somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যপথিক শাইয়্যান
অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের মুসলিম স্বৈরশাসকরা কখনোই মেনে নেয় নাই

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিবি ফাতেমা (আ) এবং মওলা আলী (আ)-এর উপর অত্যাচারের কাহিনী জানা আমাদের জন্যে কেন প্রয়োজন? কেন এতো দিন পরেও আমাদেরকে এই নিয়ে লিখতে হবে? কেন জাতিকে ভুলিয়ে দেওয়া সত্য কাহিনী জানাতে হবে? এর কিছু উত্তর আমি আজ দিতে চাই। যারা খোদার সৃষ্ট এই ভূমিতে ধর্মের নামে অরাজকতা করে এবং আগেও করেছেন, তাদেরকে খুব সাবধানে আমাদেরকে এড়িয়ে চলা শিখতে হবে। আর, তাদেরকে পরাজিত করতে বারে বারে আমাদেরকে এমন ইতিহাস থেকে চলতে হবে। মনে রাখবেন, দাজ্জাল একজন ধার্মিক মানুষের রূপ ধরে আমাদের কাছে আসবে।

মৃত্যু আমাদের নিয়তি। এটা যে কোন সময়ই আসতে পারে। কিন্তু, সেই মৃত্যুর ক্ষণকে যখন নিজেরাই ঠিক করে নিই, অন্য কোন মানুষকে নিজ হাতে যখন মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দেই, তখন ব্যাপারটি কেমন দাঁড়ায়? খুব জানতে ইচ্ছে করে, কোন ধরণের মানসিকতার কারণে এতোগুলো মানুষকে হত্যা করেছিলো পাকিস্তানী স্বৈরশাসকেরা। তারা কি তোষামোদ এবং বিবেক বিক্রয়ের মূল্য বাজারে বৃদ্ধি করতে আর সত্যপ্রীতি ও ন্যায়নীতি’র মূল্য হ্রাস করতে এমন করেছিলো? তারা কি বুঝেনি এরকম নীতি অবলম্বনে বিপদ মাথায় নিয়ে সত্য কথা বলার লোক হ্রাস পেতে থাকলে তা জনগণকে ভীরু এবং সুবিধাবাদী করে তুলে?

এসব অবশ্য নতুন কিছু নয় আধুনিক মুসলিম শাসকদের ক্ষেত্রে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, বিরুদ্ধবাদীদের উপর সব সময়ই খড়্গহস্ত ছিলেন এই ধরণের ক্ষমতালোভীরা। এই রকম কিছু ঘটনা আমি আজ তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

ইরাকের একটি শহর কুফা। তার গভর্নর যিয়াদ ছিলেন খুবই অত্যাচারী। একবার কোন তার অন্যায় আচরণের প্রতিবাদকালে ১২জন সঙ্গীসহ গ্রেপ্তার করা হয় হযরত হুজর (রাঃ)-কে। শুধু তাই নয়, মহানবী (সাঃ)-এর এই সঙ্গীকে হত্যা করা হয়। তাঁর এক সঙ্গী আবদুর রহমান ইবনে হাসসানকে জীবন্ত পুতে ফেলা হয়েছিলো।

জুলুম-নিপীড়নের এ ধারা পরবর্তীতে আরো প্রকট আকারে দেখা গিয়েছে মুসলিম শাসকদের মাঝে। জনগণের কন্ঠ স্তব্ধ করে দিতে চলেছে অন্যায়ের স্টিম রুলার। মদীনার গভর্নর মারওয়ান ইবনুল হাকামের একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রাঃ) বলেছিলেন- ‘আপনি অন্যায় কথা বলছেন’। ফলাফল? মারওয়ান হযরত মিসওয়ারকে লাথি মারেন।

আরেকবার জুমার খুতবাকে অস্বাভাবিক দীর্ঘ করায় মসজিদে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি এর প্রতিবাদ করেন। সাথে সাথে শাসনকর্তা ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালেকের রাজকীয় দেহরক্ষী তাঁকে হত্যা করে।



মুসলিম শাসকরা প্রায়শই জনগণের উপর শাস্তির ক্ষেত্রে বাড়াবড়ি করে ফেলতেন। বসরার গভর্নর আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে গাইলান একবার মসজিদের ভিতর মিম্বারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ সময় একজন ব্যক্তি প্রতিবাদ স্বরূপ তাঁর দিকে পাথরের টুকরা ছুড়ে মারে। আবদুল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে হাত কেটে ফেলেন। একই কারণে কূফার গভর্নর যিয়াদ ৩০ থেকে ৮০ জনের হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ, ইসলামী আইনে এরকম কোন বিধান নেই।

ইয়ামানের গভর্নর বুসর ইবনে আরতাত যখন হামাদান দখল করে, তখন পূর্ববর্তী গভর্নর উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর দুই শিশুকে হত্যা করে। শুধু তা-ই নয়, সে ঐ নগরের গ্রেফতারকৃত মহিলাদের দাসীতে পরিণত করে। মুসলিমদের আরেক শাসক মিসর আক্রমণ করে দখল করে নেওয়ার পর সেখানের গভর্নর মুহাম্মাদ ইবনে আবু বকর (রা)-কে হত্যা করে মৃত গাধার চামড়ায় জড়িয়ে তাঁর লাশ পুড়িয়ে ফেলে।

