somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষা (পর্ব-১২)

০১ লা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঢাকায় ফিরেই সিদ্ধান্ত নিলাম বাবাকে অজান্তার কথা জানাতেই হবে। যেভাবেই হোক, আমি অজান্তাকে চাই। তাকে হারিয়ে ফেলার কথা আমি ভাবতেই পারি না। কিন্তু কীভাবে বলব, কোন উপায়ে? তা নিয়ে মনে শুরু হলো এক নতুন দ্বন্দ্ব।

আমার বাবা, আবদুল মালেক চৌধুরী, একজন ভীষণ ব্যস্ত এবং সময়-সচেতন মানুষ। তাকে এক জায়গায় বসিয়ে কিছু বলা—তা আমার কাছে সহজ কোনো কাজ নয়। তবুও আমি তাঁকে অসম্ভব ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। খুব ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর, বাবা চাইলে সহজেই আবার সংসার শুরু করতে পারতেন। কিন্তু তিনি করেননি, আমার মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকলেন। তখন বুঝিনি, এখন বুঝি, এই না চাওয়াটার মাঝেই তাঁর সমস্ত ভালোবাসা ছিল।

আমার জন্ম হয়েছিল শেরপুরে। পরে আমরা চলে আসি ঢাকায়, তখন আমার বয়স খুবই কম। সেসময়ের কোনো স্মৃতিই আর মনে নেই। মা বনানীর এই বাড়িতে অনেক কষ্ট করে সংসার গড়েছিলেন। কিন্তু সেই সংসার বেশিদিন টেকেনি। ঢাকায় আসার মাত্র তিন বছরের মাথায়, হঠাৎ একদিন তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।

মায়ের সঙ্গে খুব বেশি স্মৃতি নেই। তবে তাঁর মৃত্যুর দিনটি আমার আজও স্পষ্ট মনে আছে।

তখন আমি ক্লাস ওয়ানে পড়ি। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পর মা আমাকে ভাত খাওয়াচ্ছেন। হঠাৎ করে তাঁর বুকে যন্ত্রণা শুরু হলো। মা কাতরাতে লাগলেন। বাসার লোকজন তড়িঘড়ি করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। আমি রয়ে গেলাম বাসায়। ফারুক আঙ্কেল বাবাকে ফোন করে হাসপাতালে যেতে বললেন। তারপর কী হয়েছিল, কিছুই জানি না। সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরল মায়ের নিথর দেহ। তাঁকে শুইয়ে রাখা হলো ড্রয়িং রুমে, সাদা কাপড়ে মুড়ে। আমি তাঁর পাশে বসে কাঁদছিলাম, বারবার ডাকছিলাম—“মা... মা...”

সেদিন আমার বাবা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন। যেন পুরো আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠেছিল তাঁর কান্নায়। সেই প্রথম বাবাকে এতটা ভেঙে পড়তে দেখেছিলাম।

পরদিন সকালে বনানী কবরস্থানে মায়ের দাফন সম্পন্ন হলো। বাসায় ফিরে বাবা আমাকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে রইলেন সারাটা দুপুর। আমি কোনো কথা বলতে পারিনি। কেন পারিনি, জানি না। শুধু আগের দিনের সেই দৃশ্য—বাবার ভাঙা কণ্ঠে কান্না আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল বারবার।

বাবা ছিলেন একজন গোছানো, পরিপাটি মানুষ। তিনি যা করেন, ভেবেচিন্তেই করেন। আমি তাঁর এই গুণটাই পেয়েছি, হয়তো। সেদিন বাবার কোলে বসে থেকেই বুঝেছিলাম তিনি কিছু একটা ভাবছিলেন। হয়তো সেই মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন—এই সন্তানই তাঁর পৃথিবী, এই সন্তানকে ঘিরেই হবে তাঁর ভবিষ্যৎ। হয়তো সেদিন তিনি নিজের বাকি জীবনের হিসেব-নিকেশ মিলিয়ে নিয়েছিলেন।

মানুষের মন বড়ই বিচিত্র। কখন কী সিদ্ধান্ত নেয় তা আগেভাগে বলা যায় না। কিন্তু সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত হলো কারও অপেক্ষায় জীবন পার করে দেওয়া। আমার বাবা হয়তো সেই কঠিন সিদ্ধান্তটাই নিয়েছিলেন।

বাবা ছোটবেলা থেকেই আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। হয়তো সেই ভালোবাসার প্রকাশ তিনি ঠিক শব্দে দেখাতে পারতেন না, কিন্তু তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি কাজেই সেই মমতার ছাপ ছিল। মায়ের মৃত্যুর পর আমার যত্ন-আত্তিতে কোনো কমতি রাখেননি তিনি।

