষণ?" এই গল্পটার জন্য লেখককে বিশেষ ধন্যবাদ।
কিছু গল্প পড়ে মনে হয়েছে লেখক অনেক তাড়াহুড়ো করে শেষ করেছেন, চাইলেই গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো, আরেকটু বেশি গোপন হতে পারতো
ফোন অর্ডার- ১৬২৯৭ বা ০১৫ ১৯৫২ ১৯৭১
বইটা শেষ করার পরে গল্পগুলোকে অনেক বেশি আপন মনে হতে থাকলো। বইয়ের নাম সে আমার গোপন না হয়ে সে আমার আপন হলেও হতে পারতো। ব্যাপার না, এই বইটার পার্ট টু বের হলে লেখক আশা করি আমার দেয়া নামটা ভেবে দেখবেন, তার জন্য শুভকামনা।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




