somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যপথিক শাইয়্যান
অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

ব্রিটিশ সেনাবাহিনী'র 'বেঙ্গলি পল্টন'........ভুলে যাওয়া এক ইতিহাসের নাম

২৬ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



৪৯তম বেঙ্গলিস ছিলো ব্রিটিশ ভারতের প্রথম বাঙালী আর্মি রেজিমেন্ট। এই রেজিমেন্টের সদস্য হয়েই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্য ব্যক্তিত্ব মাহবুব উল হক, ঢাকার তৎকালীন নবাব খাজা হাবিবুল্লাহ-সহ আরো অনেকে।

১৯১৪ সাল। তখন পুরো বিশ্ব জুড়ে যুদ্ধের ঘনঘটা। এই সময়ে ব্রিটিশ শাসকেরা অনুভব করলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করার জন্যে অনেক সৈন্যের প্রয়োজন। ব্রিটিশ রাজের দখল করা কলোনিগুলো থেকে তখন সৈন্য সংগ্রহ শুরু করা হলো। এরই ধারাবাহিকতায় বাঙালীদের জন্যে সৈন্যবাহিনীতে যোগদানের একটি সুযোগ এলো । এর আগে পর্যন্ত সুকৌশলে পুরো বাঙালী জাতিকে যুদ্ধ সংক্রান্ত সকল বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হতো।

বাঙালীদের সবার আগে নিরস্ত্র সৈন্য হিসেবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী'র মেডিকেল বিভাগে রিক্রুট করা হয়। এই ইউনিটের নামকরণ করা হয় 'বেঙ্গলি এম্বুলেন্স কর্পস (বি,এ,সি)'। এই বি,এ,সি তৎকালীন মেসোপোটেমিয়া-তে ১৯১৫ সালের জুন থকে ১৯১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুব সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে। তাঁদের এই সুনাম আর সেই সাথে তৎকালীন বাঙালী নেতাদের প্রভাবে ব্রিটিশ সরকার একটি বাঙ্গালী রেজিমেন্ট গঠন করতে রাজি হয়।

শেষ পর্যন্ত, ১৯১৬ সালের ৭ আগস্ট, বহু আরাধ্য এক ইতিহাস জন্ম নেয়। ব্রিটিশ রাজ এই দিনে একটি পূর্ণাঙ্গ রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠা করার ঘোষনা দেন। এই রেজিমেন্ট-ই বেঙ্গলি পল্টন নামে সমোধিক পরিচিত ছিলো।

ছবিঃ ফোর্ট উইলিয়ামের বাইরে অপেক্ষারত আর্মিতে ভর্তি উৎসাহী বাঙালীগণ

'বাঙ্গালী রেজিমেন্ট কমিটি' গঠনঃ

বেঙ্গলি পল্টনের আকার ছিলো একটি সেনা কোম্পানির চেয়ে বড়, কিন্তু এক ব্যাটালিয়নের চেয়ে ছোট। এই রেজিমেন্টে ছিলো দুইজন ব্রিটিশ এবং ৬ জন ভারতীয় অফিসার, ২১৮জন সৈন্য এবং কিছু অনুসারী। একই সময় সৈন্যবাহিনীতে যোগদানের জন্যে বাঙালীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি আর যুদ্ধের জন্যে তহবিল সংগ্রহের জন্যে সিভিলিয়ানদের নিয়ে 'বাঙ্গালী রেজিমেন্ট কমিটি' নামের একটি সংগঠন গঠন করা হয়। নিম্নের নামকরা বাঙ্গালী ব্যক্তিত্বরা এই কমিটিতে অংশগ্রহণ করেন-

ক) বর্ধমানের মহারাজাধিরাজ বিজয় চাঁদ মাহতাব
খ) সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি
গ) নবাব নওয়াব আলী
ঘ) শ্রীমতি সরলা দেবী
ঘ) এ কে ফজলুল হক
ঙ) ডাঃ এস, কে, মল্লিক এবং প্রমুখ

ছবিঃ ঢাকায় একটি ইভিনিং পার্টিতে বেঙ্গলিজ রেজিমেন্টের সদস্যরা

শুরু হলো ট্রেইনিংঃ

বাঙ্গালি রেজিমেন্ট গঠনের পর এর সদস্যদের ট্রেইনিং দেওয়ার ভার অর্পণ করা হয় ১৬তম রাজপুত, ১০৬তম হাজারা পাইওনিয়ার আর ১১৬তম মারাঠা'র উপর। বাঙ্গালীদের দক্ষতা দেখে ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে এই রেজিমেন্টকে ব্যাটালিয়নে উন্নিত করা হয়, যার নামকরণ করা হয় ৪৯তম বেঙ্গলি ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্ট। এি রেজিমেন্টের সদস্যরা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে বেঙ্গলি নামে পরিচিত ছিলেন। লেফট্যানেন্ট কর্নেল এ, এল, ব্যারেট-কে এই বাহিনী'র কমান্ডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সম্মুখ সমরে বেঙ্গলি পল্টনঃ


