somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের তুই (To The Child) – নবম পর্ব

১৮ ই মার্চ, ২০১২ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কর্মচঞ্চল একজন মানুষের জন্য কর্মহীনতা বড় পীড়াদায়ক। তোর মামনির দিকে তাকালে এই কথাটাই আমার বারবার মনে পড়ে । সারাদিন একাএকা বাসায় বসে থাকা, আর সাথে নানা শারীরিক পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার যুদ্ধ করতে করতে সে বেশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে । সময় কাটানো কোন কর্মচঞ্চলতা ছাড়া খুবই কঠিন কাজ, এই কাজটাই করে যেতে হচ্ছে তাকে। মাঝে মাঝে হতাশার চরমে উঠে সে আমার কাছে জানতে চায় ভবিষ্যতে জব পাবে কিনা । এই প্রশ্নের কোন উত্তর আমার জানা নেই, যদিও তার একাডেমিক বেকগ্রাউন্ডের জন্য সে কোন না কোন জব ঠিকি পেয়ে যাবে এই বিশ্বাস আমার পুরোপুরিই আছে। তবে তার পছন্দের জব, শিক্ষকতা পেশায় সে যেতে পারবে কিনা এই নিয়ে ভীষন উদ্বিগ্ন সে।

মাঝে মাঝে পেপারে কোন সার্কুলার দেখলে সে তাতে আবেদন করে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে কল ও করে। ভাইভা উত্তীর্ন হবার পর তারা তোর মামনিকে কল করে চূড়ান্ত আলোচনার জন্য। আমি তাকে বললাম সে যেন তোর আগমনী সংবাদটা তাদেরকে জানায়, কারন কিছুদিন পরেই এই কারনে তাকে লম্বা ছুটিতে যেতে হবে। প্রফেশনাল জীবনে নিজের প্রতি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি সৎ থাকাটাও জরূরী, এটা এক ধরনের পারষ্পরিক বিশ্বাস ও বন্ধন তৈরি করে, দুজন দুজনের ভাল মন্দ বিচার বিবেচনা করা তখন অনেক সোজা হয়।

প্রেগন্যান্সির কথা জানার পর তারা পিছিয়ে যায়, তোর মামনিকে জানায় পরবর্তিতে যোগাযোগ করবেন তারা । এই ব্যাপারটা হবার পর তোর মামনি ভীষন ভাবে ভেঙ্গে পড়ে, যদিও তোর কোন বিষয়ের সাথে কোন আপোষ সে কখনো করেনি । নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা পেয়ে বসে, সাথে সাথে সে এই স্বগোতোক্তি ও করে সবার আগে আমার সন্তান, তার জন্য যা ভাল সেটা আমি করবই ।আমি তাকে সাহস দেবার চেস্টা করি, ইনশাআল্লাহ তুমি পছন্দের জবই পাবে সময়মত এখন এই নিয়ে হতাশ হবার কিছু নেই । সে ভরসা পায় আবার হতাশ হয় , এইওভাবেই চলতে থাকে।

এমনি করে আরেকদিন প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে তঅ মানির ভাইভার জন্য কল আসে। সব কিছু জানার পরও তারা তো মামনিকে এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেয় এবং যথাসময়ে ছুটি দেয়া হবে এই বিষয়টিও জানায় । তোর মামনির উচ্ছ্বাস আমি নিশ্চিত তুইও টের পেয়েছিস তখন । তার সব কিছুতেই পরিবর্তনের ছোয়া , নিজেকে দারুনভাবে মানিয়ে নিল সে নতুন সময়ের সাথে ।
মজার ব্যাপর হল এর কিছুদিন পর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবার ফোন করে তোর মামনিকে জানানো হল তোর জন্মের পর সে যদি ইন্টারেস্টেড থাকে তাহলে তারা তোর মামনিকে সেখানে নিয়োগ দিতে ইচ্ছুক, কিছুটা ক্ষোভ থেকেই মনে হয় সে তখন তাদেরকে জানিয়ে দিল সে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করেছে, আপাতত আর পরিবর্তনের কথা ভাবছেনা ।

দেখতে দেখতে কোরবান চলে আসল, তোকে নিয়ে আবার আমাদের চিটাগং যাত্রা, তাও বেশ সতর্কতার সাথে । সেখানে তোর দাদার বাড়ি, আমার নানার বাড়ি সব জায়গা মিলিয়ে দারুন সময় কেটে গেল আমাদের। কোরবানির গরু দেখে তোর মামনি বলছে আগামী কোরবানে ইনশাআল্লাহ আমাদের টেম্বাও আমাদের সাথে গরু দেখতে পারবে ।

