'মানসা' অর্থ রাজা, সম্রাট বা সুলতান। ১৪০০ সালের দিকে আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন মানসা আবু বকর ২। আমি যে সময়ের কথা বলছি, সেই সময়ে আফ্রিকার এই রাজ্যটি উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছিলো। মালি রাজ্য কতটা ধনী ছিলো তা বুঝা গিয়েছিলো মানসা মুসার বিখ্যাত হজ্জ যাত্রার সময়ে। মানসা মুসা ছিলেন মানসা আবি বকরের ২-এর ঠিক পরের শাসক। আরব ইতিহাসবীদদের বর্ণনা অনুযায়ী, হজ্জের সময়ে মুসা এতো সোনা খরচ করেছিলেন যে 'সোনার দাম ৬ রুপার দিরহাম কমে গিয়েছিলো'।
আবু বকরের শাসনামলে সাম্রাজ্যে শান্তি আর শৃঙ্খলা এতোটাই উচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিলো যে তা এক উদ্ভট উপাখ্যানে পরিণত হয়। সিরিয়ান ঐতিহাসিক, আল-উমারি যখন মানসা মুসা'র সাথে কায়রোতে দেখা করেন, তিনি জানতে পারেন কিভাবে মানসা আবু বকর আটলান্টিক মহাসাগর জয়ের নেশায় নিজের সিংহাসন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।
এখন পর্যন্ত, আবু বকরের জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা গিয়েছে। আমার জানা মতে, একমাত্র আল-উমারি'র বইতেই তাঁর সম্পর্কে জানা যায়। এটা জেনে আশ্চর্য হতে হয় যে, আবু বকর সম্পর্কে সারা বিশ্বকে তথ্য দিয়েছেন তাঁরই এক উত্তরাধিকারী। এটা হয়তো এমন হতে পারে- মুসা কিভাবে সুলতান হলেন সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়েই আবু বকরের কাহিনী চলে এসেছে।
আবু বকরের কাহিনীঃ
আবুবকর মানুষ দিয়ে ২০০ জাহাজ আর একই পরিমাণ জাহাজে সোনা, পানি আর অন্যান্য দ্রব্য বোঝাই করলেন, এটা তাদের জন্যে কয়েক বছর বেঁচে টিকে থাকার জন্যে যথেষ্ট ছিলো...তারা চলে গেলো, অনেক অনেক বছর পরে সেই মানুষগুলো'র একজন ফিরে এলো আমাদের কাছে। একদিন, সেই জাহাজগুলোর একটি ফিরে এলো। সেই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞাসা করা হলো সে কি খবর নিয়ে এসেছে।
সে সুলতান আবু বকরকে বললো- '' ও সুলতান! আমরা অনেক দূর পর্যন্ত সাগরে ভ্রমন করেছিলাম যতক্ষণ না খোলা সাগরে একটি নদী'র মাঝে আমরা গিয়ে পড়লাম। সেই নদীর প্রচন্ড স্রোতে নিজেদের ভাসিয়ে অন্যান্য সব জাহাজগুলো এগিয়ে গেলো। আমি তাঁদেরকে আর কখনো দেখতে পাইনি। সেই নদীতে না ঢুকে কাল বিলম্ব না করে আমি ফিরে এসেছি।''
ক্যাপ্টেনের কথা শুনে সুলতান ২০০০ জাহাজ তৈরী করলেন, এরমধ্যে ১০০০ জাহাজ তাঁর ও নিজের মানুষদের জন্যে আর বাকি ১০০০ পানি, খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যাদি দিয়ে। তিনি মুসাকে রেখে গেলেন তাঁর হয়ে রাজ্য শাসন করার জন্যে। এরপরে, আটলান্টিক সাগরে জাহাজগুলো ভাসিয়ে চীর দিনের জন্যে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩৭