আজ হাবিব মিয়ার এক মাত্র ছেলের বিয়ে। বেলা এখন দুপুর একটা, সে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে এই মাত্র যোগদান করল। তার ছেলের বিয়ে, আসতে একটু দেরীই হয়ে গেল। অনুষ্ঠান গুলশানের একটি আধুনিক কমিউনিটি সেন্টারে। হাবিব মিয়ার চক্ষু ছানা-বড়া। অনুষ্ঠানে কত-কত গাড়ী এসেছে , কত-কত ধনী ধনী মানুষ এসেছে। তার ভাষায় অনেক ”হাই-ফাই ব্যাপার”। কিন্তু সে কাউকে চিনে না, মনে হয় তাকে ও কেউ চিনে না। হ্যাঁ, হাবিব মিয়ার আজ আসতে একটু দেরীই হয়েছে, তাতে সে ওর নিজের দোষ দেখতে পেল না। সে গতকাল ফোনে ছেলের বিয়ের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই লালমনিরহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল। সে তার পকেট থেকে নিজ হাতে লিখা ঠিকানাটা মিলিয়ে দেখল। হ্যাঁ, ঠিকই আছে, সে সঠিক জায়গায় এসেছে। ইত্যবসরে তার ভাতিজার ’চাচা’ ডাকে তার চিন্তার মাঝে বাধা পড়ল। এইবার সে নিশ্চিত যে, সে ঠিক জায়গায় এসেছে। বেলা প্রায় দু’টা হতে চলল। অথিতি গণ কেউ কেউ খাবার সেরে ফেলেছেন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা প্রায় শেষ। ভাতিজা তাকে কমিউনিটি সেন্টারের ভিতরে নিয়ে গেল। একটু দূর থেকে তার ছেলে আর ছেলের বউকে দেখিয়ে দিল তারপরে দুপুরের খাবারের জন্য খাবার ঘরে দু’জনে চলে এল। হাবিব পূর্বেই শুনেছিল যে, ছেলের পছন্দের মেয়ে ওরা একসাথে পড়ত, আজ ওদেরই বিয়ে। মেয়ের বাবা ধনী এইটাও শুনেছিল কিন্তু ছেলের বিয়েতে তাকে সাধারণ অথিতি হয়ে আসতে হবে কল্পনাও করে নাই। সে তার ছেলেকে অনেক কষ্টে ডাক্তারী পড়িয়েছে। পেশায় সে পিয়ন, অনেক ছোট পেশা, বেতনও কম কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। ছেলের পড়াশুনার খরচের জন্যে, তারা স্বামী-স্ত্রী কত কষ্ট করেছেন। অনেক ঈদ গেছে হাবিব তার স্ত্রীকে একটা নতুন শাড়ী কিনে দিতে পারে নাই। কত দিন এক বেলা খেয়ে দিন পাড় করেছে। আজ সে তার ডাক্তার ছেলের বিয়ে দিতে আসে নাই, বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছে। সে খাছছে, গরুর মাংশ আর সাদা ভাত। বড়লোকদের খাবার, খুবই সুস্বাদু হয়েছে। আহা কী যে স্বাদ গরুর মাংশের, ঝাল একটু বেশীই।হাবিব মিয়ার চোখে মনে হয় পানি এছেছে। চোখের পানির কারণ পরিস্কার বুঝা গেল না। গরুও মাংশের ঝালের কারণে এই পানি নাকি হ্রদয়ের মাঝের উত্তপ্ত পানি।
(সত্য ঘটনা অবলম্বে)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




