somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শবেবরাত

১১ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শবেবরাত

'ঐ সকল নতুন সৃষ্টি, যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত ছিল না'৷ শারঈ অর্থে-

'যে ব্যক্তি আমাদের শরী'আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত'৷১ তিনি আরও বলেন, ... 'তোমাদের উপরে
মুত্তাফাক্ব আলাইহ, আলবানী, মিশকাত (বৈরুতঃ ১৯৮৫) হা/১৪০৷
পালনীয় হ'ল আমার সুন্নাত ও আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত৷ তোমরা উহা কঠিনভাবে অাঁকড়ে ধর এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধর৷ ধর্মের নামে নতুন সৃষ্টি হ'তে সাবধান! নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ'আত ও প্রত্যেক বিদ'আতই গোমরাহী'৷ নাসাঈ শরীফের অন্য ছহীহ বর্ণনায় এসেছে 'এবং প্রত্যেক গোমরাহ ব্যক্তি জাহান্নামী'৷২ খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত মূলতঃ রাসূলেরই সুন্নাত৷ কারণ তাঁরা কখনোই রাসূলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুমোদনের বাইরে কোন কাজ করতেন না৷ যুগে যুগে বৈষয়িক প্রয়োজনে সৃষ্ট বিভিন্ন আবিষ্কার সমূহ যেমন সাইকেল, ঘড়ি, চশমা, মটরগাড়ী, উড়োজাহায ইত্যাদি বস্তুসমূহ আভিধানিক অর্থে বিদ'আত বা নতুন সৃষ্টি হ'লেও শারঈ পরিভাষায় কখনোই বিদ'আত নয়৷ তাই এগুলোকে গুনাহের বিষয় বলে গণ্য করা অন্যায়৷ অনেকে এগুলোকে অজুহাত করে ধর্মের নামে সৃষ্ট মীলাদ, কি্বয়াম, শবেবরাত, কুলখানি, চেহলাম ইত্যাদিকে শরী'আতে বৈধ কিংবা 'বিদ'আতে হাসানাহ' বলে থাকেন, যেটা আরো অন্যায়৷ বরং বিদ'আতকে দু'ভাগে ভাগ করাই আরেকটি বিদ'আত৷
প্রচলিত শবেবরাত
আরবী শা'বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে সাধারণভাবে 'শবেবরাত' বা 'লায়লাতুল বারাআত' বলা হয়৷ 'শবেবরাত' শব্দটি ফারসী৷ এর অর্থ হিস্সা বা নির্দেশ পাওয়ার রাত্রি৷ দ্বিতীয় শব্দটি আরবী৷ যার অর্থ বিচ্ছেদ বা মুক্তির রাত্রি৷ এদেশে শবেবরাত 'সৌভাগ্য রজনী' হিসাবেই পালিত হয়৷ এজন্য সরকারী ছুটি ঘোষিত হয়৷ লোকেরা ধারণা করেন যে, এ রাতে বান্দাহ্র গুনাহ মাফ হয়৷ আয়ু ও রূযী বৃদ্ধি করা হয়, সারা বছরের হায়াত-মউতের ও ভাগ্যের রেজিষ্ট্রার লিখিত হয়৷ এই রাতে রূহগুলো সব আত্মীয়-স্বজনের সাথে মুলাক্বাতের জন্য পৃথিবীতে নেমে আসে৷ বিশেষ করে বিধবারা মনে করেন যে, তাদের স্বামীদের রূহ ঐ রাতে ঘরে ফেরে৷ এজন্য ঘরের মধ্যে আলো জ্বেলে বিধবাগণ সারা রাত মৃত স্বামীর রূহের আগমনের আশায় বুক বেঁধে বসে থাকেন৷ বাসগৃহ ধুপ-ধুনা, আগরবাতি, মোমবাতি ইত্যাদি দিয়ে আলোকিত করা হয়৷
২. আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫; নাসাঈ হা/১৫৭৯ 'ঈদায়েন-এর খুত্‍বা' অধ্যায়৷
অগণিত বাল্ব জ্বালিয়ে আলোকসজ্জা করা হয়৷ এজন্য সরকারী পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়৷ আত্মীয়রা সব দলে দলে গোরস্থানে ছুটে যায়৷ হালুয়া-রুটির হিড়িক পড়ে যায়৷ ছেলেরা পটকা ফাটিয়ে আতশবাজি করে হৈ-হুল্লোড়ে রাত কাটিয়ে দেয়৷ যারা কখনো ছালাতে অভ্যস্ত নয়, তারাও ঐ রাতে মসজিদে গিয়ে 'ছালাতে আল্ফিয়াহ' বা ১০০ রাক'আত ছালাত আদায়ে রত হয়, যেখানে প্রতি রাক'আতে ১০ বার করে সূরায়ে ইখলাছ পড়া হয়৷ তারপর রাত্রির শেষ দিকে ক্লান্ত হয়ে সবাই বাড়ী ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন৷ একসময় ফজরের আযান হয়৷ কিন্তু মসজিদগুলো আশানুরূপ মুছল্লী না পেয়ে মাতম করতে থাকে৷ ১৪ কোটি মুসলমানের এই দরিদ্র দেশে এই রাতকে উপলক্ষ্য করে কত লক্ষ কোটি টাকা যে শুধু আলোকসজ্জার নামে আগরবাতি ও মোমবাতি পুড়িয়ে শেষ করা হয়, তার হিসাব কে রাখে? রকমারি বিদু্যত্‍বাতি, হালুয়া-রুটি, মীলাদ ও অন্যান্য মেহমানদারী খরচের হিসাব না হয় বাদই দিলাম৷ সংক্ষেপে এই হ'ল এদেশে শবেবরাতের নামে প্রচলিত ইসলামী পর্বের বাস্তব চিত্র৷
