
ওদের মারবে না তো কি করবে? ওরা সব ফকিন্নির জাত, অজাত, অচ্ছ্যুত। বাংলাদেশ থেকে বর্ডার ক্রস করে ভারতে গেছে, আসামে গেছে। ওখানকার আদিবাসীদের ভিটে, জমিতে ভাগ বসাচ্ছে।ওরা পারে শুধু জ্যামিতিক হারে বাড়তে, আর ঝামেলা বাড়াতে। ওরাই তো বার্মাতে গিয়ে রোহিঙ্গা হয়েছে।ওদের কে কেন আদিবাসীরা স্বীকৃতি দেবে? তাদের কি ঠেকা পড়েছে? স্বীকার করি আর নাই করি, ওরা তো বাংলাদেশ থেকেই গেছে। ওদের জন্য কি বার্মার বৌদ্ধরা সহানুভুতি দেখাবে? ওরা তো বাঙ্গালী, তাঁর উপর আবার মুসলমান। ওরা তো জাতেই টেররিস্ট। ওদের জন্য কারা সহানুভুতি দেখাবে? ভারতের বাঙ্গালীরা? আরে ওরাই তো বাংলাদেশ থেকে তাদেরকে ভিটেছাড়া করেছে। উচ্চবিত্তের হিন্দুরা, তারা থাকেন ওপারে। তাদের চোখে মুসল্মান হল নিম্নবিত্তের হিন্দু থেকে যারা ধর্মান্তরিত হয়েছে। ধর্মের জাল দিয়ে দেশ ভাগ করার পর বাংলার অবস্থা যেটা হয়েছে, তা হল, কুলীন বা ধনাঢ্য হিন্দু যারা ছিলেন তারা সব ওপারে চলে গেলেন। বাংলাদেশটা শুধু রইল নিম্নবিত্তের মুসলমানদের, আর অবশিষ্ট হিন্দু যারা মাটির টানে অথবা অন্য কোন কারনে দেশ ত্যাগ করতে পারেনাই। নাহ সবাইকে নিম্নবিত্তের লোক বানানো আমার কম্ম নয়, আর এটাও বলতে আসি নাই যে, এদেশে উচ্চবিত্তের কোনও মুসল্মান নাই, বা মুসলমানরা সবাই নিম্নবিত্তের লোক। আসলে আমার মতামত এখানে থোরাই বিবেচনাযোগ্য। যা বলছি, তা হল মোটা দাগে অন্যদের চোখে বাংলাদেশের মূল্যায়ন। আমাকে গালি দেন আর যাই করেন, এদেশের বেশীর ভাগ মানুষ যে চাষা ছিল সেটা তো অস্বীকার করার কিছু নেই। এক অর্থে তো পৃথিবীর সবাই চাষা, কিন্তু সেটা বড় কথা নয়, কথা হল বাংলাদেশীরা সব চাষা আর অশিক্ষীত ছিল। আর নিম্নবিত্তের হিন্দুদের মুল্যায়ন কুলীন সম্প্রদায়ের কাছে কেমন সেটাও কাউকে বুঝিয়ে বলার কিছু নেই। আর এদেশের মুসল্মানরাও দেখেছে ’৭১ এ, মুসলিম ভাইদের চোখে আমাদের অবস্থান কিরকম। যারা তখনও বা এখনও বুঝেন নাই রাজাকার বা আলবদরের আবেশের কারনে অথবা নিতান্তই সাদাসিধে নিরীহ কিন্তু প্রচন্ড ধর্মপরায়ণতার কারনে, যারা আজো মুসল্মান ভাতৃত্বের হাই তুলতে তুলতে রঙ্গীন স্বপ্ন দেখেন তারা আরব দেশে চাকরি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন, অথবা নিদেনপক্ষে কয়েক দশক আগের পাকি ভাইদের সান্নিধ্যে থেকেও জানতে পারেন মুসলনান হিসেবে বাংলাদেশীরা কতটা উচ্চ মর্যাদায় আসীন তাদের চোখে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য, বাংগালী মুসল্মানের কোনো মর্যাদার আসন নাই তা সে হিন্দু, বৌদ্ধ অথবা মুসল্মান যার কাছেই যান না কেন। তাঁর উপর এরা হল ফকির মিস্কীন। ভাগ্যের সন্ধানে শুধু এদেশ ওদেশ ঘুরে বেড়ায়। আন্দামানের