মায়ের পেটে তোর প্রায় তিন মাস হয়ে গেছে । এমন সময় অফিসের একটা প্রজেক্টের শেষে আমরা অনেকেই থাইল্যান্ড যাবার জন্য ইনভাইটেশন পেয়েছি । অফিস থেকে যাচ্ছি ব্যাপারটা অনেক উচ্ছ্বাসের আবার একই সাথে তোর মাকে, আলফীকে আর তোকে একা রেখে যেতে মনে কেমন কেমন জানি করছে । গত ক বছরে আমরা মোটামুটি অনেক ঘুরেছি, তার মাঝে দেশের বাইরেও গিয়েছি আলফী সহ । আমি এখন একা বাইরে যাচ্ছি শুনলেত সে মোটামুটি বাড়ি মাথায় তুলে ফেলবে । তাকে বোঝানো হল আমি অফিসের ট্রেনিং এর জন্য কয়েকদিন বাইরে থাকব । যাবার আগ পর্যন্ত তার একটাই প্রশ্ন অফিসের ট্রেনিংএ বাচ্চাদের কেন নেয়া যায়না, আমি যেন আমার বসকে বলি বাচ্চাদেরকে নেয়ার পারমিশন যাতে দিয়ে দেয় । যাই হউক তাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করা হল।
প্লেনে উঠার পর থেকই আসলে আমি আরো বেশী স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছিলাম । আমি তোর মা আর আলফী এক সাথে গিয়েছি আগেরবার । ব্যাংককে ঘোরাঘুরির সময়ও যেসব জায়গায় আমরা আগে গিয়েছিলাম সব জায়গায় আসলে তাদেরকে মিস করছিলাম । বিশেষ করে পাতায়ার মানকি আইল্যান্ডে গিয়ে মনে হয় আলফীকে মিস করার মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছিল । একেত সমুদ্র তার অসম্ভব প্রিয় তার উপর ঐ দ্বীপের সাগর পাড়ে বানরের দলের ঘুরে বেড়ানো তার জন্য অনেক আনন্দদায়ক হত । এর আগে ফি ফি আইল্যান্ডের সাগড়পাড়ে তার আনন্দ আর উপভোগ ছিল মনে রাখার মত । সাগর তার মনে কোন ভীতি তো জাগায়নি , উল্টা সে নিজের মত করে ভেসে বেরিয়েছে দুহাতে দুটা প্লাষ্টিকের ডানা লাগিয়ে । ছয়দিনের পুরোটা সময় আসলে তোদের ভাবনা নানারকম ভাবে উদয় হয়েছে মনে, আর তোর মাকে নিয়েত টেনশন ছিল অনেক বেশী, যেহেতু তার শারীরিক কষ্টটা তখনও মোটেই কমেনি ।
থাইল্যান্ড মোটামুটি শপিং এর জন্য বেশ ভাল জায়গা । তোর জন্য কি কি আনতে হবে তোর মা যাবার আগে মোটামুটি বলে দিয়েছে । সমস্যা হচ্ছে যে কাপড় কিনব সেটা কি ছেলেদের না মেয়েদের । ঠিক হল এমন ভাবে কিনব যাতে সেটা ছেলে মেয়ে যে কেউই পরতে পারে । আমার এক কলিগ যাবার সময় তার নিউবর্ন এর জন্য বেশ কিছু জিনিস আনার জন্য বলে দিয়েছিল । এই বিষয়টা আমার জন্য হয়েছিল শাপেবর। যেহেতু তোর আগমনী সংবাদ অফিস কলিগরা কেউ জানেনি তখনও, তাই ঐ কলিগের বাচ্চার জন্য করা শপিং এর সাথে সাথে তোর জন্যও শপিং করে ফেলেছি ।
বেবীশপ গুলোতে যাই দেখি তাই কিনে ফেলতে ইচ্ছে করে । বাচ্চাদের সেটগুলো যে কি সুন্দর , সবগুলোই নিয়ে নিতে ইচ্ছে করে । বেবী সেট কেনার সময় আমি মোটামুটি চেস্টা করলাম যাতে ডিজাইন কিংবা কালারটা যেন মাঝামাঝি কিছু হয়, যেটা ছেলে মেয়ে যে কেউই পরতে পারবে । শেষে দুটা সেট আলাদা করে নিলাম যার একটা কেবল ছেলেদেরকেই ভাল লাগবে আর আরেকটা যেটা কেবল মেয়েদের জন্যই । তুই ছেলে কিংবা মেয়ে যাই হসনা কেন তোকে বিপরীত একটা ড্রেস একবার পরতেই হবে মনে হচ্ছে । এর বাইরে অন্যান্য জিনিস মোটামুটি সবার ব্যবহার উপযোগী গুলোই নিলাম ।
আমার এত শপিং দেখে সাথের কলিগ তো বলেই বসল বাচ্চাদের এত জিনিস দিয়ে তুই করবিটা কি । আমি কেবল হাসলাম । আমার কাজ হল শপিং এ যায়, তোর জন্য নানা রকম জিনিস কিনি আর হোটেলে ফিরে সেগুলো সোজা লাগেজে ঢুকিয়ে ফেলি । তোর আর তোর ভাইয়ের জন্য ইচ্ছা করছিল যা পছন্দ হয় তার সবই নিয়ে চলে আসি !!! মজার ব্যাপার হচ্ছে তোর মার জন্য কয়েকটা ড্রেস (ব্লেজার, কোটি) কিনে ফেলার পর মনে হল সেত এখন এইসব ড্রেস পরতে পারবেনা , তুই আল্লাহর রহমতে সুস্হভাবে এই পৃথিবীতে চলে আসলে তারপর সেগুলা সে পরতে পারবে !!!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১১