ধমর্ীয় ভিত্তি
মানুষ যে এত পয়সা ও সময় ব্যয় করে, এর অন্তর্নিহিত প্রেরণা নিশ্চয়ই কিছু আছে৷ মোটামুটি দু'টি ধমর্ীয় আক্বীদাই এর ভিত্তি হিসাবে কাজ করে থাকে৷ ১- ঐ রাতে বান্দাহ্র গুনাহ মাফ হয়৷ আগামী এক বছরের জন্য ভালমন্দ তাক্বদীর নির্ধারিত হয় এবং এই রাতে কুরআন নাযিল হয়৷ ২- ঐ রাতে রূহগুলি ছাড়া পেয়ে মর্ত্যে নেমে আসে৷ মোমবাতি, আগরবাতি, পটকা ও আতশবাজি হয়তো বা আত্মাগুলিকে সাদর অভ্যর্থনা জানাবার জন্য করা হয়৷ হালুয়া-রুটি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, ঐদিন আল্লাহ্র নবী (ছাঃ)-এর দান্দান মুবারক ওহোদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল৷ ব্যথার জন্য তিনি নরম খাদ্য হিসাবে হালুয়া-রুটি খেয়েছিলেন বিধায় আমাদেরও সেই ব্যথায় সমবেদনা প্রকাশ করার জন্য হালুয়া-রুটি খেতে হয়৷ অথচ ওহোদের যুদ্ধ হয়েছিল ৩য় হিজরীর শাওয়াল মাসের ১১ তারিখ শনিবার সকাল বেলায়৷৩
৩. বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত (বৈরুতঃ ১৯৮৫) ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২০১-২৷
আর আমরা ব্যথা অনুভব করছি তার প্রায় দু'মাস পূর্বে শা'বানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে...! এক্ষণে আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলির ধমর্ীয় ভিত্তি কতটুকু তা খুঁজে দেখব৷ প্রথমটির সপক্ষে যে সব আয়াত ও হাদীছ পেশ করা হয় তা নিম্নরূপঃ ১- সূরা দুখান-এর ৩ ও ৪ নং আয়াত-
অর্থঃ (৩) আমরা তো ইহা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে; আমরা তো সতর্ককারী (৪) এই রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়'৷৪ হাফেয ইবনে কাছীর (৭০১-৭৭৪ হিঃ) স্বীয় তাফসীরে বলেন, 'এখানে মুবারক রজনী অর্থ লায়লাতুল ক্বদর'৷ যেমন সূরায়ে ক্বদর ১ম আয়াতে আল্লাহ বলেন,#১৬১৮;্#১৫৮৫;্#১৬১৬;- অর্থঃ 'নিশ্চয়ই আমরা ইহা নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে'৷ আর সেটি হ'ল রামাযান মাসে৷ যেমন সূরা বাক্বারাহ্র ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
অর্থঃ 'আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে রামাযান ব্যতীত অন্য কোন মাসে শা'বানের ন্যায় এত অধিক ছিয়াম পালন করতে দেখিনি৷ শেষের দিকে তিনি মাত্র কয়েকটি দিন ছিয়াম ত্যাগ করতেন'৷২৩ যারা শা'বানের প্রথম থেকে নিয়মিত ছিয়াম পালন করেন, তাদের জন্য শেষের পনর দিন ছিয়াম পালন করা উচিত নয়৷২৪ অবশ্য যদি কেউ অভ্যস্ত হন বা মানত করে থাকেন, তারা শেষের দিকেও ছিয়াম পালন করবেন৷২৫
মোটকথা শা'বান মাসে অধিক হারে নফল ছিয়াম পালন করা সুন্নাত৷ ছহীহ দলীল ব্যতীত কোন দিন বা রাতকে ছিয়াম ও ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা সুন্নাতের বরখেলাফ৷ অবশ্য যারা 'আইয়ামে বীয'-এর তিন দিন নফল ছিয়ামে অভ্যস্ত, তারা ১৩, ১৪ ও ১৫ই২৬ শা'বানে উক্ত নিয়তেই ছিয়াম পালন করবেন, শবেবরাতের নিয়তে নয়৷ নিয়তের গোলমাল হ'লে কেবল কষ্ট করাই সার হবে৷ কেননা বিদ'আতী কোন আমল আল্লাহ পাক কবুল করেন না এবং সকল প্রকার বিদ'আতই ভ্রষ্টতা ও প্রত্যাখ্যাত৷ আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে নিজ নিজ আমল সমূহ পরিশুদ্ধ করে নেওয়ার তাওফীক দান করুন! আমীন!!
২৩. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩৬৷
২৪. আবুদাঊদ, তিরমিযী প্রভৃতি, মিশকাত হা/১৯৭৪
২৫. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৭৩, ২০৩৮৷
২৬. নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২০৫৭৷
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×