আমার দেখভালের জন্য বাবা ফারুক আঙ্কেলকে দায়িত্ব দিয়ে দেন। তিনি আমাদের আত্মীয় নন, কিন্তু পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিলেন ধীরে ধীরে। একজন কেয়ারটেকারের চেয়ে অনেক বেশি ছিলেন তিনি। আমার স্কুল, পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া, শখ—সব কিছুর খেয়াল রাখতেন। বাবা দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকলেও আমার প্রয়োজন বা চাওয়া কখনো অগ্রাহ্য হয়নি।
মায়ের অনুপস্থিতিতে ফারুক আঙ্কেল যেন আমার ছায়া-অভিভাবক হয়ে উঠেছিলেন, আর বাবা হয়ে উঠেছিলেন আমার ভিতরের শক্তি।
আমি মাঝে মাঝেই ভাবি, বাবা কেমন করে এমন নিখুঁতভাবে একা এক সন্তান মানুষ করলেন? নিজের জীবনটাকে যেভাবে ছেঁটে শুধু আমাকে ঘিরে রাখলেন, সেটা কি খুব স্বাভাবিক কোনো ব্যাপার? হয়তো না।

তারপর ধীরে ধীরে বুঝতে শিখেছি—এই শহরের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষদের একজন আমার বাবা। তিনি ছিলেন এক গভীর নীরবতার মানুষ, যিনি ভালোবাসা দেন, কিন্তু তার বিনিময়ে কিছু চেয়ে নেন না।

বাবা তাঁর নিঃসঙ্গতা কাটানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন—ব্যস্ততা। মায়ের মৃত্যুর পর তিনি যেন নিজের ভেতরের সব শূন্যতা ঢেকে দিতে চাইলেন কাজের চাপ দিয়ে। দিনরাত নিজেকে ডুবিয়ে রাখলেন ব্যবসার খুঁটিনাটি কাজে। সকাল থেকে রাত—অফিস, মিটিং, ফ্যাক্টরি, অ্যাকাউন্টস, নতুন কনট্রাক্ট সব কিছুর সঙ্গে নিজেকে এমনভাবে জড়ালেন, যেন ব্যক্তিগত যন্ত্রণার কোনো স্পর্শই তাঁকে পাবে না।

সেই সময়টায় তিনি এত বড় ব্যবসায়ী ছিলেন না। বরং বলা যায়, সবকিছু তখনো গুছিয়ে উঠছে। কিন্তু মা চলে যাওয়ার পর বাবার ভেতর কিছু একটা বদলে গেলো। তিনি যেন ঠিক করে ফেলেছিলেন—জীবনকে আর শূন্যতার কোনো সুযোগ দেবেন না।
তিনি প্রচণ্ড পরিশ্রমী মানুষ। কঠোর পরিশ্রম আর সূক্ষ্ম ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান গড়ে তুললেন। বছর কয়েকের মধ্যেই আমাদের ব্যবসা বেশ ভালো লাভে চলে এল। তারপর একসময় গাজীপুরে বাবার নতুন ফ্যাক্টরি চালু হলো। বড় একটা প্লট নিয়ে সেখানে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন উৎপাদন ইউনিট গড়ে তোলেন তিনি।

ফ্যাক্টরি, অফিস, এক্সপোর্ট—সবকিছু নিয়ে বাবা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন যে, নিজের জন্য আলাদা করে কোনো সময় রাখতেন না। এমনকি আমার সাথেও তাঁর দেখা হতো মূলত রাতের খাবারের সময়, কিংবা কখনো কখনো শুক্রবার দুপুরে। তবুও, তাঁর চোখে আমি কখনো ক্লান্তি দেখিনি। যেন কাজই ছিল তাঁর আশ্রয়।

বাবা কখনো সরাসরি বলেননি—তিনি কষ্ট পান। কিন্তু আমি জানতাম, তিনি আজও মায়ের শূন্যতা বুকে লুকিয়ে বাঁচেন। তাঁর চুপ থাকা, তাঁর একা বসে থাকা, কিংবা গভীর রাতে একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা—সবই যেন বলে দিত, তিনি কাউকে মিস করেন। তিনিও কারো অপেক্ষায় থাকেন প্রতিদিন।

সবদিক বিবেচনা করে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিলাম—বাবাকে অজান্তার কথা আমি সরাসরি বলব না। বরং এই কথা তিনিই বলবেন, যিনি আমাকে ছোটবেলা থেকে ঠিক মায়ের মতো আগলে রেখেছেন, যিনি শুধু আমার নয়, বাবার কাছেও অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য একজন মানুষ।
ফারুক আঙ্কেল।

