আজ সন্ধ্যায় বেশ ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেলো। কয়েক দিন পর হয়তো অঝড় ধারায় বৃষ্টি ঝড়বে। ঢাকা'র রাস্তাঘাট পানিতে ভরে উঠবে। মনে পড়ে গেলো গত বছরের এমন একটি দিনের কথা। সেদিন বিকালের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ফার্মগেটের ওভারব্রিজটায় উঠতেই এই প্রশ্নটি থমকে দিয়েছিলো কিছুক্ষণের জন্য।
ওভারব্রিজে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। তার মাঝে শত মানুষের ভিড়। ভিড় ঠেলে হাঁটতে হাঁটতেই মনে পড়ে গেলো সেই মানুষগুলোর কথা। রোজ সকালে অফিসে যাওয়ার পথে ওভারব্রিজগুলোর ওপর নিশ্চিন্তে শুয়ে থাকতে দেখি কিছু মানবসন্তানকে। মাঝে মধ্যে অবাক হই এই ভেবে যে, কীভাবে এই শক্ত পাটাতনের ওপর রাত কাটিয়ে দেয় লোকগুলো!
যেদিন থেকে এই চিন্তা মাথায় আসে, আমি আমার বাসার বিছানায় নরম মেট্রেস রাখি না। শক্ত বিছানায় ঘুমাতে খুব কষ্ট হতো প্রথম। এখন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। আমার স্ত্রীও সেই শক্ত মেট্রেসে ঘুমান।
ব্রিজের শক্ত মেঝেতে শুয়ে থাকা সেই মানুষগুলো আজ রাতে কোথায় শোবে? ব্রিজের ওপর পানি জমা পথটায় বাড়ি খেয়ে প্রশ্নটা নিজের কাছেই ফিরে এসেছিলো সেদিন। উত্তর খুঁজে পেলাম না। ভাবনার সাগরে নিমজ্জিত মনটায় কে যেন হঠাৎ মনে করিয়ে দিল, বাংলাদেশের ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ ৪১.৯ বিলিয়ন ডলার। নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় অগ্রগতি। কিন্তু কেন যেন সেই অগ্রগতির সঙ্গে কংক্রিটের মেঝেতে রাত কাটানো আদম সন্তানগুলোর জীবনকে মেলাতে পারলাম না। কোথায় যেন শুভঙ্করের ফাঁকি!
সেই ফাঁকিটি যত বড়ই হোক, রিজার্ভের টাকা থেকে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার খরচ করে কয়টি এক বেডরুমের ফ্ল্যাট বানানো যাবে— সে হিসাবটা করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ সরকার বা প্রশাসনে নেই, তা বিশ্বাস করা উচিত হবে না। সেই বিশ্বাসের ধার না ধেরে একটা অংক কষে ফেলা যাক চটজলদি।
একটি এক বেডরুমের ফ্ল্যাট বানাতে যদি ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়, ১ বিলিয়ন ডলারে কয়টি ফ্ল্যাট করা যাবে? ৪০ হাজার! সেই ৪০ হাজার ফ্ল্যাটে বসবাসকারী ভূমিহীনদের মাসে ২০০ টাকা করে ভাড়া ধার্য করা হলে প্রতি মাসে কত টাকা আসবে? ৮০ লাখ টাকা। বছরে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ টাকায় পরের বছর আরো কয়টি ফ্ল্যাট করা যাবে? ৪৭টি। এর পরের বছর? প্রায় ৫০টি।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পথে কতটুকু খরচ করতে হবে? ১ বিলিয়ন ডলার, প্রধানমন্ত্রী, ফরেন রিজার্ভের মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০১