somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাতারকার মহাপ্রয়াণে শোকাঞ্জলি অথবা আমার মাইকেল দর্শন

০২ রা জুলাই, ২০০৯ রাত ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাইকেল জ্যাকসনের ষষ্ঠ অ্যালবাম থ্রিলাম বের হয় ১৯৮২ সালে। বের হবার পরই এই অ্যালবামটি আলোড়ন তোলে বিশ্বজুড়ে। সর্বকালের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে থ্রিলার বিক্রি হয় সাড়ে ছয় কোটি কপি। সেই সাড়ে ছয় কোটি কপির মধ্যে একটি কোনভাবে এসে পৌঁছায় আমাদের বাড়িতে। আর সেই সুবাদে আমার সৌভাগ্য হয় তা দর্শনের। তবে সে সময়ে আমার বালকসুলভ মন মাইকেলের উদ্দাম নৃত্য আর ভয়ংকর ভূতুড়ে কর্মকান্ড দেখে ভেবেছিল- এটা বোধহয় কোন অতিভয়ংকর হরর সিনেমা। এরচেয়ে বেশী কিছু ভাবার বা বোঝার বোধ যেহেতু তখনও ছিল না সেহেতু কে মাইকেল আর কী তার বৈশিষ্ট্য তা নিয়ে মাথা ঘামানোও হয়নি তখন। পুরো অ্যালবাম দেখার সময় মাইকেলের চেয়ে আমার দৃষ্টি বেশী ঘোরাফেরা করেছে তার আশেপাশের সং মার্কা অভিনেতাদের প্রতিই।
অতঃপর, কেটে গেল বহুদিন। ততদিনে মাইকেলের গানের সঙ্গে পরিচয় ছাড়াও, তাকে নিয়ে গুরুগম্ভীর এবং জ্বালাময়ী বক্তব্য দেওয়ার যোগ্যতাও অর্জিত হয়ে গেছে। মাইকেল উন্মাদনায় আমি মোহিত। তার নিসঃঙ্গ জীবনের সঙ্গে নিজের জীবনকে একই মাপকাঠিতে মাপার অপচেষ্টাও করে চলেছি! গান গাওয়ার বা নাচার কোন যোগ্যতা নিয়ে যেহেতু এ পৃথিবীতে আসিনি তাই তাকে অনুকরণের জন্য কতকিছুই না করার চেষ্টা করেছি! কিন্তু তখন মাইকেল উন্মাদনা শুধু আমার মনেই, কারণ ততদিনে নীরবতাকে সঙ্গী করে নিয়েছেন মাইকেল জ্যাকসন। নিজের একাকী জীবনে শিম্পাঞ্জি বাবলকে নিজের প্রিয় বন্ধু হিসাবে ঘোষণা দিয়ে তিনি আমাকে করেছেন আরো আলোড়িত। সেই সঙ্গে আছে তার বারবার চেহারা বদলানোর খেলা। সেই সঙ্গে আমি শিহরিত হতাম তার বর্ণবৈষম্য আর বিশ্ব দারিদ্রের বিরোধিতার লড়াইয়ে। কিন্তু তার নীরবতা কষ্ট দিত আমাকে। একজন স্বপ্নে গায়কের এ অনাকাঙ্খিত নীরবতায় আমার হৃদয়ে তখন ঘটছে ক্ষরণ। তাতে সহ্য করতে হয়েছে বন্ধুদের টিপ্পনি। অনেকেই আমার অত্যধিক মাইকেল উন্মাদনাকে বিবেচনা করেছেন আদিখ্যেতা হিসাবে। তাতে কষ্ট পেতাম না। কিন্তু কষ্ট পেতাম মাইকেলকে নিয়ে কোন বিতর্কে। তাকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন, তার পাওনা প্রদান নিয়ে মামলাসহ নানা বিষয়গুলোতে আমি কষ্ট বোধ করতাম। এবার খুব আশায় বুক বেধেছিলাম। মাইকেল জ্যাকসনের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বেশ আমোদেই ছিলাম। না হোক সশরীরে কিন্তু কোন না কোনভাবে তার শোগুলো দেখা যাবেই। কিন্তু হায়! অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়। আমাকে তার শো দেখার সুযোগ না দিয়ে তিনি চলে গেলেন অজানার দেশে। খবরটা প্রথম শুনলাম তখন কেমন যেন এক অনুভূতি কাজ করল আমার ভেতরে। এই অনুভূতির সঙ্গে আমি আগে থেকে পরিচিত ছিলাম না।
হায়! মাইকেল জানতে পারলেন না তার এমন একজন ভক্তের কথা। অবশ্য এ জন্য তাকে দোষ দেওয়া যায়না। কারণ আমার মত একজন না কোটি কোটি ভক্ত ছিল তার। যদিও তার নীরবতায় আমার ধারণা ছিল তাকে বোধহয় ভুলেই গেছে তার ভক্তরা। কিন্তু গত ২৫ জুন তিনি মারা যাবার পর বুঝলাম আমার ধারণা ভূল। মাইকেল জ্যাকসন তার স্বমহিমায় ভক্তদেও মনে যে আসন গড়েছেন তা তো ভেঙে পরার নয়। তার মৃত্যুও পর তার সম্পর্কিত তথ্য পেতে উন্মুখ হয়ে ওঠে বিশ্ব। সেই উন্মুখ জাতিকে সামাল দিতে গুগলকে জ্যাকসন সম্পকৃত তথ্য আপডেট করতে হয়েছে ৬৭ হাজার বার, মাত্র ৩ ঘন্টায়! মাইকেলের শুরু থেকেই ঘটিয়েছেন একের পর এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ঘটালেন শেষ পর্যন্তও।
৫০ বছর বয়স কী একটা জীবনের জন্য খুব কম? আমার মনে হয় না। ৫০ বছর একটা মানুষের জন্য অনেক কিছু। মাইকেল চলে গেলেন ৫০-এ। পত্রপত্রিকায় দেখি লেখা হয় অকালেই চলে গেলেন মাইকেল। কিন্তু আসলেই কী তাই? আমার মনে হয় না। মাইকেল জীবনের ৫০ টি বসন্ত কাটিয়েছেন এই পৃথিবীতে। তার নিজের জন্য এই সময় অনেক দীর্ঘ সময়। কিন্তু আমাদের জন্য, তার ভক্তদের জন্য তো এই সময়টা অনেক অনেক কম। আমাদের জন্য তো তার বেঁচে থাকা উচিত ছিল আরো বহুদিন। কিন্তু তবে কেন তার এই নীরব প্রস্থান। জীবনের সঙ্গে চরম বিদ্রুপ কওে জীবন কাটানো এ মানুষটা চলেও গেলেন সবার সঙ্গে এক ধরণের বিদ্রুপ করেই। কিন্তু কেন? কী কষ্ট ছিল তার মনে? সে কষ্টের ভার কী তিনি আর বইতে পারছিলেন না? তাই কী বিশ্বজুড়ে ভক্তদের মাঝে সেই কষ্ট ছড়িয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন পরম শান্তির খোঁজে?
তবে তাই হোক মাইকেল শান্তিতে থাকুক, আমরা ধারণ করে রাখলাম তার কষ্টগুলো।
হে মাইকেল তুমি শান্তিতে থাকো, আমরা কাদছি .......
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের কবিতা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৪



বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, লক্ষ প্রাণে লেখা বিজয়ের
সেই সোনালি অক্ষর,
দিকে দিকে শুনি জয়ধ্বনি বাংলাদেশের নামে, এই
স্বাধীনতা কেনা রক্তের দামে;
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে
পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান;
মার্চের সেই অমর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×