সমুদ্রে ধরা পড়ে, ভুমধ্যসাগরে ধরা পড়ে ডুবতে ডুবতে মরার সময়, তুরস্কের বর্ডারে, গ্রীসের বর্ডারে ধরা পড়ে লুকিয়ে ইউরোপে ঢুকার সময়, গ্রীসের ময়দানে দাবড়ানি খায় পুলিশের, ইতালির সমুদ্র সৈকতে দাবড়ানি খায় অবৈধ ফেরী করার সময়, পাস্পোর্ট ছাড়া লুকিয়ে থেকে কালো কাজের আশায় ধন্যা দেয় ব্রিটেন, আমেরিকা, স্ক্যান্ডিনেভিয়ায়, বৈধ ভিসার অভাবে মালিকের/কর্মদাতার সকল নির্যাত্ন অত্যাচার মাথা পেতে সয়, পুলিশের পিটুনি খায়, জেলের ভাত খায়, পাকিস্তানের জেলখানাতে বন্দী জীবন কাটায় বিনা বিচারে ২৫ বছর, বিসএফ এর প্যাদানি খায়, ন্যাংটা হয়ে মার খায়, তারে ঝুলে মারা যায়, গুলিতে প্রাণ হারায়। সত্য, এটাই বাংলাদেশীদের জীবন। স্যুট টাইয়ের আড়ালে মুখ লুকিয়ে লাভ নেই, নিজেকে বড়লোক ভেবে এসব থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে লাভ নেই, বাংলাদেশের ভেতরে কারা কিভাবে বড়লোক হয়েছে দেশের হতচ্ছাড়া গরীব লোকেরা তা সব জানে। শুনুন, বাংলাদেশটা আদতে যাদের তা হল এই হতদরিদ্র নিম্নবিত্তের অচ্ছ্যুত লোকগুলোর। আর যারা হালফ্যাশনের কেতাদুরস্ত আলালের ঘরের দুলাল, ক্ষমতাশীল, বিত্ত বৈভবের অধিকারী, অথবা কুলীন সপ্রদায়ের দাবীদার, তারা বাংলাদেশী বলে দাবি করলেও আদতে তা না। তারা আসলে নিম্নবিত্তের লোকগুলোর চেয়েও অধম। কারন তারা হলো নিজ বৃক্ষে জন্মানো পরগাছা, তারা বৈভব করেছে ওই হতচ্ছাড়া নিম্নবিত্তের লোকগুলোকে ঠকিয়ে, ওদের শোষন করে, ওদের অধিকারকে পদদলিত করে। আর তাই অস্বীকার করার অজুহাত খুজবেন না। ভারতের আসামে, বার্মার আরাকানে, পাকিস্তানের জেলে, লেবাননের কাপড়কলে, মধ্যপ্রাচ্যের মরুভুমিতে, লিবিয়ার বর্ডারে, গ্রীসের চত্ত্বরে যেই লোকটি বাংগালী মুসল্মান হিসেবে সৌভাগ্যের সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে প্যাদানি খাচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে সে আসলে বাংলাদেশী। ভারতের ট্রেনে খুঁজে খুঁজে মুসল্মান হিসেবে বের করে হত্যা করা হয়েছে তারা আসলে কোথাকার জানি না। কিন্তু তাদেরও ইতিহাসও বের করে যেন দেখান যায় যে এরা বাংলাদেশ থেকেই ভারতে গিয়েছে। বাংগালী মুসল্মান মানে তো বাংলাদেশের সেই সব হতভাগা অনুপ্রবেশকারীই। একে ত অনুপ্রবেশকারী মানে স্বার্থান্বেষী, অপরদিকে মুসলমান মানে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী। হ্যা মোটা দাগে এটাই তো বাংগালী মুসল্মানের মুল্যায়ন। তো ভারত ওদের মারবে না তো কি করবে? ওদের খুঁজে খুঁজে মারো, শুধু ট্রেন কেন বাসা বাড়ীতে গিয়ে খুঁজে বের করে করে মারো। তবে একটা অনুরোধ, মারার পর তাদের সবার গায়ে যেন বাংলাদেশের পতাকা লটকিয়ে দেয়া হয়, অথবা বড় বড় করে লেখা হয় , বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী। অন্তত তাতে যদি বাংলাদেশী লোকজন জাগে। বাংলাদেশের সরকার জাগে।
