ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সাঃ) যখন হেরা গুহায় ছিলেন, তখন ফেরেশতা জিব্রাইল তাঁর সামনে উপস্থিত হয়ে কোরআনের এই আয়াত উপস্থাপন করেছিলেন- ''পড়, তোমার প্রভুর নামে।'' আল্লাহ ও ফেরেশতাদের সরদার জিব্রাইল কি জানতেন না যে, নবী মুহাম্মদ পড়তে জানতেন না? একজন নিরক্ষর ব্যক্তিকে পড়তে বলার পিছনে কোন কারণই থাকার কথা নয়। এটাও নিশ্চিত যে, মহান সৃষ্টিকর্তা জানতেন যে, নবী (সা)-এর অবস্থা জানতেন। তারপরেও পড়তে বলার কারণ কি?
এটা গেলো পড়ার কথা। আমার পরবর্তী প্রশ্ন- একজন নিরক্ষর ব্যক্তি কি লিখতে পারেন? সেই সময়ের অবিশ্বাসীরাও মনে করতো যে, রাসূল (সা) অতীতের রুপকথাগুলো লিখে রাখতেন। তাদের কথার জবাবে তাই তো কোরআনে আল্লাহ বলেছেন- তারা বলে, এগুলো তো পুরাকালের রূপকথা, যা তিনি (মুহাম্মদ) লিখে রেখেছেন। এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর কাছে শেখানো হয়। [সূরা ফুরকানঃ আয়াত ৫]
অবিশ্বাসীদের সাথে একটি যুদ্ধের সময়ে সন্ধি চুক্তি করতে হয়েছিলো। সে সময় বিপক্ষ দলের নেতারা বললো যে- চুক্তির যে অংশে লেখা ছিল “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”, সেটা যেন মুছে দেওয়া হয়। হযরত মুহাম্মদ (সা) নিজ হাতে তা মুছে দেন। অন্য একটি হাদিসে আছে যে- তিনি নিজ হাতে মুছে দিয়ে লিখেছিলেন- ''এ সন্ধিপত্র মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ সম্পন্ন করেন- খাপবদ্ধ অস্ত্র ব্যতীত আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে নিবেন না। আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাঁকে বাধা দিবেন না।’ এখন প্রশ্ন, নিরক্ষর হয়েও নবী (সা) কিভাবে পড়তে পারলেন যে কোন অংশে ঐ শব্দগুলো লেখা হয়েছে?
সহীহ বুখারী শরীফের আরেকটি হাদিসে আছে যে- রাসূলুল্লাহ (সা) একটি চিঠিত লিখেছিলেন এবং লেখার ইচ্ছা পোষণ করেন।
আনাস ইবন মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানা পত্র লিখলেন অথবা একখানা পত্র লিখতে ইচ্ছা পোষণ করলেন। তখন তাঁকে বলা হল, তারা (রোমবাসী ও অনারবরা) সীলমোহর ব্যতীত কোন পত্র পাঠ করেনা...
এছাড়া, তিরমিযী শরীফের একটি হাদিসে আছে যে--- ''আল-আদ্দা ইবনু খালিদ ইবনু হাওযা (রাঃ) আমাকে বললেন, যে চুক্তিপত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লিখে দেন তা কি তোমাকে পড়ে শুনাব? আমি বললাম, হ্যাঁ।......''
বুখারী শরীফের আরেকটি হাদিসটি এরকম--- ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যখন বেড়ে গেল তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে কাগজ কলম নিয়ে এস, আমি তোমাদের এমন কিছু লিখে দিব যাতে পরবর্তীতে তোমরা ভ্রান্ত না হও।
এই হাদিসগুলো কি প্রমাণ করে? মহানবী (সা) নিরক্ষর ছিলেন না। তাহলে, তাঁকে পবিত্র কোরআন শরীফে 'উম্মী' বলা হল কেন?!!! 'উম্মি' শব্দের অনেক অর্থের একটি হলো- 'নিরক্ষর'। তাহলে, কি আমরা কোরআনের এই আয়াতের ভুল মানে করছি? প্রশ্ন থাকলো আপনাদের কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:০৮