তিনি শুধু একজন কেয়ারটেকার ছিলেন না—তিনি ছিলেন আমাদের পরিবারের ছায়া। মা চলে যাওয়ার পর যে শূন্যতায় আমি ডুবে যাচ্ছিলাম, তার পাশে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ছিলেন এই মানুষটি।
আমার ছোট ছোট চাওয়া, দুষ্টুমি, স্কুলের পরীক্ষার ভয়—সব কিছুতেই আঙ্কেল ছিলেন আমার একান্ত আপনজনের মতো। একসময়ে তাঁর স্নেহকে আমি মা-বাবার ভালোবাসার বিকল্প হিসেবে অনুভব করতে শিখেছিলাম।

আর আমার বাবা—তিনি ফারুক আঙ্কেলকে সবসময় শ্রদ্ধা করেন, তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দেন। কাজেই, আমি জানতাম—যদি কেউ বাবাকে অজান্তার কথা বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা রাখেন, তবে সে মানুষটিই ফারুক আঙ্কেল। আমার মনে হচ্ছিল, আমি হয়তো এখনও বাবার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর চোখে চোখ রেখে বলতে প্রস্তুত নই—
“বাবা, আমি একজনকে ভালোবাসি।”

তবে আঙ্কেলের ভরসায় আমি সাহস পাচ্ছিলাম। তাঁর মুখ দিয়ে যখন আমার মনের কথা যাবে, তখন বাবার প্রতিক্রিয়া হয়তো একটু নরম হবে। অন্তত, আমি সেই আশা করছিলাম।

সেদিন সন্ধ্যায় ফারুক আঙ্কেল যখন বারান্দায় চা খাচ্ছিলেন, আমি ধীরে ধীরে পাশে গিয়ে বসলাম। বাতাসে হালকা গন্ধ ছিল গ্রীষ্মের শেষ বিকেলের। আমার বুক ধুকপুক করছিল, কিন্তু মুখে সাহস জুগিয়ে বললাম,
“আঙ্কেল, আপনার সঙ্গে একটু কথা ছিল…”

তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলেন,
“বলো বাবা, কী হয়েছে?”

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তারপর একসময় ধীরে ধীরে বললাম,
“আমি একজনকে ভালোবাসি, আঙ্কেল... ওর নাম অজান্তা।”

আঙ্কেলের মুখে বিস্ময় ভেসে উঠল না, বরং ভেতরে একটা প্রশান্ত স্থিরতা ছিল। যেন তিনি অনেক কিছু আগেই বুঝে ফেলেছিলেন।
“তুমি সিরিয়াস?”

তিনি জানতে চাইলেন, কণ্ঠে না ছিল অবজ্ঞা, না প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টি।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
“হ্যাঁ, খুবই সিরিয়াস। আমি চাই ও আমার জীবনের অংশ হোক। আমি বাবাকে বলতে চাই, কিন্তু সাহস পাচ্ছি না। ওনার ভাবমূর্তি… ওনার নীরবতা… আমাকে বারবার থামিয়ে দিচ্ছে।”

আঙ্কেল গভীর একটা নিশ্বাস ফেললেন। কয়েক মুহূর্ত কিছু বললেন না। তারপর নরম গলায় বললেন,
“তোমার বাবা একসময় তোমার মাকে খুব ভালোবাসতেন, সেটা তুমি জানো। মায়ের চলে যাওয়ার পর নিজেকে যেভাবে কাজে ডুবিয়ে রেখেছেন, সেটা আসলে কষ্ট ঢাকতেই। কিন্তু তার মানে এই না, তিনি ভালোবাসার মূল্য বোঝেন না।”

আমি একটু উঠে বসলাম, আর সরাসরি বললাম,
“আমি চাই, আপনি বাবাকে বলুন। আমার হয়ে নয়, আমার পক্ষে। আমি জানি, আপনি বললে তিনি শুনবেন। আপনি ছাড়া কেউ এই কথাটা তাকে এভাবে বুঝিয়ে বলতে পারবেন না।”

আঙ্কেল কিছুক্ষণ আমাকে একদৃষ্টে দেখলেন। তারপর মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন,
“ঠিক আছে। আমি বলব। তবে একটা কথা মনে রেখো, বাবা হয়তো প্রথমে কঠিন হবেন। কিন্তু যদি তোমার ভালোবাসা সত্যি হয়—তাহলে তাকে নরম হতে সময় লাগবে না।”

আমি চুপ করে বসে থাকলাম। মনটা হালকা লাগছিল, আবার একটা অজানা আশঙ্কাও গলার কাছে এসে আটকে ছিল। সেই সন্ধ্যায় আমি বুঝেছিলাম—ভালোবাসা কখনো শুধু নিজের মধ্যে আটকে রাখার বিষয় না, তাকে সাহস নিয়ে সামনে আনতেই হয়।

