'সিনিয়র সিটিজেন' শব্দগুলো শুনলে মনে কেমন যেন ভক্তির উদয় হয়! তাঁরা হবেন ম্যান অব লেটার, ধোপ দুরস্ত, কথায় জ্ঞান ঝড়ে পড়বে। এমনই কল্পনায় থাকে। কিন্তু, এর উল্টোটা যদি হতে দেখা যায়, কেমন লাগবে? ময়লা রাস্তার পাঁশে দূর্গন্ধময় ফুঁটপাতে মাটিতে বসে আছেন একজন সিনিয়র সিটিজেন, পাশ দিয়ে যে-ই যাচ্ছেন তার দিকে হাত পাতছেন, পড়নে ছেঁড়া শাড়ি!
এমনই এক সিনিয়র সিটিজেনের দেখা পেয়ে তাঁকে অনুসরণ করছে আদনান। গত কয়েক বছর ধরে। রোজ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাস্তার কোনে বসে থাকেন সেই ৮০-৯০ বয়স্ক মহিলা। ফুটপাতে কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই তাঁর! রাস্তার পাঁশের দোকান ব্যবসায়ীরা এসে পড়লে জায়গা পরিবর্তন করতে হয়।
মাঝে মাঝে আদনান দেখে, সিনিয়র সিটিজেনটি রাস্তার দুই পাশের পথের উপর দাঁড়ানো সবজি আর ফল বিক্রেতাদের ঠেলা গাড়ির দিকে লোভাতুর চোখে তাকিয়ে থেকে মাঝে মাঝে হেঁটে যান। কেউ একটা ফল তুলে দেয় না তাঁর হাতে!
কি মনে করে সেই দিন আদনান বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে চলা 'মিনুর মা'-এর খোঁজে তাঁর বাসায় গিয়েছিলো। সকালে নির্দিষ্ট জায়গায় বসা থাকতে না দেখে একটু চিন্তিত ছিলো, সিনিয়র সিটিজেনটি কি অসুস্থ্য? বেশি খুঁজতে হলো না! সবাই মিনুর মা-কে চিনে। বেহারি ক্যাম্পের দুর্গন্ধময় একটি গলির ভিতর দিয়ে একটি প্রায় অন্ধকারময় সিঁড়ির নিচে ঠাই হয়েছে মিনুর মা তথা সিনিয়র সিটিজেনের।
সেই সেঁতসেঁতে গলির ভিতরের পুরো জায়গা জুড়ে দূর্গন্ধময় পরিবেশটা কতটা অস্বাস্থ্যকর, বুঝার চেষ্টা করে আদনান। বেশিক্ষণ সেখানে সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। বমি আসে তাঁর! কোনক্রমে বমি ঠেকিয়ে আদনান সেই গলি থেকে বেরিয়ে আসে।
নবীজি কর্মক্ষম ব্যক্তিদের হাত পাততে নিষেধ করেছেন। কিন্তু, মিনুর মায়ের মতো অক্ষম মানুষদের ব্যাবস্থা যদি রাষ্ট্র না নেয়, আদনান একা কীবা করতে পারবে! নিজের জমানো টাকা দিয়ে 'সিনিয়র সিটিজেন হোম' করা কি উচিৎ হবে? সেখানে মিনুর মায়ের মতো সিনিয়র সিটিজেনরা কি যাবেন? কয়েক বছর আগে সেরকম একটি চেষ্টা করেছিলো আদনান। কিন্তু, দেশের আইন ব্যাবস্থা এতো কঠিন, সেই চেষ্টা আর পথ দেখেনি।
অনেকের এই বলে আদনানকে নিরুৎসাহিত করেছিলো - 'তুমি নাহয় সিনিয়র সিটিজেনদের থাকা-খাওয়া-ঔষধের ব্যাবস্থা করলে, কিন্তু, তাঁদের কেউ হঠাৎ মারা গেলে, পুলিশি ঝামেলা হতে পারে।' এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবে ভেবে না পেয়ে আর সে এরকম প্রজেক্টের দিকে এগিয়ে যায়নি। আদনান কি আবার চেষ্টা করে দেখবে?
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার ওপাশের বটগাছের ঝুড়িটার দিকে তাকিয়ে চিন্তার অতল গহবরে হারিয়ে গেলো সে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





