আমি আমার ফার্মের একজন সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে বছরে ৫৪ লক্ষ টাকা দেই। তাতেও তিনি সন্তুষ্ট নন। ৩২ বছর বয়সী ছেলেটি তারপরও ছুটা কাম করে, মানে আউটসোর্সিং করে। আমার ফার্মের সবচেয়ে কম বয়সী মেয়েটি, যার বয়স এখন ২৮, সে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ড্র করে। অথচ, আমি বিদেশে অনেক কম বেতনে কাজ করেছি।
২০১২ সাল। ব্রিটেনে পোষ্ট স্টাডি ওয়ার্ক ভিসায় আমার প্রথম জব হয় একটি মিডিয়া ফার্মে। তাদের সফটওয়্যার সেলস ডিপার্টমেন্টে বার্ষিক ৫২,০০০ পাউন্ডের চাকরী। যা কাজ ল্যাপটপ আর ডেক্সটপে বসেই। ২ বছর সেই কাজ করার পরে, যখন পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক পারমিট শেষ হয়ে গেলো, তারা আমাকে স্পন্সর করতে চাইলো। আমি সব ছেড়ে-ছুড়ে ২০১৪ সালে দেশে ফিরে এলাম। জয়েন করলাম ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের একটি প্রজেক্টে, অর্থর্নীতিবীদ প্রফেসর একে এনামুল হক ছিলেন ঐ প্রজেক্টের হ্যাড। মাসিক ৮০,০০০ টাকা বেতন।
২০১৬ সালে, প্রজেক্ট শেষে, আমি জয়েন করলাম গোল্ডেন হার্ভেস্টে। মাসিক মাত্র ৭০,০০০ টাকা বেতনে। আমাদের ডিপার্টমেন্ট হ্যাড ছিলেন চরম রকমের অসৎ। আমি বড় বড় সাপ্লাইয়ার নিয়ে আসতাম, তিনি তাদেরকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে ৩-৪ মাস পর পর তাদের টাকা পরিশোধ করতেন। কেউ ঘুষ না দিলে, সময় মতো তাদের ইনভয়েসের ন্যায্য টাকা দিতেন না। এতে বাজারে কোম্পানির অনেক বদনাম হয়ে যায়। আমার বসের সাথে ঝগড়া করে চাকরী ছেড়ে দিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করি।
যত দিন জবে ছিলাম, আমি নিজের কাছে ওয়াদা করেছিলাম, যদি কখনো ব্যবসা করি, তাহলে, আমি যা পাই তারচেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি বেতন দেবো আমার কর্মচারীদের। বর্তমানে আমার ফার্মে ১৮-জন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তাদেরকে আমি শুরু থেকেই ২ লক্ষ টাকার উপরে বেতন দেই। গত ৭ বছরে আমি কখনোই একবারের জন্যেও তাদের বেতন দিতে দেরী করি নাই। প্রতি মাসের ২৯ তারিখ তাদের সেলারি একাউন্টে ঠিক ঠিক সময় মতো বেতন পৌছে যায়। সাথে তাদের জন্য আছে হেলথ ইন্সিওরেন্স ও অন্যান্য সুবিধা।
আর, এজন্যেই, গত ৭ বছরে আমার ফার্মে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারও নিজে থেকে চাকরী ছেড়ে দেয় নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:২২