somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা যখন পাখা মেলে স্বপ্নে উড়ে গেলাম......

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারাদিন কেমন যেন পাখি পাখি লাগে। মনে হয় হাত দুইটা পাখনা হইয়া গেছে। বাতাসে মেললেই আকাশের নাগাল পাইয়া যাবো। আমার কথা শুইনা বন্ধু সজীব কইল, আকাশ ছোঁয়া কী এতোই সহজ!
সজীব সবসময় এইসব ফালতু দার্শনিক মার্কা কথা বইলা আমাদের স্বপ্নগুলা মলিন কইরা দেয়। এই পোলাটার নাম যে কে সজীব রাখছিলো! ওর মধ্যে তো কোনো সজীবতা দেখি না।
তা না থাকুক। কিন্তু আমার আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন! এখনও তো আকাশ ছোঁয়া হইল না। যেমন রাজপুত্র হওয়ার স্বপ্নটাও পূরণ হয় নাই। রূপকথার রাজপুত্র হওয়ার জন্য কতোদিন মধ্যরাতে ঘর ছাড়ছি। আমি তো অমলকান্তির মতো মহান না। তাই রোদ হইতে চাই নাই। রোদ হইয়া লাভ কী! আমি তো রাজপুত্র হইতে চাই। যখন যা ইচ্ছা তাই করুম। জাগতিক কোনো চাওয়াই আর অপূর্ণ থাকতে দিমু না। পঙ্খীরাজে চইড়া মেঘের রাজ্যে গেজাইতে যামু। ভাবই আলাদা!
আহারে আমার স্বপ্ন! কোনোটাই পূরণ হইলো না। সাকিব পাশ থেইকা স্বান্তনা জানায়া কইল, আরে ব্যাটা স্বপ্ন তো পূরণ হওয়ার জিনিষ না। দেখার জিনিষ। আমগো এলাকার আইরিন রাস্তায় বাইর হইলেই আমরা ড্যাবড্যাব কইরা তাকায় থাকতাম মনে আছে তোর?
ইদানিং কথাবার্তা কইতেও মজা লাগে না। মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই, মনে আছে।
মনে না থাইকাই বা উপায় কী! এই আইরিনের লাইগা কী না করসি। স্কুল পালায়া গার্লস স্কুলের সামনে গিয়া দাঁড়ায়া থাকতাম। পুলিশ দৌড়ান দিতো। মাঝেমধ্যে লাঠির বাড়িটাড়িও খাইসে আমাদের দুই একটা বন্ধু। সেইটা অবশ্য কেউ স্বীকার করে না এখনও। যেমন স্বীকার করে না আইরিনের প্রতি গোপন ভালোবাসার কথাটা। দশ পনেরোজন একসাথে স্কুল পালাইতাম। উদ্দেশ্য গার্লস স্কুল ছুটি হইলে আইরিনকে দেখা যাইবো। স্কুল থেইকা বাইর হইয়া আমাগো রাজকন্যা টুপ কইরা গিয়া বাপের দামি গাড়িতে উঠতো। আমরা তখন তীর্থের কাক। তৃষ্ণার্ত চোখে তাকায়া থাকতাম। আইরিন তো পাত্তাই দিতো না। মাঝেমধ্যে যদি আমাগো দিকে ভুলে তাকায়া ফালাইতো, সেইটা নিয়াই আমগো আহাদের শেষ আসিলো না।
আইরিনরে এক নজর দেখার শান্তিটা পরেরদিনই যন্ত্রণা হইয়া যাইতো। কারন স্কুল পালানোর ঠেলা বুঝতাম পরের দিন। ইশ্! শালার রাস স্যারের বেত তো বেত না। সাাৎ চাবুক। আমরা হইয়া যাইতাম বেয়াড়া নীল চাষী, আর রাস মানে আমাদের মনির স্যার নীলকর হইয়া আমাদের পিঠে নীল নকশা আঁইকা দিতো।
এইখানেই শেষ না। এই নীলনকশা বাসায় ধরা খাইলে আর যায় কই! রীতিমতো বজ্রপাত ঘটতো পিঠে। এখনও মাঝেমাঝে ব্যথা লাগে!
তবু সেই আইরিনের জন্য আমাদের বুক ভরা ভালোবাসা। আমগো এলাকাতেই থাকতো মেয়েটা। বাইরে বাইর হইতো না খুব একটা। বাড়ির ছাদেই খেলতো। আমরা পাশের কোনো ছাদে উইঠা তাকায়া থাকতাম। তাতেও যন্ত্রণা। যেই ছাদে উঠছি, সেই ছাদের মালিকরা প্রায়ই দাবড়ানি দিতো। আহারে সেই দিন!
আমরা এতোগুলা বন্ধু মেয়েটারে পছন্দ করতাম। ভালোবাসতাম। যদিও এখন কেউ স্বীকার করি না যে সবাই তারে ভালোবাসতাম। যাই হোক, আমরা সবাই জানতাম আইরিন আকাশের চাঁদ। আর আমরা হইলাম বামন! বামন হইয়া চাঁদ ছোঁয়া যায়না জাইনাও হাত উঁচা কইরা লাফাইতাম, যদি নাগাল পাওয়া যায়!
আমার গুরু হাইস্কুলের বড়ো ভাই কইছিলো, নিজের ব্যর্থতা কখনো প্রকাশ করবি না। সবসময় ঢাইকা রাখার চেষ্টা করবি। একবার যা কইবি তাই। সেইটা ভুল হইলেও ঠিক প্রমাণের চেষ্টা করবি। এই চেষ্টা করতে গিয়া কবে জানি, কাজী নজরুলরে নকশী কাঁথার মাঠের লেখক বানায়া টিকটিকি ম্যাডামের হাতেও মাইর খাইস। সেই মাইরটা অবশ্য আনন্দদায়কই আছিলো। ম্যাডাম টিকটিকির মতো শুটকা টাইপের আছিলো তো। মাইরে ব্যথা লাগে নাই।