কোরবানের ঈদ আমাদের মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব, প্রতীকি পশু কোরবানের মধ্য দিয়ে আসলে নিজের ভেতরের সব কদর্যতাকে বিসর্জন দেয়ার জন্যই প্রতিবছরের এই আয়োজন। নিজের মনের ভেতরে সবারই একটা দুর্বল দিক আছে, ক্ষনে ক্ষনে আমাদের পশু প্রবৃত্তি জেগে উঠে, নানা অন্যায় আচরনে লিপ্ত হতে তখন আর আমাদের বাধেনা, সেই সাথে জাগতিক লোভে আক্রান্ত হয়ে আমরা পরম করুণাময়ের অস্তিত্ত্বের কথা ও ভুলে যায়। কোরবানের বিশাল তাৎপর্য আছে আমাদের জন্য, নিজের ভেতরের নানা কদর্য দিক ঝেড়ে ফেলা আর সেই সাথে জাগতিক লোভ থেকে নিজেকে মুক্ত করার বিশাল শিক্ষা এই কোরবানের মাঝে নিহিত । যদিও দিন শেষে দেখা যায় এই জাগতিক লোভ আর মোহের শক্তি কোরবানের আসল তাৎপর্য থেকে দুরে সরিয়ে রাখে আমাদের, ত্যাগের মহীমার চেয়েও লোক দেখানো পশু কোরবানির পথে হেঁটে যায় আমরা । আল্লাহ আমাদেরকে আদর্শ জীবন বিধান বুঝে পালন করার তৌফিক দান করুন, জাগতিক মোহ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা আত্মস্হ করার সুযোগ দিন, মনে মনে এই কামনা আর চেস্টাও থাকতে হবে সবসময় । সহজ সরল জীবনাচারন ই কেবল ইহলোকিক ও পারলৌকিক মুক্তি ও কল্যান নিশ্চিত করতে পারে। সুখ খুব দুরের কোন জিনিস না, সুখী হবার ইচ্ছাটা মনে থাকতে হবে আর আল্লাহর কাছে তা কামনা করতে হবে, সৎ - সুন্দর জীবনাচারন করলে সুখী হওয়া কঠিন কোন বিষয় না ।

ইদানিং খেয়াল করছি ছোট বাচ্চাদের প্রতি আমার মনোযোগটা বেড়ে গেছে, আশেপাশের বাচ্চা কাচ্চা দেখলে আমি খুব ভাল করে তাদের লক্ষ্য করি, তাদের আচরনটা বোঝার চেষ্টা করি । বেশ মজাই লাগে , আর কিছুদিন পড়ে এমনই একটা ছোট বাবু আমাদের ঘর আলোকিত করবে আল্লাহর রহমতে, ভাবতেই কেমন জানি লাগে । তোর মামনিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে তোর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাত হল। ডাক্তার নিয়মিত চেকআপের অংশ হিসেবে মনিটরে তোর অবস্হান পর্যবেক্সন করছিলেন। পাশে দাঁড়ানো আমাকে দেখাচ্ছিলেন এই যে বাবুর পা, হাত, এটা মাথা-এই যে বাবুর হার্ট !!! আমার বুকের ভেতর কেমন যেন ধড়ফড় করছিলো, কেমন যে লাগছিলো, পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে কেমন যেন মিরাকল মনে হচ্ছিল , সে অনুভূতি আসলে লিখে বোঝানোর মত না, তোকে তা বুঝতে হলে অমন মুহুর্তের মাঝ দিয়েই যেতে হবে, যেমন এখন আমি বুঝি আমার মা কত কস্ট করেছিলেন আমাকে এই পৃথিবীর আলো দেখাতে গিয়ে, আমার বাবা মার অনুভূতিটা তখন কেমন ছিলো । আমি খেয়াল করলাম তোর মামনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমার একটা ব্যাপার হল ভিতরে যেমনটাই হউকনা কেন অনেক সময় আমি চাইলে চেহারায় বেশ একটা নির্লিপ্ত ভাব ফুটিয়ে তুলতে পারি, তোর মামনি অমন একটা চেহারায় দেখল আমার। বের হয়ে সে আমার কাছে জানতে চাইল আমার অনুভূতি কি। তাকে হতাশ করে বললাম সেটাত তোমাকে বলা যাবেনা, সে অনেকক্ষন জোরাজুরি করে ক্ষান্ত হল। আসলে ঐ সময়ের অনুভূতি কি আর বলে বোঝানো যায়, আমাদের টেম্বাকে দেখার সে অনুভূতি কি আমি এক কথায় বলে ফেলতে পারি ?? কেউই পারবেনা ।


আমাদের তুই (To The Child) – অষ্টম পর্ব
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওরা আমাদের ঐতিহ্যের পোশাককে নোংরা পোশাক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। ওরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০


"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"

এক মৌলভী পোস্ট দিয়েছেন
"শাড়িকে একটি নোংরা পোশাক বানিয়ে দিয়েন না।
শরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমূদ্র-সৈকতে - ১৬

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯



ছবি তোলার স্থান : মেরিনড্রাইভ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : পহেলা অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।

বেড়াবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমূদ্র সৈকত। কখনো কখনো আমারও সুযোগ হয় বেড়াতে যাবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাঁআআআচ্চুউউউ! :) :D ;)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:৩৩



হাঁচতে নাকি জানে না কেউ,
কে বলেছে বোন
এই দেখোনা কত্ত হাঁচির
ওজন শত টন।

কিম হাঁচে বাড়া ভাতে,
বাইডেন হাঁচে তার সাথে সাথে,
লালচে চীনের জোরসে হাঁচি,
কাঁদে সবুজ ঘাস।
মাদার রুশের হাঁচি দেখে
হয় যে বনবাস!!

বনবিবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু

লিখেছেন নিবারণ, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪

বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×