somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি যদি আপনার জীবন নিয়ে সুখী না হোন, তাহলে এই গল্প আপনার জন্যে

১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সে বহু কাল আগের ঘটনা। একবার এক বুদ্ধ ভিক্ষু গাছের নিচে বসে ছিলেন। তিনি যখন ধ্যান করছিলেন, হঠাৎ শুনতে পেলেন, গাছের মগডালে বসা একটি কাক চিৎকার করে কাঁদছে। সেই কাকের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল যখন ভিক্ষুর কোলে এসে পড়লো, তখন তিনি উপরে তাকিয়ে কাকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন - "ওহে বন্ধু, তুমি কাঁদছো কেন?"

তখন কাকটি কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিলো - "গুরুজী, আমি আমার জীবন নিয়ে খুবই দুঃখিত। সবাই আমাকে তাড়িয়ে দিয়ে অপমান করে। কেউ আমায় কোন খাবার দেয় না। সবাই আমাকে ঘৃণা করে। এরকম জীবনের চেয়ে মৃত্যুই আমার জন্যে ভালো ছিলো!"

এই বলে কাকটি হু হু করে কাঁদতেই লাগলো। তা শুনে বুদ্ধ ভিক্ষু সহানুভূতির সুরে বললেন - "দেখো বন্ধু, আমরা জ্যা পরিস্থির মাঝেই থাকি না কেন, আমাদেরকে সুখী হওয়া শিখতে হবে।"

কিন্তু, তরুণ কাকটি বুদ্ধের এই কথা মর্ম উপলব্ধি করতে পারলো না। সে উচ্চ স্বরে কাঁদতেই লাগলো। তখন ভিক্ষু তাকে বললেন - "তুমি মনে ব্যথা নিও না। বোলো, তুমি কি হতে চাও? আমি আমার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে তুমি যা চাও তা তোমাকে বানিয়ে দিবো।"

তখন কান্না থামিয়ে কাকটি বললো- "ওগো জ্ঞানী মানুষ, আপনি দয়া করে আমাকে একটি রাজহাঁস বানিয়ে দিন।"



তখন ভিক্ষু বললেন - "ঠিক আছে, আমি তোমাকে রাজহাঁস বানিয়ে দিবো। কিন্তু তার আগে তোমাকে রাজহাঁসের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে - সে তার নিজের জীবন নিয়ে সুখী কি না। তুমি তাকে জিজ্ঞাসা না করে আসা পর্যন্ত আমি এইখানে তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো।"

কাকটি তখনই সেই গাছ ত্যাগ করে উড়ে গেলো। উড়তে উড়তে সে একটি রাজহাঁসকে খুঁজে বেড় করে জিজ্ঞাসা করলো -
"তুমি কতো সুন্দর! দুধের মতো সাদা! সবাই তোমাকে কত ভালোবাসে! তুমি নিশ্চয় এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী পাখী?"

রাজহাঁস তখন তার বিরাট দুই ডানা ঝাপ্টিয়ে একটু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো - "তুমি ভুল বলছো, কাক! আমি আসলে সুখী নই। পৃথিবীতে এতো এতো রঙের ছড়াছড়ি। আর, দেখো, আমার রং তো শুধুই সাদা। আমার কতই না ভালো লাগতো যদি টিয়া পাখীর মতো আমার রঙ রঙ্গিন হতো! তুমি কি কাউকে খুঁজে দেখবে সে আমাকে টিয়া পাখী বানিয়ে দিতে পারে কি না!"



এটা শুনে কাক তখনই টিয়া পাখীর কাছে উড়ে গেলো। গিয়ে বললো - "হে টিয়া বন্ধু, তুমি দেখতে কতো সুন্দর! তোমার গায়ে কতই না রঙের বাহার! তুমি নিশ্চয় এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী পাখী?"

কাকের কথা শুনে টিয়া আক্ষেপ করে বললো - "দেখো, আমার গায়ের রঙ সুন্দর, কথাটা ঠিক। কিন্তু, আমি সব সময়ে ভয়ে ভয়ে থাকি কোন সময়ে মানুষ আমায় ধরে খাঁচায় আটকে রাখবে। এরকম ভয় নিয়ে আর কতটুকু চলা যায়! তুমি বরং এমন কাউকে খুঁজে দাও যে আমাকে ময়ূরের মতো রঙ্গিন ও বড় বানিয়ে দিবে।"



কাক অবাক হয়ে টিয়ার কথা শুনে তখনই ময়ূরের খোঁজে বেরিয়ে পড়লো। খুঁজতে খুঁজতে সে একটি চিড়িয়াখানায় ময়ূরকে পেলো। তখন কাকটি ময়ূরকে বললো - "তুমি দেখতে কতই না রঙ্গিন। মানুষ তোমাকে কতো ভালোবাসে! অথচ, আমার দিকে ফিরে তাকায় না! তুমি নিশ্চয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী পাখী?"

কাকের কথা শুনে ময়ূর ডাক ছেড়ে কান্না করতে লাগলো। কিছুক্ষণ কান্না করে বললো - "ওহে কাক, তুমি কি একবার ভেবে দেখেছো, মানুষ যখন তাদের বাসায় সাজিয়ে রাখার জন্যে আমার পেখমগুলো টেনে টেনে তুলে ফেলে, তখন আমার কতো ব্যাথা লাগে! আমার তখন খুব কষ্ট হয়। আমি তাহলে কিভাবে সুখী হলাম!"



কাক তখন ময়ূরের দুঃখ বুঝতে পারলো। তারপরে, বললো - "আঁচছে ময়ূর, তুমি বোলো তো দেখি, এই পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে সুখী পাখী কোনটা?"

তখন ময়ূর বললো - "আমি অনেক দিন ধরে এই চিড়িয়াখানায় আছি। এই চিড়িয়াখানার সব ধরনের পাখী আছে, কিন্তু একমাত্র কোন কাককে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয় নাই। ইস! আমাকে যদি এরকম স্বাধীন জীবন দেওয়া হতো! তুমি কি এমন কাউকে খুঁজে দেখবে যে আমাকে তোমার মতো কাক বানিয়ে দিবে?"



কাক এবারে নিজের ভুল বুঝতে পারলো। সে উড়ে বুদ্ধ ভিক্ষুর কাছে ফিরে এসে বললো -

"হে মহানুভব! আমি অন্য কোন পাখী হতে চাই না। আমি যা আছি, তা নিয়েই সন্তুষ্ট!"



ছবি ও গল্পঃ ইউটিউব | Whenever you feel sad, listen to this story | motivational story about Raven |



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×