মেয়েটা আমাকে অনেক পছন্দ করতো। পছন্দ করতো না বলে 'ভালোবাসতো' শব্দটা ব্যবহার করলেও মিথ্যা কথা বলা হবে না। আমার চেয়ে মেয়েটা দুই বছরের ছোট হবে। ভার্সিটিতে আমি তখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সাংস্কৃতিক আর সেবামূলক সংগঠন করে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম। হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলাম, আমি যে কোন অনুষ্ঠানে গেলে একটি পরিচিত মুখ আমার পিছু ধাওয়া করতো। সেই মুখটি আরিশা'র।
নিজের হাতে গড়া একটি সেবামূলক সংগঠন ছিলো- 'অনুসন্ধান'। সারা দেশের মতো সিলেটেও তখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিলো। ডেঙ্গু রোগীদের জন্যে এতো এতো ফ্রেশ ব্লাড জোগাড় করতে পারছিলো না হাসপাতালগুলো। ঠিক তখন, আমরা কয়েকজন মিলে সিলেটের রোগীদের ফ্রেশ ব্লাড জোগাড় করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। ভলান্টিয়ার হিসবে রক্ত দিতে আমাদের ভার্সিটির ছেলেমেয়েদের উদ্বুদ্ধ করতে থাকি। আমাদের এই উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলেছিল তখন।
একদিন, ক্যাম্পাসে একটি রক্তদান কর্মসূচিতে কাজ করছি। হঠাৎ, সামনে এসে উপস্থিত হলো আরিশা। প্রায় আমার সমান লম্বা, ছিপছিপে গড়নের মায়াকাড়া মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আমি হেসে দিয়েছিলাম। দেখলাম, সেও মুচকি হাসছে। আমি উঠে দাঁড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানালাম। সে হেঁটে আমার খুব কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। আমি তার নিঃশ্বাসের আওয়াজ পাচ্ছি। আরিশা সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সেই চোখে কোন সংকোচ নেই!
'আমি কি আপনার সাথে একটু একা কথা বলতে পারি?' আরিশা বললো।
আমার সহপাঠীরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ মুচকি হাসছে। আমি এক পা পিছু সরলাম। ওমা! আরিশা দেখি এক পা এগিয়ে এলো! এবারে আমার প্রায় বুক ছুই ছুই! আমি প্রমাদ গুনলাম। কিছু না বলে আরেক পা পিছু হটলাম। মাটির দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটার সাহস দেখে অবাক হচ্ছিলাম। আরিশা আবারও এক পা এগিয়ে এলো!
আমি তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ঘুরে অন্য রুমে চলে গেলাম। আরিশা এরপরে আর কোন দিন আমার সামনে আসেনি। পরে আমি যত দিন ক্যাম্পাসে ছিলাম, আমার কোন অনুষ্ঠানে তাকে আর উপস্থিত থাকতে দেখিনি। শুনেছি, আরিশা অনার্স পাশ করে অনেক বড় একটি চাকরী পেয়ে বিদেশে চলে গিয়েছে।
মিষ্টি দস্যি মেয়েটা যেখানে থাকুক, ভালো থাকুক এই কামনা করি।
ছবিঃ অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৪০