somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আয়রে আমার ছেলেবেলা...আয়রে ফিরে আয়........

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আম্মা মার্কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় বারবার সতর্ক করে দিতেন, `কোনো জিনিষ নিয়ে গো ধরা যাবে না। যেটা কিনে দেবো, সেটা নিয়েই খুশি থাকবা। ঠিক আছে?'
মোটেই ঠিক নাই। আমার বন্ধুদের মতো আমিও নিজের ইচ্ছামতো জামা কাপড় কিনতে চাইতাম। কিন্তু আম্মা যেসব কিনে দিতেন সেগুলা আমার পছন্দ ছিল না। কিন্তু এই কথা বলা যাবে না। তাই মুখ শক্ত করে বহু কষ্টে বলতাম, `ঠিক আছে।'
বাংলাদেশের হাজারো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের মতো ঈদ উপলক্ষে আমার জন্যও বরাদ্দ করা হতো এক জোড়া বাটার স্যান্ডেল। যেই স্যান্ডেল দেখা মাত্রই আমার বমিভাব উদ্রেগ হতো। কিন্তু আম্মার ভয়ে কিছুই বলেত পারতাম না। একবার একটা জুতা খুব পছন্দ হইল। কান্না কান্না কন্ঠে আম্মাকে বললাম। তিনি আমার কান্নায় কান দিলেন। চোখ লাল করে বললেন, `মার্কেটে ঠোকার সময় কী বলেছিলাম মনে নাই।'
আমি উত্তর দেই না। পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকি। আম্মা বলেন, `চলো।'
আমার পা এগোয় না। মার্কেটে ভীষণ ভীড়। এরমধ্যেই আম্মা ঠাশ্‌ করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন গালে। আমি চুপচাপ তার পিছু হাঁটা ধরলাম। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। সামলানোর চেষ্টা করছি তবু হেচকি উঠছেই। আম্মা বারবার ধমক দিচ্ছেন, `থামো।'
আমি থামতে পারিনা। মার্কেট সেরে বাসায় যাই। বিকেল গড়িয়ে রাত হয়। আমার কান্না থামেনা। আব্বা বাসায় এসে দেখেন আমি কাঁদছি। কারন জিজ্ঞেস করলেন। আমি উত্তর দিতে পারলাম না। আব্বাকে দেখেই আমার কান্না আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আম্মা ঘটনা বললেন। আব্বা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, `এখন গিয়ে দোকান চিনতে পারবে?'
আমি অবাক চোখে আব্বার দিকে তাকাই।
আব্বা আবার জিজ্ঞেস করেন, `যে দোকানের জুতা পছন্দ হয়েছে, সেই দোকানটা মনে আছে?'
আমি বহু কষ্টে কান্না থামিয়ে বলি, `আছে।'
ঘন্টাখানেক পর আমি বাসায় ঢুকছি। আমার মুখভর্তি হাসি। চোখে আনন্দের ঝলক। একহাতে পছন্দের সেই জুতা।অন্য হাতে আব্বার হাত ধরে আছি। জুতার খালি প‌্যাকেট আব্বার হাতে। আমি প‌্যাকেট ছাড়া জুতা নিয়েই বাসায় গেলাম। রাতে ঘুমালাম জুতা জড়িয়ে ধরে।
পরদিন নামায পড়তে গিয়ে আমার সেই জুতাগুলো চুরি হয়ে গেল। তারপর আমার সে কী কান্না!.....
কাল মার্কেটে গিয়ে সেই দিনগুলো মনে পড়ে গেল। পছন্দের পোষাক না কিনে দেওয়ায় একটা পিচ্চি মার্কেটের মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। পিচ্চির মা বেশ রাগী রাগী কণ্ঠে শাষাচ্ছেন পিচ্চিটাকে।
আমি শৈশবে হারিয়ে গেলাম। এখনও আমার আম্মা আমার জন্য ঈদের জামা কাপড় জুতো কিনে আনেন। নিজের ইচ্ছেমতোই কিনে আনেন। আমি সঙ্গে যাই না। আম্মা যা আনেন এখন আমার তাই পছন্দ হয়। নিজেও কিনি, কিন্তু ঈদের দিন কেবল আম্মার দেয়া কপড়ই পড়ি।
কাল কী মনে হলো কী জানে। নিজের জন্য কিছুই কিনলাম না। সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিনবো না। আজ রাতে আম্মার সঙ্গে মার্কেটে যাবো। আম্মা যা কিনে দেবেন তাই পড়ে ঈদ কাটাবো। আমি আবার শৈশবে ফিরে যেতে চাই। আজকে কী আম্মা মার্কেটে ঠোকার আগে সেই সাবধানী বাণী শোনাবেন আমাকে? `কোনো জিনিষ নিয়ে গো ধরা যাবে না। যেটা কিনে দেবো, সেটা নিয়েই খুশি থাকবা। ঠিক আছে?'
আমি এখন আর অনিচ্ছা না, নিজের ইচ্ছাতেই বলতে চাই, `ঠিক আছে।'
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের কবিতা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৪



বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, লক্ষ প্রাণে লেখা বিজয়ের
সেই সোনালি অক্ষর,
দিকে দিকে শুনি জয়ধ্বনি বাংলাদেশের নামে, এই
স্বাধীনতা কেনা রক্তের দামে;
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে
পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান;
মার্চের সেই অমর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×