
কিছু মুসলমান দু'টি ভুল প্রায়শই করে থাকেন। একটি হচ্ছে- রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গী সবাকেই 'সাহাবী'-এর মর্যাদা দিয়ে থাকেন। ২য় ভুলটি হচ্ছে- সবাইকেই সাহাবী হিসেবে গ্রহণ করার কারণে এইসব মানুষদের করা ভুলকেও তারা এড়িয়ে গিয়ে তাদেরকে মহান করে তুলেন। অথচ, এটা পাপ! রাসূল (সা)-এর সঙ্গী সবাইই সাহাবী ছিলেন না। আসুন তাই জেনে নিই 'সাহাবী' শব্দটার অর্থ কি?
আল্লামা ইবনে হাযার (র) তাঁর 'আল ইসবা ফী তাময়ীযিস সাহাবা' গ্রন্থে লিখেছেন-
''সাহাবা সেই ব্যক্তি, যে রসুলাল্লাহ (সা)-এর প্রতি ইমান সহকারে তাঁর সাহচর্য বা সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং সেই ইমানের উপরই মৃত্যুবরণ করেছেন।''
আল্লামা সাখাবী (র) তাঁর 'ফথহুস মুগীস' গ্রন্থে লিখেছেন-
সাহাবা তিনিই যিনি দীর্ঘদিন নবিজি (সা)-এর আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। যিনি এর বিপরীত, তিনি কিছুতেই সাহাবা হতে পারেন না।
আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি তাঁর খাসায়েস-এ কুবরা (১ম খন্ড) কিতাবে বলেন-
সাহাবা শব্দটি তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যারা কুরানুল করিমে একবার সাবেকুন-এর মধ্যে গণ্য হয়েছেন।
'দরজাত এ মিরকাত' বইয়ে লেখা আছে-
''সাহাবা তাঁরাই যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইমান এনেছেন।''
আর, পবিত্র কুরআন শরীফে লেখা আছে-
''মানুষ কি মনে করে যে, তারা এ কথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?''
[সুরা আন কাবুত, আয়াত-২]
''আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিলো। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।'' [সুরা আন কাবুত, আয়াত-৩]
আল্লাহ আরও বলেন-
''মুহম্মদ আল্লাহর রসুল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে সহানুভূতিশীল।'' [সুরা ফাতহ, আয়াত - ২৯]
''আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।'' [সুরা তাওবা, আয়াত - ১০০]
উপরের আয়াত এবং সালফে সালেহীনদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সাহাবী তাঁরাই যাদের নিচের গুণাবলী আছে-
১) তাঁরা মক্কার সর্বপ্রথম হিজরতকারী এবং মদীনার পুরাতন আনসার হবেন,
২) যারা আল্লাহর পরীক্ষায় পাস করেছেন,
৩) যাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইমান ছিলো,
৪) যারা নবিজির আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন,
৫) যারা মক্কা বিজয়ে পূর্বে ইমান এনেছিলেন,
৬) যারা কুরানুল করিমে একবার সাবেকুন-এর মধ্যে গণ্য হয়েছেন।
৭) যারা নিজেদের মধ্যে সহানুভূতিশীল।
এই গুণ যেসব ব্যক্তিবর্গের মাঝে নেই, তারা কি করে সাহাবা'র পদমর্যাদার অধিকারী হতে পারেন! সবেশেষে, বুখারী ৪র্থ খন্ড এবং মুসলিমের ৭ম খণ্ডের একটি হাদিস দিয়ে শেষ করবো-
''মাওলা মুহাম্মদ (সা) বলেন- আমি তোমাদের সবার আগে হাউজে কাউসারে তোমাদের সাথে থাকবো। যে আমার নিকট যাবে তাকে আমি তৃপ্তি সহকারে পানি পান করাবো। কিছু লোক আমার কাছে আসবে-তাদের আমি চিনি এবং তারাও আমাকে ভালো ভাবে চেনে, অতঃপর আমার এবং তাদের মাঝে দেওয়াল সৃষ্টি হবে। আমি বলবো এরা তো আমার সাহাবা। তখন উত্তর আসবে এরা আপনার উপর পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে ফিরে গিয়েছিলো।
তখন আমি বলবো- আফসোস তাদের জন্য যারা আমার পর দ্বীনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছে।''
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



