somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নভেম্বর রেইন (হুমায়ুন আহমেদ স্যারকে উৎসর্গ করে)

১৩ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলা কথা সাহিত্যের খ্যাতিমান উজ্জ্বল নক্ষত্র হুমায়ুন আহমেদ স্যার।
স্যারের জন্মদিনে স্যারকে উৎসর্গ করে আমার এই একক গল্প।
ওপারে ভালো থাকবেন প্রিয় ধ্রুবতারা।


ধ্রুব হাঁটছে।
বছরের এই সময়টায় শীত পড়তে শুরু করেছে। একটু পরপর দমকা হাওয়ায় ঠান্ডা লাগছে বেশ। এবার একদম ঠিক সময় শীত এসেছে। আজ একটু বেশি ঠাণ্ডা লাগছে। বৃষ্টি হবে মনে হয়। আকাশ গুমোট, সূর্যের দেখা নেই। এসব ভাবতে ভাবতে হাঁটছে ধ্রুব। তার অনেক তাড়া। যে করেই হোক তিনটার মধ্যে পৌঁছানো চাই। নয়তো নীলা অপেক্ষা করবে অনেকক্ষন।নীলা আজ নীল শাড়ি পরে আসবে। তার হাতে থাকবে একগুচ্ছ কাঠগোলাপ। নীলাকে দেখেনি কখনো ধ্রুব। অনেকদিন আগেই তাদের পরিচয় ফেসবুকে। হঠাৎ একদিন ফেসবুকের একটি গ্রুপ থেকে পরিচয় হয়। এরপর এতদিন মাঝে মাঝেই কথা হতো দুজনের। কথায় কথায় দুজনের সম্পর্কে অনেক কিছু জানাশোনা হয়। দুজনের মনের অদ্ভুত রকমের মিল আছে। মনে হয় দুজনে একই গল্পের অন্য চরিত্র মাত্র। ধ্রুব হাঁটছে আর ভাবছে,
মেয়েটা অদ্ভুত রকম পাগল আছে। মাঝে মাঝে কি সব ছাইপাশ করে ফেলে। মাঝে মাঝে চেনা যায় না তাকে। একদিন হুট করে মেয়েটি ফেসবুকে ব্লক করে দিল। সারাদিনেও বুঝতে পারেনি কেন ব্লক করলো। দুদিন পর একটি নাম্বার থেকে কল করে বসলো নীলা। এমনটি কেন করলে বলতেই বললো, "এমনিতে, কোন কারণ নেই। প্রায়ই এমন করে বসে নীলা।
ধ্রুব বুঝতে পারেনা। কেন এমন করে নীলা!
এই যেমন হুট করে কাল বলে বসলো দেখা করতে। ধ্রুব তাই যাচ্ছে।
নীলা এমনই, একটু অদ্ভুত।
ধ্রুবর চুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ঝরে পড়ছে। টপটপ করে পড়া সেই জল মিশে যাচ্ছে রাস্তায়।
ভেজা রাস্তায় শহরটাকে নতুন মনে হচ্ছে। গাছের পাতাগুলো আরো বেশি সবুজ, উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু হয়ে পাশের দোকানের সামনে দাঁড়ালো ধ্রুব। দোকানের টিনের ছালা থেকে টপটপ করে বৃষ্টি পড়ছে। সে বৃষ্টিতে জল জমে বুদবুদ তৈরি হয়েছে। ধ্রুবর মনে হচ্ছে পৃথিবী অদ্ভুত রকমের সুন্দর। এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে তবুও কিছু মানুষ পালিয়ে বাঁচতে চায়। এই সুন্দর ক্ষণস্থায়ী, এই সুন্দরকে সবসময়ের জন্য ধরে রাখা যায় না। তাই হয়তো মানুষ ক্যামেরাবন্দি করে রাখে এসব টুকরো স্মৃতি। কেউ কেউ মনের ক্যানভাসে সে স্মৃতি পরম যত্নে আগলে রাখে। অনন্তকাল এসব স্মৃতি কেবল মায়া বাড়ায়। যে মায়ার ঘোর থেকে বের হওয়া যায় না কোনকালে।
নয়তো কেন ধ্রুব পারছেনা?


⬜⬜তিন বছর আগে⬜⬜


ঠিক এমনই নভেম্বরের বৃষ্টির দিনে, ধ্রুব হাঁটছিলো পিচ ঢালা পথ ধরে। শহরের রাস্তায় সেদিন বৃষ্টি আর চোখের জল কিভাবে একাকার হয়ে গিয়েছিল কেউ দেখেনি। এই শহরের কেউ বুঝেনি কি তীব্র ব্যথায় বৃষ্টি,পিচঢালা পথ আর চোখের জল মিশে গেছে শহরের রাস্তায়।

