
সে বহু কাল আগের ঘটনা। একবার এক বুদ্ধ ভিক্ষু গাছের নিচে বসে ছিলেন। তিনি যখন ধ্যান করছিলেন, হঠাৎ শুনতে পেলেন, গাছের মগডালে বসা একটি কাক চিৎকার করে কাঁদছে। সেই কাকের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল যখন ভিক্ষুর কোলে এসে পড়লো, তখন তিনি উপরে তাকিয়ে কাকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন - "ওহে বন্ধু, তুমি কাঁদছো কেন?"
তখন কাকটি কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিলো - "গুরুজী, আমি আমার জীবন নিয়ে খুবই দুঃখিত। সবাই আমাকে তাড়িয়ে দিয়ে অপমান করে। কেউ আমায় কোন খাবার দেয় না। সবাই আমাকে ঘৃণা করে। এরকম জীবনের চেয়ে মৃত্যুই আমার জন্যে ভালো ছিলো!"
এই বলে কাকটি হু হু করে কাঁদতেই লাগলো। তা শুনে বুদ্ধ ভিক্ষু সহানুভূতির সুরে বললেন - "দেখো বন্ধু, আমরা জ্যা পরিস্থির মাঝেই থাকি না কেন, আমাদেরকে সুখী হওয়া শিখতে হবে।"
কিন্তু, তরুণ কাকটি বুদ্ধের এই কথা মর্ম উপলব্ধি করতে পারলো না। সে উচ্চ স্বরে কাঁদতেই লাগলো। তখন ভিক্ষু তাকে বললেন - "তুমি মনে ব্যথা নিও না। বোলো, তুমি কি হতে চাও? আমি আমার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে তুমি যা চাও তা তোমাকে বানিয়ে দিবো।"
তখন কান্না থামিয়ে কাকটি বললো- "ওগো জ্ঞানী মানুষ, আপনি দয়া করে আমাকে একটি রাজহাঁস বানিয়ে দিন।"

তখন ভিক্ষু বললেন - "ঠিক আছে, আমি তোমাকে রাজহাঁস বানিয়ে দিবো। কিন্তু তার আগে তোমাকে রাজহাঁসের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে - সে তার নিজের জীবন নিয়ে সুখী কি না। তুমি তাকে জিজ্ঞাসা না করে আসা পর্যন্ত আমি এইখানে তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো।"
কাকটি তখনই সেই গাছ ত্যাগ করে উড়ে গেলো। উড়তে উড়তে সে একটি রাজহাঁসকে খুঁজে বেড় করে জিজ্ঞাসা করলো -
"তুমি কতো সুন্দর! দুধের মতো সাদা! সবাই তোমাকে কত ভালোবাসে! তুমি নিশ্চয় এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী পাখী?"
রাজহাঁস তখন তার বিরাট দুই ডানা ঝাপ্টিয়ে একটু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো - "তুমি ভুল বলছো, কাক! আমি আসলে সুখী নই। পৃথিবীতে এতো এতো রঙের ছড়াছড়ি। আর, দেখো, আমার রং তো শুধুই সাদা। আমার কতই না ভালো লাগতো যদি টিয়া পাখীর মতো আমার রঙ রঙ্গিন হতো! তুমি কি কাউকে খুঁজে দেখবে সে আমাকে টিয়া পাখী বানিয়ে দিতে পারে কি না!"

এটা শুনে কাক তখনই টিয়া পাখীর কাছে উড়ে গেলো। গিয়ে বললো - "হে টিয়া বন্ধু, তুমি দেখতে কতো সুন্দর! তোমার গায়ে কতই না রঙের বাহার! তুমি নিশ্চয় এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী পাখী?"
কাকের কথা শুনে টিয়া আক্ষেপ করে বললো - "দেখো, আমার গায়ের রঙ সুন্দর, কথাটা ঠিক। কিন্তু, আমি সব সময়ে ভয়ে ভয়ে থাকি কোন সময়ে মানুষ আমায় ধরে খাঁচায় আটকে রাখবে। এরকম ভয় নিয়ে আর কতটুকু চলা যায়! তুমি বরং এমন কাউকে খুঁজে দাও যে আমাকে ময়ূরের মতো রঙ্গিন ও বড় বানিয়ে দিবে।"

কাক অবাক হয়ে টিয়ার কথা শুনে তখনই ময়ূরের খোঁজে বেরিয়ে পড়লো। খুঁজতে খুঁজতে সে একটি চিড়িয়াখানায় ময়ূরকে পেলো। তখন কাকটি ময়ূরকে বললো - "তুমি দেখতে কতই না রঙ্গিন। মানুষ তোমাকে কতো ভালোবাসে! অথচ, আমার দিকে ফিরে তাকায় না! তুমি নিশ্চয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী পাখী?"
কাকের কথা শুনে ময়ূর ডাক ছেড়ে কান্না করতে লাগলো। কিছুক্ষণ কান্না করে বললো - "ওহে কাক, তুমি কি একবার ভেবে দেখেছো, মানুষ যখন তাদের বাসায় সাজিয়ে রাখার জন্যে আমার পেখমগুলো টেনে টেনে তুলে ফেলে, তখন আমার কতো ব্যাথা লাগে! আমার তখন খুব কষ্ট হয়। আমি তাহলে কিভাবে সুখী হলাম!"

কাক তখন ময়ূরের দুঃখ বুঝতে পারলো। তারপরে, বললো - "আঁচছে ময়ূর, তুমি বোলো তো দেখি, এই পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে সুখী পাখী কোনটা?"
তখন ময়ূর বললো - "আমি অনেক দিন ধরে এই চিড়িয়াখানায় আছি। এই চিড়িয়াখানার সব ধরনের পাখী আছে, কিন্তু একমাত্র কোন কাককে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয় নাই। ইস! আমাকে যদি এরকম স্বাধীন জীবন দেওয়া হতো! তুমি কি এমন কাউকে খুঁজে দেখবে যে আমাকে তোমার মতো কাক বানিয়ে দিবে?"

কাক এবারে নিজের ভুল বুঝতে পারলো। সে উড়ে বুদ্ধ ভিক্ষুর কাছে ফিরে এসে বললো -
"হে মহানুভব! আমি অন্য কোন পাখী হতে চাই না। আমি যা আছি, তা নিয়েই সন্তুষ্ট!"
ছবি ও গল্পঃ ইউটিউব | Whenever you feel sad, listen to this story | motivational story about Raven |

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