এইসব শাসকেরা এতোটাই বাড়াবাড়ি করতো যে প্রতিবাদকারীদের শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হতো না, তাঁদের লাশকেও অবমাননা করতো। মহানবী (সাঃ)-এর নাতী হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর মাথা দেহ থেকে ছিন্ন করে শহরে শহরে ঘুরানো হয়। শুধু তা-ই নয়, তাঁর লাশের উপর দিয়ে ঘোড়া পর্যন্ত চালিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) এবং তাঁর দুই সাথীরও একই পরিণত বরণ করতে হয়। তাঁদের কাটা মাথা মক্কা থেকে মদীনা, মদীনা থেকে দামেশকে নিয়ে স্থানে স্থানে প্রদর্শনী করা হয়। আর অবশিষ্ট দেহগুলোকে পচে-গলে যাওয়া পর্যন্ত শূলে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো।

উমাইয়াদের অত্যাচারী শাসক মারওয়ান তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের সমর্থন করায় হযরত নুমান ইবনে যুবায়েরকে হত্যা করেই শান্ত হোননি, তাঁর মাথা দেহ থেকে কেটে ফেলে হযরত নুমানের স্ত্রী’র কোলে ছুড়ে ফেলেন।

ইয়াযীদের আমলে তাকে দুষ্কৃতকারী ও অত্যাচারী আখ্যা দিয়ে মদীনাবাসীরা একবার বিদ্রোহ করেছিলেন। ইয়াযীদ ১২ হাজার সৈন্য প্রেরণ করে মদীনা দখল করে শহরের অধিবাসীদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালানোর নির্দেশ দেয়। তার সৈন্যবাহিনী মদীনাতে ৭০০ সম্মানিত এবং ১০ হাজার সাধারণ নাগরিককে হত্যা করে। শুধু তা-ই নয়, তাদের অত্যাচারে মদীনার ১০০০ মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এই সেই মদীনা যার সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) সাবধান করে বলেছেন যে, কেউ যদি মদীনার বিরুদ্ধে মন্দ কাজের ইচ্ছাও পোষন করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুনে শিশার মত গলিয়ে দেবেন। আর এই একই বাহিনীই কা’বা শরীফে পাথর নিক্ষেপ করে আগুন লাগিয়ে দেয়।



মুসলমানদের হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ বলে এমন এক শাসক ছিলো যার কুকীর্তি এতোটাই ব্যাপক ছিলো যে দুনিয়ার তাবৎ জাতি যদি তাদের কুকীর্তি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়, হাজ্জাজের কুকর্মের কাছে সেগুলো কিছুই না। প্রতিবাদ করায় দুই বুযর্গ ব্যক্তি’র ঘাড়ে মোহর অংকন করে দেয় এই অত্যাচারী। তার আমলে বিনা বিচারে আটক ১ লক্ষ ২০ হাজার ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। তার শাসনামলের শেষ দিকে ৮০ হাজার নাগরিককে বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিলো।

উমাইয়া গোত্রের এই অত্যাচারের পরিণতি ভালো ছিলো না। তাদেরকে শাসন থেকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখল করা আরেক ভাওতাবাজ মুসলিম শাসকশ্রেণী আব্বাসীয়রা সিরিয়ার শহরে শহরে অত্যাচার চালায়। এক দামেশকেই ৫০ হাজার লোক নিহত হয় তাদের হাতে। মসজিদকে ঘোড়ার আস্তাবলে পরিণত করে এই শাসকগোষ্ঠী। মৃতদের কবরকে উপড়ে ফেলে দেহ আগুনে পুড়িয়ে ছাই ঊড়িয়ে দেওয়া হয়। শিশুদের হত্যা করে তাদের মৃতদেহের উপর কার্পেট বিছিয়ে খাদ্য গ্রহণ করতো আব্বাসী সৈন্যবাহিনী। মসজিদে ঢুকিয়ে হত্যা করা হয় মুসলের হাজার হাজার মানুষকে। মেয়েদের করা হয় ধর্ষন।

দুঃশাসনের প্রতিবাদকারীদের ঠিকানা না বলে দেওয়ার কারণে এক আব্বাসী শাসক প্রতিবাদকারীদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের গ্রেফতার করে সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিলামে তুলে। মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম ইবনুল হাসানকে দেয়ালে পিষে হত্যা করে। ইবরাহীম ইবনে আবদুল্লাহ’র শ্বশুরকে উলঙ্গ করে ১৫০ বার চাবুক মারা হয়। পরবর্তীতে প্রতিবাদকারী নফসে যাকিয়্যা ধরা পড়লে তাঁর শিরোচ্ছেদ করে মাথা শহরে শহরে প্রদর্শনী করা হয়। এমনকি বিখ্যাত বাদশাহ হারুন-অর-রশীদের স্ত্রী’র কাছের জনের বিরুদ্ধে একজন বিচারক রায় দিলে তাঁকে চাকরী পর্যন্ত হারাতে হয়।

এরকম ঘটনা আরও আছে! সময়াভাবে আজ লিখতে পারলাম না। পরিশেষে এটাই বলতে চাই,, ইসলামে স্বৈরাচারী এবং সামরিক সরকার নিষিদ্ধ হলেও যুগে যুগে এই ধরণের শাসকরাই বেশির ভাগ সময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূমিগুলোতে শাসন করে এসেছে। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীরাও এর ব্যতিক্রম ছিলো না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১৯
১১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×