সমাজে অনেক ধরণের মানুষ বাস করেন। সবার বুদ্ধি আর জ্ঞান কি সমান? তা সমান নয়। সেজন্যেই, একজন জ্ঞানবান মানুষের সাবধানে চলা জরুরী। সূফীরা জ্ঞানী মানুষ হিসেবে পরিচিত বহু কাল ধরেই।
সূফী শব্দের অর্থঃ
'সওফ' শব্দ থেকে সুফী শব্দের উৎপত্তি। সওফ শব্দের অর্থ 'পশমী পোশাক'। যদিও, সব সূফীই পশমী পোশাক পরিধান করেন না।
যেভাবে সূফী শব্দটির উৎপত্তিঃ
তাসাউফের উৎপত্তি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সময় থেকেই। তবে, অনেক দিন পর্যন্ত এর ব্যবহার খুব সীমিত আকারে ছিলো। মহানবী (সা)-এর সময়ে 'সাহাবা' ছাড়া আর কোন উপাধী চালু ছিলো না। সাহাবাদের পরে 'তাবেইন' এবং 'তাবে-তাবেইন' উপাধী চালু হয়। এরপরে, বুযুর্গানে দ্বীনদের 'আবিদ' এবং 'জাহিদ' নামে অভিহিত করা হতো। সেই সময়ে যখন সব দল-মতের মানুষেরা 'আবিদ' এবং 'জাহিদ' শব্দ দু'টি ব্যবহার করতে থাকে, তখন, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়েতের মানুষেরা নিজেদের জ্ঞানী ব্যক্তিদের 'সূফী' নামে অভিহিত করেন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সূফী উপাধীতে ভূষিত হোন আবু হাশিম (র)।
সূফী কারা?ঃ
তাসাউফের ব্যখ্যা করতে গিয়ে, হযরত যুন্নুন মিসরী (র) বলেন; ''সূফী সেই ব্যক্তি যিনি দুনিয়ার সব কিছু পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকেই ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন।'' হযরত জুনায়েদ বোগদাদী (র) বলেন- ''যার জীবন-মরণ শুধু মাত্র আল্লাহর জন্যে উৎসর্গিত- তিনিই সুফী।'' তবে, এটা রাখা জরুরী যে- বৈরাগ্য, দীনতা এবং তাসাউফ এক জিনিস নয়।
শরিয়ত এবং তাসাউফের মাঝে পার্থক্যঃ
শরিয়তের মতো তাসাউফেও 'জ্ঞান' ও 'কাজ' রয়েছে। তবে পার্থক্য এই যে, শরিয়তে আগে জ্ঞান লাভ করতে হয় পরে কাজ। আর, তাসাউফের ক্ষেত্রে, আগে আমল বা কাজ করার পরে জ্ঞান লাভ হয়।
সব জ্ঞান সবার জন্যে নয়ঃ
হযরত যয়নুল আবেদীন (রাঃ ) বলেছেন যে- ''আমি আমার ইলমের ঐশ্বর্যসমূহ গোপন রাখি, যাতে অজ্ঞ লোক তার দ্বারা ফিতনায় পতিত হতে না পারে।'' অন্য দিকে আবূ হাসান (র) বলেছেন- ''আয় পরওয়ারদিগার! যদি ইলমের ঐশ্বর্য আমি প্রকাশ করে দেই, তাহলে, আমাকে বলা হবে যে, আমি মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়েছি। আর, মুসলমানরা আমাকে হত্যা করা জায়েজ বলে গণ্য করে ফেলবে। তাছাড়া, তখন আমি অতি-উত্তম ভাবে যা-ই উপস্থাপন করবো, তাতেও মন্দ খুজে বের করা হবে।''
মনে আলোর আবির্ভাবে যে সব শুভ চিন্তা আসেঃ
১) মনকে আলোকময় করতে হয় তিন ভাবে- দুনিয়ার প্রতি উদাসীনতা সৃষ্টি করে, জান্নাত বা বেহেশতের প্রতি আগ্রহ তৈরী করে এবং মৃত্যু আসার আগেই মৃত্যুর জনে তৈরী হয়ে।
২) ক্ষমা পাওয়ার পথে চারটি বাধা আছে- দুনিয়া, সৃষ্টিজগত, শয়তান এবং নফস।
৩) একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে মহানবী (সা)-এর মর্যাদা যতটুকু পার্থক্য, একজন সাধারণ প্রার্থনাকারী থেকে একজন জ্ঞানী'র সম্মান ততটুকু উঁচু।
৪) একজন জ্ঞানী লোকের দিকে তাকিয়ে থাকলেও অনেক উপকার হয়।
৫) জ্ঞানীরা বেহেশতের সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাপূর্ণ মানুষ হবেন।
৬) এমন ভাবে জ্ঞান হাসিল করতে হবে যাতে তা ইবাদতের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে না দাঁড়ায়। অন্যদিকে, এমন ভাবে ইবাদত করতে হবে যাতে তা জ্ঞান আহোরনের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
৭) জ্ঞান এবং কাজের মধ্যে জ্ঞানকে আগে রাখতে হবে। কাজ তো জ্ঞানের অনুসরণকারী!
৮) যে জ্ঞান ও কাজ দ্বারা কোন উপকার হয় না তা থেকে দূরে থাকতে হবে।
৯) জ্ঞান তিন প্রকার- আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে জ্ঞান, গোপন জ্ঞান এবং শরীয়তের জ্ঞান।
১০) আল্লাহর মারেফত লাভ করার আগেই আমি মৃত্যু চাই না।
১১) আমি এমন জ্ঞানীদের মাঝে নিজেকে দেখতে চাই না যার ফলে আমি আলিম এবং বোকাদের সাথে ঝগড়া করবো। আমি তাদের মতোও হতে চাই না যারা নিজের প্রতি মানুষদের আকর্ষন করার জন্যে জ্ঞান লাভ করতে চায়।
১২) পাপ কাজ করলে সবার আগে ক্ষমা চাওয়া সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ। এটা না চাওয়া পর্যন্ত অন্যান্য সকল ইবাদতই নফল।
১৩) মূর্খ লোকরাই দোযখের আগুনে বেশি থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০১