সিরিয়াস্লি, সিরিয়াসলি বলছি, আপনারা জাগুন! আর কয়েক বছর পর যদি দৈবক্রমে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব সত্য হয়, আর বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল সব সাগর গর্ভে তলিয়ে যায়, তাহলে দেখবেন আরো হাজার হাজার লাখ লাখ লোক ভেলায় করে আন্দামানে ধরা পড়বে, বিএসএফ সারা বাংলার বর্ডার কাঁটাতারে ঘিরেও আটকাতে পারবে না এইসব হতচ্ছাড়া বর্ডার ক্রস করা, সীমা লংঘনকারীদের। ফেলানীদের মারতে তখন হয়ত বিএসএফ কে বন্দুক ছেড়ে কামান ধরতে হতে পারে। সিরিয়াস্লি! বাংলাদেশ, ওয়েক আপ! ওয়েক আপ এন্ড সি...ইউর ল্যান্ড ইজ ওভারলি পপুল্যাটেড। এদেশের সাধ্যের সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে। আর চোখ বুজে উটপাখি হয়ে সত্য লুকানো যাবে না। সত্য বড় কঠিন হয়ে মস্তকে আঘাত হেনে যেদিন তোমাদের ঘুম ভাঙ্গাবে, সেদিন কিছুই আর করার থাকবে না। এখন সময় এসেছে সত্যকে স্বীকার করে বাংলাদেশের জন্য কিছু করার। সিরিয়াস্লি, বাংলাদেশ সরকার, দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দিন। দেশের লোকজনের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের দিকে নজর দিন। দল, মত, গোত্র, জাত ছেড়ে দিন, সরকারী, বিরোধী সবাইকে বলছি উপনিবেশিক কায়দায় দেশ শাসন বা শোষন করার কথা ছেড়ে দিন, পিঠ এখন দেয়ালে। এসব নিম্নবিত্তের লোকদের জন্য এখনি কিছু করা শুরু করুন! যারা গুলির মুখে বর্ডার ক্রস করে, যারা মৃত্যুর মুখে সমুদ্র পাড়ি দেয় সৌভাগ্যের সন্ধানে, তারা যে একটুকরো রুটির জন্য আপনাকে আক্রমন করে বসবে না তার কি নিশ্চয়তা? আর হাজার হাজার লাখ লাখ লোক যদি একসাথে আপনাদের আক্রমন করে, তখন আর আপনাদের পালানোর পথ থাকবে না। আরব বসন্তের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিন। সিরিয়াস্লি বলছি, দেশের অর্থনীতি, বাজেট, শিল্প, শিক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি সব এমন ভাবে সাজান যাতে সবকিছুর লক্ষ্য হয় দেশবাসীর উন্নয়ন।
দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, মুসল্মান সবাইকে বলছি, জাতি ধর্ম এসব ভেদাভেদ ভুলে যান, কে কি করেছে, কে কোথা থেকে এসেছে আর কে কোথা চলে গেছে এসব ভুলে এখন যারা এখানে আছে তারাই বর্তমান, তারাই এদেশের জনগন। তাই কাধে কাধ মিলিয়ে সবাই দেশের, দেশবাসীর উন্নয়নে কাজ করুন। ঈশপের গল্পে পড়েছি, ঈশ্বর বা আল্লাহ নিজে এসে কখনো মানুষকে সাহায্য করেন না, উনি তাদেরকেই সাহায্য