বলা হয়ে থাকে, এক অত্যাচারী শাসক দরবেশদের কাছ থেকে জোর করে কাঠ কিনে নিত, তারপর তা ধনী লোকদের বিনামূল্যে বিলিয়ে দিত।
একদিন এক ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি সেখানে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এই অন্যায় দেখে বললেন:
‘তুমি যেন এক বিষাক্ত সাপ—যাকে দেখো, তাকেই দংশন করো,
বা এক পেঁচা—যেখানে বসো, সেখানেই ধ্বংস ডেকে আনো।
তোমার এই নিপীড়ন হয়তো মানুষের চোখে উপেক্ষিত,
কিন্তু সেই প্রভুর চোখ এড়িয়ে যাবে না—যিনি সব গোপন জানেন।
ভূপৃষ্ঠের মানুষের উপর অত্যাচার করো না,
কারণ তাদের প্রার্থনা আকাশে পৌঁছে যায়।’
এই কথা শুনে শাসক ক্রুদ্ধ হয়ে গেল। তিনি কিছুই বললেন না, কেবল সেই সাধুকে উপেক্ষা করলেন।
কিন্তু কিছুদিন পর এক রাতে তার রান্নাঘর থেকে আগুন লেগে গোটা কাঠের গুদাম পুড়ে ছাই হয়ে গেল। রাজসিক নরম বিছানা ছেড়ে তাকে উঠে দাঁড়াতে হলো গরম ছাইয়ের স্তূপে। ঠিক তখনই সেই ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি আবার সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং শুনলেন, শাসক তার সঙ্গীদের বলছে:
— “জানি না কোথা থেকে আগুন এলো আমার ঘরে!”
সাধু তখন বললেন:
“এ আগুন এসেছে দরবেশদের হৃদয়ের ধোঁয়া থেকে।”
সতর্ক হও সেই ধোঁয়ার থেকে,
যা উঠে আসে হৃদয়ের গোপন ক্ষত থেকে।
যতক্ষণ সম্ভব, কোনো একটি হৃদয় উপড়ে ফেলো না—
কারণ, একটি দীর্ঘশ্বাসই ধ্বংস করতে পারে গোটা দুনিয়া।
কাইখসরু’র রাজমুকুটে খোদাই করা ছিল এই পঙ্ক্তি:
‘কত বছর, কত যুগ ধরে
মানুষ হেঁটেছে আমার মাথার উপর দিয়ে?
যেমন এক হাত থেকে আরেক হাতে এসেছিল এই রাজ্য,
তেমনি তা আবারও যাবে অন্য কারো হাতে।’
=====
শেখ সাদী, গুলিস্তাঁ
===========