somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেভেল ৩ টার্ম ১

২৩ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন যাবত আমার মন খুবই খারাপ ছিল নানা কারনে । কিন্তু বাইরে থেকে দেখলে অবশ্য বোঝা যায় না আমার মন খারাপ । আমি কোন কারন ছাড়াই এত হিহি করতে থাকি যে কেউ দেখলে ভাববে দুঃখ বলে কোন জিনিস আমার জীবনে নাই ।
মন খারাপ হওয়ার সূত্রপাত আমার ৩-১ টার্ম এর শুরু থেকে । এই টার্মটা আমার জীবনের এখন পর্যন্ত বাজে টার্ম গুলার মধ্যে অন্যতম । পুরাটা টার্ম জুড়ে ফালতু সব কারনে খুব কাছের কিছু মানুষের সাথে এত মনমালিন্য হইসে যা মনে করলে এখনও হাসি পায় । আমি সরাসরি কারো সাথে ঝগড়া করার মতন মানুষ না কিন্তু এবার এই জিনিসটাও এক দফা হয়ে গেসিল যার জন্য আমি নিজেও লজ্জিত। আমার কিছু ফ্রেন্ড আসে যারা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।আমি কোনদিনই চাই না তারা আমাকে কোন কারনে কখনই ভূল বুঝুক । কিন্তু এই বার তাও হইসে কয়েক দফা । দোষ আমারই ছিল কিন্তু একটা কথাও সত্য তালি কখনও এক হাতে বাজেনা ;) (মানে আমার দোষ ৭০% হইলে দ্বিতীয় পক্ষের ও ৩০% দোষ ছিল :P )কিন্তু আল্লাহর রহমতে টার্ম শেষ হতে হতে সব কিছু আবার ঠিক হয়ে গেল :) । সবার সাথে সব ভূল বোঝাবোঝির অবশান ঘটল যাকে বলে "হ্যাপিস এন্ডিং :P" ।
এই টার্ম এর সবচেয়ে সুখকর অনুভূতি ছিল জীবনে প্রথম বারের মতন কোন অনুষ্ঠান আয়োজনে সরাসরি অংশ নেওয়া । এবারের "সি এস ই" ডেতে আমাদের ব্যাচ এর অংশগ্রহন ছিল প্রায় ১০০% । সবাই ই কিছু না কিছুতে অংশগ্রহন করেছে। আর এই "সি এস ই " ডে এর মাধ্যমে আমাদের জুনিয়ার ২ ব্যাচ ০৬ এবং ০৭ এর অনেকের সাথে পরিচয় হল। এছাড়া সিনিয়ার দের সাথেও ভাল যোগাযোগ হল কাজ করতে গিয়ে ।এক কথায় ফাটাফাটি একটা "সি এস ই " ডে হল এবার । "কালচারাল নাইট " টা ছিল ডিজুস এর ভাষায় জটিল :P
এরপর শুরু হল পরীক্ষা । প্রথম পরীক্ষাই হল বাঁশ। পারতাম মোটামোটি সবই কিন্তু সময় বাবাজি করল ঝামেলাটা /:) । ৪ ক্রেডিট এ বাঁশ খেয়ে মন মেজাজ এমনেই খারাপ হয়ে গেল । এর পরের ২ দিন গেল খালি হা হুতাস করে :(( । এরপর হঠাৎ আম্মুর আকাশ পাতাল জ্বর । ১০৪ এর নিচে নামেই না । অফিসে যেতে পারল না ১ দিন । জ্বর কমেই না , আর এদিকে আমি আর ভাইয়া টেনশন এ শেষ । আম্মু টন্সিল এর জন্য অষুধ খাওয়ার পরই জ্বর শুরু হয় এ ভেবে ভাইয়া ল্যাব এইড এর নাক কান গলার একজন ডাক্তারের কাছে আম্মুকে নিয়ে গেল পরের দিন বিকালে । আমি বাসায় ছিলাম পরীক্ষার ৪ দিন বাকি কিছুই পড়া হয় নাই তাই আম্মু বলল এই সন্ধ্যায় আমার যাওয়ার দরকার নাই বাসায় থেকে পড়তে ,ডাক্তার দেখিয়েই ওরা চলে আসবে । ভাইয়ার সাথে আমার মামা মামী ও গেসে। সামনে ডাটাবেসের বই রেখে বসে আসি টেবিল এ, কিন্তু আমারতো পড়ায় মন বসতেসেনা , কিছু না হলে জ্বর কমবে না কেন এটাই চিন্তা করতেসিলাম । তারপর ভাইয়া হঠাৎ ফোন করল যে আম্মুকে হসপিটাল এ ভর্তি করতে হবে, ডাক্তার বলসে টন্সিল এ ইনফেকশন ।