বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে নাশকতার আশংকা করা হচ্ছে। দেশীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নাশকতা ঘটতে পারে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেয়া ক্রিকেটদল, সাংবাদিক, অতিথি এবং আইসিসি’র কর্মকর্তারা হামলার শিকার হতে পারেন। বিমান বন্দর, হোটেল, ক্রিকেট ভেন্যু, শপিংমল এবং চলাচলের রাস্তায় এ নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে।
বিদেশি ক্রিকেট দল এবং অতিথিদের সহযোগিতায় থাকা দেশিয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমেও নাশকতা মূলক কর্মকান্ড ঘটানো হতে পারে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ১৩টি সুপারিশ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারেরও তাগিদ দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রথমবারের মতো ভারত ও শ্রীলংকার সাথে যৌথভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজন করছে বাংলাদেশ। ১৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় ষ্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ ৮টি মূল ম্যাচ ও ৪টি প্র্যাকটিস ম্যাচ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানে ভারত, আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, কানাডা ও পাকিস্তানসহ ৮টি দেশ অংশগ্রহণ করবে। এতে কোন কোন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান পর্যায়ের ভিভিআইপি এবং বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক ও দর্শক আসবেন।
প্রতিবেদনে বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে তিন ধরনের হামলা হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে দেশিয় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে যুদ্ধাপরাধী, জেএমবি, হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ, পলাতক বিদ্রোহি বিডিআর সদস্য, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক আসামি, জেএসএস, ইউপিডিএফ, হরকাত উল জিহাদ, সর্বহারা, বিরোধী রাজনৈতিকদল এবং উগ্র ইসলামী রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে নাশকতা হতে পারে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে গোয়েন্দারা ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার স্থানীয় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠিকে চিহ্নিত করেছে। তারা স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের মাটিতে নিজ নিজ দেশ কিংবা অন্য বিদেশি রাষ্ট্রের ক্রিকেটদল ও সংশ্লিষ্টদের উপর হামলা চালাতে পারে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির সাথে জড়িত সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে-ভারতের উলফা, ইউএনএলএফ(মনিপুর) এবং পাকিস্তানের লস্কর ই তৈয়বা ও আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্স অন্যতম।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন সমূহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে নাশকতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বড় বড় দেশে তারা হামলা চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশের মতো কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশে বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান তাদের টার্গেট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালে নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে তারমধ্যে সম্ভাব্য স্থানগুলো হলো-শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ঢাকার হোটেল সোনারগাঁও, শেরাটন, রেডিসন, চট্টগ্রামের পেনিনস্যূলা ও হোটেল আগ্রাবাদ, বিমান বন্দর থেকে হোটেলে এবং হোটেল থেকে ভেন্যু এবং গুরুত্বপূর্ণ শপিংমল অন্যতম।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বাংলাদেশে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো- বিমান বন্দরসহ আকাশ, স্থল ও নৌ সীমান্তে ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টে সন্দেহভাজন বিদেশি নাগরিকদের আগমন ও বহির্গমনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া। নির্দিষ্ট হোটেল/ভবনগুলোতে সিসি টিভি স্থাপন করা।
বিমান বন্দর থেকে হোটেলে এবং হোটেল থেকে মাঠে যাওয়ার সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ। ভেন্যুসমূহ আগে থেকেই নজরদারিতে রাখা এবং কেউ যাতে বিস্ফোরক দ্রব্য স্থাপন করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। ভেন্যুর পর্শ্ববর্তী ভবন সমূহে নিরাপত্তা জোরদার এবং দর্শকদের মাঠে প্রবেশের ক্ষেত্রে আর্চওয়ে এবং হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশী করা।
টুর্নামেন্ট চলাকালে কোন রাজনৈতিক দল বা সংগঠন রাস্তা অবরোধসহ কোন কর্মসূচি পালন না করতে পারে তা নিশ্চিত করা। বিদেশি খেলোয়ার ও অতিথিদের সাথে আগত গাইডদের প্রাক-পরিচয় যাচাই-বাছাই করা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নাশকতা চালাতে পারে এমন সব ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের নেতাদের উপর বিশেষ নজর রাখা। যে কোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স, অগ্নিনির্বাপক গাড়ি ও এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা। স্বাগতিক দেশ হিসেবে জয়-পরাজয়ের প্রতিক্রিয়া হিবেবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা প্রতিহত এবং ট্রাফিক বিভাগের সাথে সমন্বয় করে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা।
প্রতিবেদনে সর্বশেষ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন এবং নিরাপত্তা ডিউটিতে নিয়োজিত সকল সংস্থার সদস্যদের কার্যক্রমের সমন্বয় নিশ্চিত করা।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নাশকতার আশংকা : দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র তৎপর
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বিজয়ের কবিতা

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, লক্ষ প্রাণে লেখা বিজয়ের
সেই সোনালি অক্ষর,
দিকে দিকে শুনি জয়ধ্বনি বাংলাদেশের নামে, এই
স্বাধীনতা কেনা রক্তের দামে;
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে
পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান;
মার্চের সেই অমর... ...বাকিটুকু পড়ুন
বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...
বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।
১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।