১৯১৭ সালে যখন ব্রিটিশ সেনারা বাগদাদের কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তখন তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা রক্ষা আর মেসোপোটেইয়াতে সম্মুখ সমরের জন্যে আরো সৈন্যের দরকার হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সেনা হেডকোয়ার্টার সিদ্ধান্ত নেয় বেঙ্গলি পল্টনকে ডেকে পাঠানোর। এভাবেই সুদূর ইরাকে পাড়ি জমায় এই রেজিমেন্ট। যদিও ট্রেইনিং শেষ না হওয়ার কারণে তখনো বাঙালী সৈন্যরা সম্মুখ যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত ছিলেন না। যেহেতু হেডকোয়ার্টারের সিদ্ধান্ত, সেহেতু ১৯১৭ সালের জুলাই মাসে বাঙ্গালী ব্যাটালিয়নের একাংশকে মেসোপোটেমিয়ার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। এই বাহিনী দীর্ঘ তিন মাস সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাগদাদে পোঁছে সেপ্টেম্বর মাসে।

কিন্তু বিধি বামঃ

বাগদাদে পৌছতে না পছতেই, দূরন্ত মরু হাওয়ায় সাথে যুঝতে না পেরে ১৯১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এই বাহিনী'র অধিকাংশ সেনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদেরকে ব্রিটিশ সেনাবিহিনীর পিছনের সারী যা আজিজাহ-তে ছিলো, সেইখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যের ক্রম-অবনতির ফলে বেঙ্গলি পল্টনকে এক সময় কুট-আল-অমরে অবস্থিত ব্রিটিশ বাহিনী'র আরো পিছনের সারিতে সরিয়ে নেওয়া হয়। এই সময়ে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, এই বাহিনী'র ৪১.০২% সেনা অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলেন।

একটি মজার ঘটনাঃ


ব্রিটিশ বাহিনী'র কমান্ডার জেনারেল স্যার উইলিয়াম মার্শাল একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন এই ইউনিটকে দেখতে যাবেন। যখন সারিবদ্ধ সৈন্যদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ৪৯ বেঙলিজের কমান্ডার লেঃ কর্নেল ব্যারেট বাঙালী সৈন্যদের একেকটি সারীকে এভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন- এই হলো 'হুপিং কাশি স্কোয়াড', এই হলো 'স্কার্লেট ফিভার স্কোয়াড', এটা হচ্ছে 'হাম স্কোয়াড'। এভাবেই তিনি বিভিন্ন সারীকে তারা যে অসুখে আক্রান্ত, সেই নাম ধরে ডাক দিচ্ছিলেন। নিজের জীবনীতে লিখেছেন যে, তিনি মাত্র ৬৩জন সৈন্যকে পেয়েছিলেন যারা কোন অসুখে আক্রান্ত হোননি যাদের মাঝে মাত্র একজনের সাথে তাঁর দেখা হয়েছিলো। এই সৈন্যদের সম্মানে ১৯২৪ সালে কলকাতা কলেজ স্কোয়ারে একটি স্মৃতি সৌধ বানানো হয়।

ছবিঃ বাঙ্গালী পল্টনের অফিসারগণ

একটি দুঃখজনক ঘটনাঃ

মেসোপোটেমিয়া থাকাকালীন এক মর্মান্তিক ঘটনা বেঙ্গলি রেজিমেন্টকে সম্মুখ সমরে যাওয়ার সকল রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এক রাতে দুইজন সিপাহী গার্ডদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অস্ত্রসহ ভারতীয় সৈন্যদের তাবুতে ঢুকে গুলি চালায়। এতে করে একজন সুবেদার মেজর গুরুত্র আহত এবং অন্য আরেকজন বাঙ্গালী অফিসার মারা যান।

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাঁকেঃ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর যখন ভারতবর্ষে এই বাহিনী ফিরত আসে, এরপর খুব তাড়াতাড়িই বেঙ্গলি পল্টনকে ভেঙ্গে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। এভাবে ১৯২০ সালের ৩১ আগস্ট ৪৯ বেঙ্গলিজ পুরোপুরি লুপ্ত হয়। এখানে বলে নেওয়া উচিৎ, যুদ্ধের সময় দু বছরে প্রায় ৬০০০ বাঙ্গালী সেনাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো।


======২য় প্রকাশ
============


তথ্য ও ছবি সুত্রঃ

১) 49 Bengalis- Lt. Col Muhammad Lutful Haq (Retd)
২) Bangali Paltan- http://en.banglapedia.org
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৮:২১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×