মায়ের বকাঝকা ঘড়ির অ্যালার্মের চেয়েও শক্তিশালী। মূহুর্তেই দুলে ওঠে কল্পরাজ্য। নিমেষে উধাও ঘুমের দৌরাত্ম্য। কিন্তু শরীর তো মানে না। গত রাতের অত্যাচারের ধকল সইতে প্রতি সকালেই তাই বেগ পেতে হয়। চোখ কচলে সামনে মেলে ধরি পৃথিবী। খুটিয়ে খুটিয়ে জেনে নেই খবরাখরর। পত্রিকা ভাঁজ করে গোসলে যাই। শুরু হয় আরো একটা দিন। নতুন আনন্দ- বেদনার কাব্য।
বুকের জ্বালা নিয়ে দিন শুরু হয়। গ্যাস্ট্রিকের এই যন্ত্রনার মধ্যেও একটা মাধুর্য আছে! বেশ ভোগান্তিকর বিষয়। কিন্তু কখনো যদি বা যন্ত্রণা উপশম হয় কোনো কারনে, বুকটা কেমন খালি খালি লাগে! মনে হয় কী যেন নাই!
যেমন লাগে টুপুরকে ছাড়া। সামনে যখন দেখি তাকে, বেশ যন্ত্রণা মনে হয়। এতো আহ্বলাদি যে আমার ধাতে সয় না। কিন্তু ও সামনে না থাকলেই দেবদাস হয়ে যাই যেন! টুপুর বিষয়টা জানে না। জানাতে চাইও না। মেয়েদের সব জানাতে নেই। ওদের ভাব বেড়ে যায়!
কিন্তু বন্ধুদের জানাতে চাই, ওদের জন্য সব করতে পারি আমি। শুধু সময় দিতে পারি না ওদের। কারন আমার সূর্যালোকিত প্রহরগুলোতো বিক্রি করেছি জীবিকার তাড়নায়। সূর্যের আক্রোশ তাই আমাকে দূর্বল করে দেয়। বন্ধুরা তা বোঝে না। স্বার্থপর ভাবে আমায়। আমি তো ওদের বোঝাতে পারি না সব স্বার্থের চেয়ে ওরা বড়ো আমার কাছে। আমার বাল্যবন্ধুরা এখনও বড়ো ছেলেমানুষই রয়ে গেল!
যখন সন্ধ্যা নামে...শেষ হয় সূর্যের স্বৈরশাষন, আকাশের বুকে জাগে টুপুরের মতো নির্মল একটা চাঁদ। জোছনায় মাতাল অন্য আমি তখন জেগে উঠি আমার ভেতর থেকে। সেই আমি - একান্তই আমার আমি। তখন আমিই রাজা। নিয়মের বাঁধন ছিড়ে নির্বিঘ্নে গা ভাসাই উত্তাল স্রোতে। পেঁচার সঙ্গী হয়ে খুঁজে ফিরি নিবিড় আঁধার। ডুব দেই মৌণতায়, মগ্নতায়। নাগরিক সন্ন্যাসী হয়ে মহাজাগতিক চৈতন্যে! জুটে যায় রাতজাগা সঙ্গীর দল। আমরা লৌকিক স্বাভাবিকতাকে বুড়ো আঙুল দেখাই চরম অবহেলায়। আমরা কী কারো ধার ধারি নাকি?
তারপর মধ্যরাত। বিদায় চাঁদ। বিদায় জোছনা। পথ ধরি আপন নীড়ের দিকে। ঘুমন্ত অণুজ, বিরক্ত বাবা, চিন্তিত মা। টুপুরের মূহুর্মূহু ফোনের আর্তনাদ। সব পেছনে ফেলে আমি সাঁতার কাটি ঘোরের সাগরে। কড়া নাড়ি কল্পরাজ্যের দুয়ারে।
এভাবেই তো চলছে। এই তো বেশ! এই তো আমার যাপিত জীবনের সরল আখ্যান। ভালোই তো আছি।
কিন্তু স্বর্গই নাকি সবচেয়ে ভালো? সেখানে নাকি সব পাওয়া যায়। সত্তুর পৃথিবী সমান জায়গা। সত্তুর পিস হুরপরী! শরাবন তহুরা ব্র্যান্ড শরাব তো আছেই! সঙ্গে আরো কতকিছু। কত কিছু মানে সবকিছু। আসলেই সবকিছু পাওয়া যায় স্বর্গে?
আমার মাকে কী পাওয়া যাবে? কিংবা বাবাকে? বা ছোটবোনগুলোকে? টুপুর কী সেখানে মধুর যন্ত্রণা হয়ে বুকে বাজবে সারাদিন? আমার রাতজাগা বন্ধুরা কী থাকবে আমার সঙ্গে? এমন উন্মাতাল প্রহর কী পাবো সেখানে???
বোধহয় না।
আমার ছোট্ট পৃথিবীই তো তাহলে অনেক ভালো। কী করতে আর স্বর্গে যাবো? আমি বারবার ফিরে আসতে চাই এই পৃথিবীতেই। আমার মায়ের দুঃশ্চিন্তা হয়ে। বাবার জন্য বিরক্তি নিয়ে। ছোট্ট বোনের প্রিয় ভাই হয়ে। টুপুরের বেদনা হয়ে। বন্ধুদের রাতের সঙ্গী হয়ে। আমি ঘুমন্ত নগরীর পথে হেঁটে যেতে চাই দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী। ঠিক এখনকার মতো করেই।
এ চাওয়া কী আর পূরণ হবে কখনো? জীবন থেকে আরো একটা বছর হারিয়ে গেল আজ। সময় কতো দ্রুত বয়ে যায়। অন্তের পথে এগিয়ে গেলাম আরো একটা ধাপ।
আহা! সময় ফুরিয়ে আসছে....জীবন ফুরিয়ে আসছে....ঘনিয়ে আসছে বিলীন হয়ে যাওয়ার দিন! কত কম সময় নিয়ে পৃথিবীতে আসে মানুষ। আমার তো এতো কম সময়ে পোষাবে না। চাঁদ দেখেই তো কাটিয়ে দেওয়া যায় এমন একটা জীবন। পৃথিবীর বাকি সৌন্দর্য্য কী উপভোগ করা হবে না? আমি তো করতে চাই। ছুঁয়ে দিতে চাই পৃথিবীর তাবৎ সুন্দরকে।
তাই বারবার ফিরে আসতে চাই আমার চেনা ভূগোলে। আবারো জন্ম নিতে চাই এই পৃথিবীতে। এই আমি হয়েই জন্মাতে চাই প্রতিবার। বারবার.....।
আশা কী পূরণ হবে? এমন মানব জনম কী আর হবে????
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