নয়নতারার সাথে মাত্র ছয় মাসের পরিচয়। মেয়েটি কি অদ্ভুতভাবে বুকের সবটুকু দখল করে হুট করে একদিন সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলো। সেদিন মনে হচ্ছিল একটি শব্দ অন্তত দরকার। দরকার একটু মাত্র কণ্ঠস্বর! যে কণ্ঠস্বর বাঁচিয়ে রাখবে ধ্রুব কে। কিন্তু কোন ফোন কল বাজে সেদিন, আসেনি কোন মেসেজ। শব্দহীনতার সেসব দিনগুলোতে নিজেকে কোলাহলের মাঝেও কি ভীষণ একা লাগছিলো! মনে হচ্ছিলো, টাইম মেশিনে চড়ে এমন শহরে চলে এসেছি, যে শহরে সব ঠিকঠাক মতো চলছে, শুধু একা আমি অচেনা। কেউ আমাকে দেখছে না, শুনছে না। দোকানী ঠিকঠাকমতো ক্রেতাকে জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিচ্ছে, রিক্সা থেকে মাঝে মাঝে বেলের শব্দ হচ্ছে ক্রিংক্রিং, মাঝে মাঝে দু একটি সিএনজি যাওয়ার শব্দও হচ্ছে। কোন কিছুই থেমে নেই! কোলাহলে থেকেও মানুষ ভীষণ রকম একা। সব ঠিকঠাক চলছে, জৈবিক সব কাজ শেষে মানুষ ফিরে যাচ্ছে আপন ঠিকানায়। কিন্তু দিনশেষে প্রতিটি মানুষ কি ভীষণ রকম একা। এই একাকীত্ব খালি চোখে দেখা যায় না। যা দেখতে মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখতে হয়, পড়তে হয় গভীরভাবে।

কয়েকদিন আগে নয়নতারার সাথে ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে কথাকাটি হয়। সে কথা কাটাকাটি যে শেষমেষ সব শেষ করে দিবে ধ্রুব সেটি গুনাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। তার মনে হচ্ছিল
ইশ!
সব যদি আগের মত ঠিক হয়ে যেতো।
আবার যদি হাসতো নয়নতারা। যার হাসি দেখে এক কোটি বছর নির্দ্বিধায় বেঁচে থাকা যায়। বারবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে।
এর কিছুদিন পর নয়নতারা কল করেছিল। সে দিন কী অদ্ভুত মায়া জন্মে ছিল তার প্রতি!
তার কন্ঠের গভীর শীতলতায় মনে হচ্ছিল সব ব্যাথা উপশম হয়ে গিয়েছে। টুপটাপ করে শিশিরের শব্দের মতন তার কন্ঠস্বর ভেসে যাচ্ছিল যেন হেমন্তের জ্যোৎস্নার সাথে। চাঁদের আলো যেন ঝরে ঝরে পড়ছিল সমস্ত গায়ে।
সেদিন কথা বলতে বলতে দুজনের কন্ঠই ধরে আসছিল বারবার। স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো নয়নতারা কাঁদছে।
তার কান্নার শব্দে সেদিন দু'চোখ ভিজে উঠেছে ধ্রুবরও। সে শব্দ গভীরভাবে পাকাপোক্ত করেছিলো তার আসন হৃদয়ে।
এমন সিক্ত কন্ঠে হয়তো কথা বলতে চায়নি আর। সেদিন মায়া বাড়িয়ে হুট করে ফোন রেখে দিয়েছিলো নয়নতারা।

এক্সকিউজ মি! হ্যালো মিস্টার!

সম্বিত ফিরে পেল ধ্রুব।
সুদর্শনা একটি মেয়ে তার দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।
ধ্রুব থতমত খেয়ে গেলো।
__জ্বী বলেন।
__ একটু জায়গা দিনতো। ফ্লেক্সিলোড করবো।
__জ্বী, অবশ্যই। কেনো নয়।

ধ্রুব হাঁটছে।
বৃষ্টি থেমে গেছে। ধ্রুবর মনে হলো মেয়েটি দেখতে নয়নতারার মত। নয়নতারার ঠোঁটের মত কি চিকন সরু ঠোট, চোখ ভরা অদ্ভুত মায়া, নয়নতারার মত কন্ঠে অদ্ভুত মিষ্ট কাঠিন্য।
ধ্রুবর মনে হচ্ছে পিছনে আছে নয়ন তারা। সে পিছন ফিরলেই দেখতে পাবে। আবার মনে হচ্ছে না, নয়নতারা কোথায় থেকে আসবে এখানে!
দ্বিধাদ্বন্দ্বে আর অদ্ভূত অনুভুতিতে ধ্রুবর চোখ ভিজে উঠলো। পেছনে তাকাবে ভেবেও তাকালো না সে। এই কনফিউশন কনফিউশন হয়ে থাকুক।
কিছু অদেখা অদেখা থাকাই ভালো। ভেজা চোখ আর কাউকেই দেখাতে চায় না সে। নয়নতারার চোখকে উপেক্ষা করা অসম্ভব তার জন্য। নতুন করে পুরনো মায়ায় বন্ধী হতে চায় না সে।

ধ্রুব হাঁটছে।
তার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে ভেজা রাস্তায়। সে আজ আর নীলার সাথে দেখা করবে না।
ধ্রুব হাটছে.......
পুরো দিন, পুরো রাত ধরে সে হাটবে!
অনন্তকালের সে হাটা........

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৩
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×