ফারুক আংকেলকে অজান্তার ব্যাপারে সব খুলে বললাম। অজান্তার পরিচয় দিলাম, ছবি দেখালাম। আংকেল মনে মনে খুশীই হলো। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো;
— "আমার ধারনা তোমার বাবা সম্পর্কটাতে না করবে না। এটা হওয়ার মত। নিজেদের পরিচিতির মধ্যে। এছাড়া মেয়েটাও দেখতে মাশা আল্লাহ সুন্দরী আছে। দেখি আমি সময় সুযোগ করে আলাপ করবো।"

এরপর দুই-তিনদিন কেটে গেলো। একদিন রাতে ডাইনিং টেবিলে বাবার সাথে বসে খাচ্ছি। টেবিলে শব্দ বলতে শুধু চামচের টুংটাং আর হালকা থালা-বাসনের আওয়াজ। বাবা আজ একটু বেশি চুপচাপ, তবে সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও আজকের নীরবতায় কিছু একটার পূর্বাভাস লুকিয়ে আছে বলেই মনে হচ্ছিল।

আমি একমনে খাচ্ছিলাম। হঠাৎ বাবা থামলেন। পানির গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে আমার দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলেন—
— “নজরুল সাহেবের মেয়েকে তুমি কিভাবে চিনলে?”

আমি চমকে উঠলাম না ঠিক, কারণ ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতই ছিলাম। কিন্তু এমন সরাসরি প্রশ্নে খানিকটা ধাক্কা খেলাম। একটু থেমে শান্তভাবে বললাম,
— “ফোনে পরিচয়। প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা শুরু হয়েছিল। পরে ফোনে কথা বলতে শুরু করি। মেয়েটা ভালোই।”

বাবা এবার আমার দিকে তাকালেন। চোখে আগুন নেই, ঠাণ্ডা জিজ্ঞাসা।
— “তুমি বুঝে শুনেই কথা বলছো তো?”

আমি হালকা মাথা নেড়ে বললাম,
— “হ্যাঁ বাবা। আমি জানি সে কে। আপনি হয়তো ওর বাবাকে চিনেন, আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু অজান্তা... সে আলাদা, সে খুব লক্ষী আর ভালো একটা মেয়ে। ওকে আমি আমার মতো করে দেখেছি। আপনি চাইলে ওর সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে পারেন। ওকে আমি ভালোবাসি।”

বাবা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। থালায় আরেক চামচ ভাত তুলে মুখে দিয়ে কিছুক্ষণ চিবিয়ে নিলেন। তারপর বেশ গম্ভীর স্বরে বললেন;
— “তুমি জানো, তোমার সামনে কী?”

আমি জানতাম কী বলতে যাচ্ছেন। ধীরে মাথা নেড়ে বললাম,
— “মাস্টার্স পরীক্ষা।”

তিনি সোজা হয়ে বসলেন, একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন—
— “আগামী মাসেই পরীক্ষা শুরু। এটা তোমার জীবনের শেষ একাডেমিক পরীক্ষা। আমি চাই, তুমি পুরো মন দিয়ে প্রস্তুতি নাও। অনার্সে তুমি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছো, এটা আমার গর্ব। যদি এবারও সেই জায়গাটা ধরে রাখতে পারো…”

তিনি একটু থামলেন, চোখ দুটো ঠাণ্ডা অথচ গভীর হয়ে উঠলো।
— “…তাহলে এই আবদারটাও মেনে নেবো। দেখা যাবে কি করা যায়। আগে মন দিয়ে পড়াশোনা করো। বাকিটা সময়ের ওপর ছেড়ে দাও।”

আমার বুকটা কেমন যেন হালকা হয়ে গেল। সরাসরি “না” বললেন না, আবার “হ্যাঁ”-ও না। কিন্তু একটা দরজা খুলে দিলেন, শর্তসাপেক্ষে হলেও। আমি কিছু বললাম না, শুধু নিচু গলায় বললাম—
— “ঠিক আছে বাবা। আমি চেষ্টা করব।”

তিনি আর কোনো কথা বললেন না। খাওয়া শেষ করে ধীরে উঠে গেলেন।
আমি চুপচাপ বসে রইলাম। মনে হচ্ছিল, সেই না বলা কথার ভিতরেই যেন আশার প্রথম আলোটা জ্বলে উঠেছে।

(অপেক্ষা - ১২তম পর্ব © শামীম মোহাম্মদ মাসুদ)

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×