যাই হোক, আর্ট শিখানোর অনেক উপায় আছে। আমি শিক্ষক না হলেও চলবে। কিন্তু, শিক্ষার্থী পাবো কই! পথশিশুরা তো 'কামাই' করতে ব্যস্ত। তাই, চলে গেলাম পাশের এলাকার মাঠে। খুঁজে বের করলাম দুটি পথশিশুকে। একটি ১০/১২ বছরের মেয়ে, আরেকজন ৬/৭ বছরের ছেলে।
ঐ মাঠের শহীদ মিনারটি ময়লা। মানুষ সেন্ডেল-জুতা পড়েই সেটার উপর উঠছে। আমার সাথে বাচ্চাগুলোও সেখানে প্রথমে তাদের পায়ের স্যান্ডেল পড়েই শহীদ মিনারে উঠেছিলো। আমাকে মিনারের নিচে জুতা খুলে সেই ময়লায় বসতে দেখে, তারাও জুতাগুলো বাইরে রাখলো। এবারে, শুরু হলো গল্প। কার কি নাম, বয়স কত, কে কি করে।
কথায় কথায় হঠাৎ মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলাম- আচ্ছা বলো তো, বড় হয়ে তুমি কি হবে? তার সংক্ষিপ্ত উত্তর- 'ডাক্তার'। আমি একটু অবাক হলাম। একটু আগেই মেয়েটিকে দেওয়া কেইকের প্যাকেটে কি লেখা পড়তে বলেছিলাম, মেয়েটি বলতে পারেনি। জিজ্ঞাসা করলাম- ''তুমি কেন ডাক্তার হতে চাও?'' মেয়েটি উত্তর দিলো- ''মানুষের সেবা করতে চাই। মা-রে ফ্রিতে চিকিৎসা করাতে চাই।''
আমি মেয়েটিকে বললাম- তুমি একজন ডাক্তারের ছবি আঁকতে পারবে? সে এবারে বেশ উজ্জ্বল হেসে বললো- পারবো। আমি তার হাতে রং পেন্সিল আর অঙ্কনের একটি বড় সাদা ক্যানভাস তুলে দিয়ে বললাম- নিজের ইচ্ছা মতো যা মন চায় আঁকো, মা। আমি শুধু একজন ডাক্তারের ছবি দেখতে চাই।
মেয়েটি সাথে সাথে আঁকতে বসে গেলো। ঐ ময়লা শহীদ মিনারেই। তার চোখেমুখে এখন আলোর ঘন-ঘটা। সে তার আঁকা শেষ করতে পেরেছিল কি না জানি না, আমি তাকে ঐ মগ্ন অবস্থাতেই রেখে চুপে চুপে রাস্তায় নেমে গেলাম। গলায় তখন সেই চিরচেনা গান-
মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ,
হাতে আছে অচেনা এক শহরের ম্যাপ!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৮:২৬