আর একটু দেরী হলে ইনফেকশন শ্বাসনালীতে ছড়িয়ে পড়ত । ভাল তাও ভাইয়ার কাছে ক্রেডিট কার্ড ছিল ল্যাব এইড এর নিয়ম ভর্তি এর আগে ২০,০০০ টাকা ডিপোজিট জমা দিতে হয় । ভাইয়া বলল জিনিস পত্র পাঠাতে , ও ড্রাইভারকে বাসায় পাঠাইতেসে । আমি বললাম আমি ও আসতেসি । আম্মুকে হসপিটাল এ ভর্তি করতে হবে এটা শুনেই আমার কান্না আসতে ছিল , আমি তাড়াতাড়ি প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ব্যাগে ভরলাম আর ভরলাম আমার বইখাতা। তারপর সোজা হসপিটাল এ গেলাম । আম্মু আমাকে দেখে বলে তুমি আসছ কেন তোমার না পরীক্ষা!!! । আমি বললাম আমি আমার বই খাতা নিয়েই আসছি । ওদিন রাত থেকেই আম্মুর ট্রিটমেন্ট শুরু করা হল । প্রথমে ওরা জ্বরটা কমাল তারপর টানা ২ দিন এন্টিবায়োটিক দিল স্যালাইন এর মাধ্যমে । এদিকে হসপিটাল এ আম্মুকে দেখতে মানুষ আর মানুষ ।ভাইয়া এসে দেখে আমি কিছুই পড়তেসিনা আর পড়ার অবস্থাও নাই , তাও আমাকে বলল পড়তে চেষ্টা কর। আমার সব ফ্রেন্ডরা ফোন করতেসে আম্মুর খোঁজ নিতে ,ওদের বললাম আমি মনে হয় এই পরীক্ষাটা দিতে পারবনা । ওরা সবাই আমাকে সাহস দিল না পড়ার চেষ্টা কর , পরীক্ষাতো দিতেই হবে। ২ দিন পর আল্লাহর রহমতে আম্মু সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে গেল । তারপর বাসায় আসলাম । মাথাতো তখন আমার ঘুরতেসে কি করব আর মাত্র দেড় দিন বাকি /:) । আল্লাহর নাম নিয়া পড়া শুরু করলাম । আমার ফ্রেন্ডরাও আমাকে অনেক সাহায্য করল। কিছু না বুঝলেই ওদের কল দিতাম ফোন এ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ,ওরাও সর্বাত্নক চেষ্টা করল আমাকে সাহায্য করতে । অবশেষ এ দিলাম কোন রকমে ঐ পরীক্ষা। এরপর আরো ৩ টা পরীক্ষা বাকি।
আর একটা পরীক্ষা বাকি ডাটা কমিউনিকেশন । কম্পাইলার পরীক্ষার পরের দিন সকালে হঠাৎ চাচীর ফোন , দাদুর শরীর খুবই খারাপ ,সেন্ট্রাল এ নিয়ে গেসে দাদুকে । সংগে সংগে আম্মু,আমি আর ভাইয়া রওনা হলাম । তখন ও কেবিন পাওয়া যায় নাই , দাদুকে ইমার্জেন্সিতে রাখসে ।
কেবিন এ নেওয়ার পরও ডাক্তাররা নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারতেসেনা। তারপর টেস্ট এর পর ধরা পড়ল দাদুর মাথায় ২ টা টিঊমার এত দিন ধরে কিন্তু দাদু কখনই কোন কিছু বুঝে নাই । দাদু এখনও অনেক অসুস্থ।

এই টার্ম এর ক্লাস শেষ এই ডিসেম্বর মাসে আমি স্যামহোয়ার এ একাউন্টটা খুলি । প্রথম পরিচিত হই ব্লগের পরিবেশ এর সাথে । পরীক্ষার সময় ও পড়তে বসে মনের অজান্তেই ক্লিক পরে যায় স্যামহোয়ার এর লিংক এ নতুন পোস্টগুলো পড়ার জন্য । আমার ভাই আমাকে আজিব আজিব নাম দেয় কয়দিন পর পর , এখন আমার নাম দিসে ও "স্যামহোয়ার ইন " :P

আমার এই পুরো টার্মটাই গেসে নানা বিপদ আপদ দিয়ে কিন্তু এর পরবর্তী ফলাফল এ আমি সন্তুষ্ট ,আল্লাহ আমার সহায় হইসেন । ২৮ তারিখ থেকে আমার নতুন টার্ম শুরু হইতে যাইতেসে , আশা করি আল্লাহ আমার সহায় থাকবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১২:২০
৩৯টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×