ব্যর্থতা ঠাইকা রাখতে আমরা এখন আইরিনরে ভুইলা থাকতে চাই। কিন্তু সম্ভব হয়না। আমরা টাইনাটুইনা মেট্রিক পাশ করলাম। আহা, কী আনন্দ আকাশে- বাতাসে...। সব আনন্দ মাটি হইয়া গেলো। প্রেমিকের সাথে অভিমান কইরা সেইদিনই আÍহত্যা করছিলো আইরিন। আহারে আইরিন। আমাদের মতো প্রেমিকগুলারে তার চোখেই পড়ে নাই। আমরা তো তারে মাথায় তুইলা রাখতে চাইসিলাম। সে কী না গেল এমনজনের কাছে, যে তার মর্ম বোঝে নাই। হায়!
তবে আমি যে সেদিন একটু আনন্দিত হই নাই, এইটা বলা ঠিক হবে না! ভাবা যায়, যে মেয়ের জন্য নিজেরে উৎসর্গ করে দিতেও রাজি ছিলাম। তার মৃত্যুতে আনন্দবোধ করা যায়! অস্বাভাবিক কিছুই না। জীবিত অবস্থায় যে আইরিনের আশেপাশে যাইতে পারতাম না। দূরে দাড়ায়া দেখতাম খালি। মরে যাওয়ার পর সেই আইরিনের অনেক পাশে গিয়া দাঁড়াইছিলাম। আলতো করে তার কপালটাও ছুঁয়ে দিয়েছিলাম! সেই পরশের কথা মনে পড়লে আজও শিউরে উঠি!
সাকিব আবার বয়ান শুরু করলো, ধর আইরিনরে পামু না জানতাম। তারপরও তার পিছে ঘুরতাম। তারে পাওয়ার চিন্তাও অবশ্য কেউ করতো নাকি জানি না। আমি করতাম না।
এই মধ্যরাতের ঘোর লাগা নগরের পথে বসে এইসব প্যাঁচাল ভালো লাগছিল না মিলনের। সে খেঁকিয়ে উঠল, ওই চোদনা। কোন বালের প্যাচাল শুরু করছোস! ও কইতাসে স্বপ্ন কথা। তুই গেসোস গা আইরিনে। এইটা হইলো।
এই লাইগাই তোরা আসলে জীবনে কিছু করতে পারলি না। দুনিয়ার সবকিছুই একটা আরেকটার লগে গিরিঙ্গি পাকানো।
সজীবের উপরে হঠাৎ জীবন বাবু ভর করলেন। সজীব গলায় একটা গাম্ভীর্য আনার চেষ্টা কইরা কইলো, কে হায় হƒদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে...
জীবনানন্দ দাশের মতো একটা কবি। কী কবিতাই না লিখসে! সেই কবির কবিতা আমাদের সজীবের কণ্ঠে কেমন চিকার মতো মনে হইলো। আমি ঝাড়ি দিয়া কইলাম, যেইটা পারোস না সেইটা করতে যাস কেন?
কবীর এতোন চুপ করেই ছিল। আমাদের সঙ্গে কথায় যোগ দেওয়ার চেয়ে নতুন ক্যানের ছিপি খুলতেই বেশি আগ্রহি। সেই আগ্রহ দমিয়ে রেখে সে বলল, যেইটা পারি সেইটা তো পারিই। যেইটা পারি না সেইটাই তো করার বিষয়।
হঠাৎ কইরা কেউ কথা খুঁইজা পাইলো না। সুযোগ পাইয়া সাকিব আবার পুরনো প্যাঁচালে ফিরে গেল, স্বপ্ন হইলো গিয়া আইরিনের মতোন। বুঝছোস?
মিলন আবার খেঁপে উঠল। সেটাই স্বাভাবিক, আইরিনের জন্য সেই সবচেয়ে বেশি উচাটন ছিল কীনা! সে সাকিবরে বলল, তুই কিসের লগে কী মিলাইলিরে?
সাকিব দাঁত কেলিয়ে বলল, স্বপ্ন পূরণ হবে না, তবু দেখতে হবে। কারন স্বপ্ন দেইখাই তো মানুষ বাঁইচা থাকে।
আসলেই তো! ঘটনা তো সত্যিই মনে হইতাসে। আমরা সবাই স্বপ্নে ডুবে গেলাম।

[ইফতারের আগে কিছু ভালো লাগতেসিলো না। কী বুইঝা এই লেখাটা লেখলাম। কিন্তু পড়তে ইচ্ছে করে নাই। এইটা একবার কাটছাট করা উচিত। কিন্তু কেন যানি কাটছাট করতেও ইচ্ছে করতেসে না।]
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের কবিতা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৪



বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, লক্ষ প্রাণে লেখা বিজয়ের
সেই সোনালি অক্ষর,
দিকে দিকে শুনি জয়ধ্বনি বাংলাদেশের নামে, এই
স্বাধীনতা কেনা রক্তের দামে;
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে
পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান;
মার্চের সেই অমর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×