করেন যারা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করে। ‘মানুষ’ নিয়ে লেখা এক কবিতায় পড়েছিলাম, বিপদে পড়ে যখন দুহাত উর্ধপানে বাড়িয়ে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য কামনা করেছিল, তখন কোন দেব দেবতা এসে মানুষকে সাহায্য করেনি, শুধুমাত্র মানুষ ছাড়া। সেই কবিতার অনুকরণে বলতে চাই, দেশের উন্নয়নের জন্য আপনি সাহায্যের আশায় যেদিকেই হাত পাতেন না কেন, ধর্মের সুত্র ধরে আপনি যাকেই বন্ধু ভাবেন না কেন, ভারত, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা, বা চীন যাকেই ভাই, ব্রাদার বা গুরু ভাবেন না কেন, বিপদে পড়লে এরা কেউ আপনাকে সাহায্য করতে আসবে না। স্বর্গীয় দেব দেবীর মত তারাও কখনোই আপনার ডাকে সাড়া দেবে না। আপনার বিপদে এগিয়ে আসবে আপ্নারই প্রতিবেশী আরেক বাংলাদেশী, আরেক হিন্দু, মুসল্মান, বৌদ্ধ, অথবা খ্রীস্টান বাংলাদেশী। তাই জাত, ধর্মের লেবেল ভুলে গিয়ে, অচ্ছ্যুত আর কুলীনের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলে এক হয়ে একে অন্যের সাহায্য করুন, দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করুন, তবে একদিন দেখবেন মেরুদন্ড সোজা করে আমরাও সগর্বে দাড়াতে পারবো, মর্যাদার আসন আমাদেরও হবে। সিরিয়াসলি বলছি, ধর্ম নয়, গোত্র নয়, দল নয়, মত নয়, এবার দেশের জন্য জাগুন!
(দুঃখিত, এখানে মোটা দাগে সবাইকে, সব বড়লোক, ক্ষমতাবাণদের খারাপ বিবেচনা করা হয়েছে, অথবা সব দরিদ্রদের নিম্নবিত্ত বা নীচু জাত মনে করা হয়েছে। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না, কাউকে হেয় করার জন্য নয়। মোটা দাগের বাইরে যারা রয়েছেন, যারা বড়লোক, ক্ষমতাবান হয়েও ভালো, মোটা দাগের বাইরে যারা নির্যাতিত/নিম্নবিত্ত হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসল্মান না, যারা কুলীন হিন্দু থেকে স্বেচ্ছায় ভালোবেসে মুসলমান, যারা বাংলাদেশের ভেতর এখনো সম্ভ্রান্ত বংশীয় হিন্দু, মুসল্মান, বৌদ্ধ, অথবা খ্রীস্টান, যারা অন্যদের বিবেচনায় ছোটজাত হলেও মানবিকতার বিচারে অনেক বড়, তারা দয়া করে মাইন্ড করবেন না। আপনারা, আপনাদের কথা এখানে ওভাবে না আসলেও, আপনারাও বাস করেন এই বাংলাদেশেই। আর বড়লোক বা ক্ষমতাবাণ হয়েও যারা সৎ, আপ্নারাই তো আসল মানুষ। আমি আশা করি পাঠক, আপনিও তাদের দলেরই একজন। সংখ্যায় কম হন আর বেশী হন, আপ্নারাই দেশের আসল সন্তান। আপনারা জাগ্লেই জাগবে দেশ। আর আপনাদের দিকেই তাকিয়ে আছে গোটা বাংলাদেশ। প্লিজ এবার আপনারা জাগুন!)
(-একজন অচ্ছুৎ বাঙ্গালীর ডায়েরী থেকে সংকলিত)
(ছবি - বিবিসি বাংলা)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:২৭