কয়েকটি সাম্প্রতিক খবর, আর বাংলাদেশের ভাবমুর্তিঃ ১) ড' ইউনুস কে নিয়ে সরকারের টানা হ্যাচড়া, অতিরিক্ত মনোযোগ ২) লিবিয়া সীমান্তে হাজার বাংলাদেশীর দুরবস্থা, সরকারের উদাসিনতা ৩) সোমালিয়ায় জলদস্যুর কবলে নাবিকেরা, সরকারের অক্ষমতা, বিদেশী সাহায্য কামনা, ৪) উ'ইন্ডিজের কাছে ৫৮ রানে অল-আউট ৫) পাকিস্তান ক্রিকেট এর দুরবস্থা (আয়োজক হয়েও পরদেশে) দেখেও না শিখা, বিদেশী ক্রিকেটারদের আক্রমন। কোনটা বেশী লজ্জাজনক? না সেই উত্তর দেওয়া কঠিন, তবে মনে হয় তুলনামুলকভাবে কম লজ্জার ৪ নম্বর।
কারন ৪ নাম্বারের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রন অনেক কম। ভাগ্য অনেক বেশী ছিনিমিনি খেলতে পারে এখানে। কিন্তু অন্য বিষয়গুলোর দায় আমরা শুধু ভাগ্যের উপর ছাড়তে পারি না। আমরা এখনও মরুভুমিতে আটক শ্রমিক আর নাবিক দের উদ্ধেরের জন্য বিদেশী করুনা চাই। কিন্ত সেই দাতাদেরকেই নাখোশ করে নিজের দেশের গুনীলোকের মান্ সম্মান নিয়েও টানাটানি করি। গ্রামীনব্যাংকের ভালোমন্দ যাচাই করছি না, কিন্তু এতে নিজেদের সম্মান কতটুকু বাড়ছে সেটাই ভাবছি। অন্যরা আমাদের সম্মান দিবে কিভাবে, আমরা নিজেরাই তো আমাদের সম্মান কাদা দিয়ে লেপি রেষারেষি হলে। অথচ সেই আমরাই আবার মান গেল মান গেল বলে চেঁচাই নিছক একটা খেলার ফলাফল নিয়ে। আর তাই সম্মানের ষোলকলা পুর্ণ করি বিদেশী খেলোয়াড়দের গাড়িতে আক্রমন করে। খেলার মাঠে বাঘ পরাজিত, কিন্তু রাস্তায় তো আমরা আছি দামাল ছেলেরা। আমাদের লজ্জা দিলি? এই নে তোদের কপালেও দিলাম কলংকের তিলক। এবার ভাঙ্গা বাসে চড়ে বাড়ি যা! তবে বাঙ্গালীর অতিথিপরয়ায়ণতার সুখ্যাতি, সেটা পরে দেখব নি, আগে মিটাই মনের ঝাল।
নাহ! আমরা শিখিনি এখনো অনেক কিছু। রবি ঠাকুরের হৈমন্তিরা জানতাম এদেশেই বাস করে, তারা মনের দুঃখ চেপে রাখতে পারে ভদ্রতার খাতিরে। হৈমন্তি শুধু গল্পেই পড়লাম আমরা, বাস্তবের দুঃখে পারিনি মুখ চেপে চোখ দিয়ে শুধু এক ফোঁটা জল নিশঃব্দে ফেলতে। বাস্তবে আমরা এখনও চিতকার করি, রাগে চুল ছিড়ি, ফুলের টব ছুড়ে মাড়ি। কিছু ভাংচোর না করে পারি না ভিতরের পাগলা অনুভুতিটা নিবৃত্ত করতে। কিন্তু সবাই তো আর হৈমন্তি পড়েনি। এতো সাধারন মানুষদের কথা, দরিদ্র দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে পড়ালেখা তো সবার ভাগ্যে হয় না, সবার কাছ থেকে তাই হৈমন্তির শিক্ষা আশা করাও যায় না। কিন্তু সরকার তো শিক্ষিত। তারা যদি আরেকটু মনোযোগী হতো দেশের মান সম্মানের ব্যাপারে, নাগরিকরাও হয়তো আরো ভালো বুঝতে পারতো, আরও সুশীল আর মার্জিত হতো। কি করলে দেশের মান সম্মনা বাড়ে বা কমে সেটা যদি আমরা আমাদের নেতা নেত্রীদের জীবনী/ কার্যকলাপ থেকে না শিখতে পারি, তবে সাধারন মানুষ শিখবে কোথা থেকে। টিভি, টক শো, মিটিং, মিছিল, সভা, সংবাদ সম্মেলন সব খানে যদি দেখতে হয় একে অন্যকে অপদস্থ করার নাটক, তবে আমাদের আম জনতার মন মানসিকতা এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসবে কোন শক্তিতে?
একটা দুষ্টচক্রে পড়ে যেন আমরা অসহায়। কোথা থেকে এই বৃত্তের অবসান করা যাবে, কে আগে এগিয়ে আসবে? আপনি আগে ভালো হন তাহলে আমি ভালো হবো, সবাই যদি একথা বলে তবে ১৬ কোটি মানূষের একটা বিশাল বৃত্ত হবে, মেয়েদের বালিশ খেলার মতো, যে বালিশ শুধু ঘুরতেই থাকবে, খুজে পাবে না সেই প্রথম ত্যাগ স্বীকার করতে চাওয়া হাত জোড়া। কখনও থামবে না সেই ঠেলাঠেলির বাজনা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।ঈশ্বর যেন আমাদের সরকারের সুমতি দেন! ইংলান্ডের জাতীয় সঙ্গীতের একটা মাহাত্ম আছে। হয়ত এত বেশী বিপদ আপদ (যার অনেকটাই অবশ্য তাদের নিজেদের তৈরী করা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ বিগ্রহের কারনে) মোকাবিলা করতে হতো দেখেই তারা প্রার্থনা বাণী দিয়ে বেঁধেছে ওদের জাতীয় সঙ্গীত। আর সেটা এখন লোকজনের কথাবার্তায়ও জায়গা করে নিয়েছে আপন ছন্দে। ছোটখাট বিপদ, কোন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতা, খেলা এসব উপলক্ষে লোকজনের কথবার্তায় এটা প্রচলিত হয়ে গেছে, God save the Queen! আমার মনে হয় এর একটা বাংলাদেশী সংস্করণ বের করা এবার জরুরী হয়ে পড়েছে। আল্লাহ! বাংলাদেশকে বাঁচাও। অথবা, আঞ্চলিক ভাষায়, আল্লাহ! বাংলাদেশরে তুমি দেইখো!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




