somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের তুই (দ্বিতীয় জন) -৪র্থ পর্ব

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোরবান এর ঈদ আর আর সপ্তাহ দুই বাকি । বছরে দুটা ঈদ ই আমরা চট্টগ্রামে তোর দাদা-দিদার সাথে করি । এই সুযোগে সেখানে থাকা সব আত্মীয় স্বজন এর সাথে দেখা হয় । দারুন সময় কেটে যায় । কিন্তু এইবার ডাক্তার তোর মাকে জার্নি না করার জন্য বলেছে সাবধানতার কারনে । আমরা দুজন একটু চিন্তিত কি করব । তোর মা কোন ধরনের রিস্ক নিতে চাচ্ছেনা । আমিও চাচ্ছিনা কোন ধরনের জটিলতা তৈরি হউক । কিন্তু মানুষ এক ধরনের অভ্যাসের দাস । ভাল মন্দ যায় হউক সে একধরনের নিয়মের মাঝে চলতে পছন্দ করে । প্রতিবছরের এই নিয়ম কি করে ভাংব সেটা নিয়ে চিন্তা করছি । তোর দাদা-দিদাকে কিভাবে বলব সেটাই ভাবছি । আমরা যাবোনা শুনলে , বিশেষ করে আলফী ঈদের সময় তাদের কাছে থাকবেনা এমন কিছু হলে যে তাদের আসলে ঈদ ই হবেনা । আবার তোর দিদা যদি বলে তোমরা আস তাহলে সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করে আমি চেস্টা করব যেতে । মার কোন কথা রাখবোনা এমনটা আমি এখনও কল্পনা করতে পারিনা ।

সমস্যার সমাধান নিয়ে হাজির হল তোর দিদা । আমি অফিসে বসে ভাবছিলাম তাদেরকে ব্যাপারটা জানানো দরকার । এমন সময় তিনিই ফোন করে জানালেন তোর দাদা-দিদা ঠিক করেছে এবার ঈদে তারাই ঢাকা চলে আসবে , সাথে তোর ফুপী আর চাচ্চু । মনটা কি ভীষন আনন্দে ভরে উঠল আমার । আমি কিছু বলা লাগলোনা, তারাই তোর ভালর কথা চিন্তা করে ডিসিশান নিয়ে নিয়েছেন, কবে কিভাবে আসবেন তাও ঠিক করে ফেলেছেন ।

জীবনে এই প্রথম আমরা চিটাগং এর বাইরে ঈদ করলাম । তোর নানী, মামা-মামীদের সাথে এইবারই প্রথম ঠিক ঈদের দিন দেখা হল । তোর মার জন্য এই ঈদটা ছিল আসলেই অন্যরকম। অনেক বছর পর সে তার মা-ভাইয়াদের সাথে ঈদ করল । এক্ষেত্রে আমাকে কিছুটা স্বার্থপর ভাবতেই পারিস, আসলে সারা বছরতো ঢাকায়ই থাকি , তাই বছরে এই দুবার চিটাগং যাওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইনা কখনো । কিছুটা কষ্ট থাকলেও জানি তোর মারও ব্যাপারটা খারাপ লাগেনা । সেখানে আমার নানী, মামা, খালা, মামীরা সবাই যে তোর মাকে ভীষন রকম পছন্দ করে। তাদের সাথে কয়েকটা দিন দারুন কেটে যায় । সেখানে তোর মার চার ফুফুও থাকে, এই সুযোগে তাদের সাথেও দেখা হয়ে যায় । তবে সব আনন্দের মাঝে একটা অপূর্ণতা ঠিকি ছিল, সেটা হচ্ছে ঈদে আমার নানীর সাথে দেখা না হওয়া । এইবারই প্রথম এমনটা হল,নানুর সাথে দেখা হলোনা, সেখানে খাওয়া দাওয়া করা হলোনা । তবুও তোর যাতে কোন সমস্যা না হয় তার জন্য এমনটা করা ছাড়া উপায়ই ছিলোনা ।

রোযার ঈদের পরে তোর মার আর চিটাগং যাওয়া হয়নি । ইনশা আল্লাহ তুই সহ আমরা চারজন একসাথে যাবো আগামীতে ।
মায়ের পেটে তোর বয়স প্রায় পাঁচ মাস হয়ে গেছে । ভালই নড়াচড়া শিখে গেছিস । সব চেয়ে মজার বিষয় হল যখনই তোর মা জানায় তুই নড়ছিস, তখনই আলফী তার সব কর্মকান্ড ফেলে দিয়ে তোর মার কাছে হাজির হয়ে যায় । বিপুল বিষ্ময় নিয়ে সে বুঝে উঠার চেস্টা করে কি করে এই পেটের মাঝে আমাদের ছোট বেবী আছে, কিভাবেইবা সে নড়াচড়া করছে । তার কত শত প্রশ্ন । একটা বাচ্চা নাকি দিনে চারশত সাঁইত্রিশ বার কেন কেন বলতে পারে । তার যখন দুই বছর বয়স তখন থেকে শুরু হয়েছে এই কেন কেন । তুই ও ইনশাআল্লাহ এর ব্যতিক্রম হবি বলে মনে হয়না । তার এইসব কেনর জবাব দেয়ার জন্য শেষে তোর বর্তমান অবস্হা কি তা দেখার জন্য আমরা ইউটিউব নিয়ে বসলাম । সেখানে মায়ের পেটে এই বয়সে একটা বাচ্চা কি অবস্হায় থাকে, কি করে সেসব দেখা হল । তোর ভাইয়ের তবুও বিষ্ময় কাটেনা, একদিন সেও এমন ছিল এটা সে কিছুতেই হজম করতে পারছেনা ।

ডাক্তার তোর মা কে আলট্রাসনোগ্রাম করতে বলেছেন । যথাসময়ে আমরা হাজির হলাম । প্রথমে রিগুলার কাজ সেরে শেষে ডাক্তার আমাকে আর আলফীকে মনিটরের সামনে ডেকে নিল । তোর সাথে আমাদের প্রথম সাক্ষাত হয়ে গেল । ডাক্তার বলে বলে দেখাচ্ছেন, এইটা তোর মুখ, এই যে হাত, পা !!! আমরা বিষ্ময় নিয়ে দেখছি । আলফীকে দেখতে যেমন লাগছিল তোকেও তেমনই লাগছে । আলফীত ডাক্তারকে বলেই ফেলল, তোকে কবে তার হাতে দেয়া হবে, কখন তুই তার সাথে খেলতে পারবি । সেখান থেকে অফিসে ফিরে আসার পর খালি তোর ঐ মুখ খানাই চোখে লেগে আছে । মনিটরে দেখার পর থেকে যেন তোর উপস্হিতি আরো বেশী বাস্তব হয়ে উঠল । তুই আমাদের প্রতিদিনের অংশ হয়ে উঠলি আরো বেশী করে ।

অফিস থেকে ফিরে রাতে যখন বাসার কলিংবেলটা বাজায় তখনই আলফী তার খেলাধূলা বাদ দিয়া জোরে বাবা বলে ডাক দিয়ে দরজার কাছে ছুটে আসে । দরজার ওপার থেকেই সে নানা রকম প্রশ্ন করতে থাকে কিংবা তার কর্মকান্ড বলতে থাকে । সে কি করেছে, কি এঁকেছে কিংবা মা কেন তাকে বকেছে । বাবা বলে ডাকটা শোনার যে কি অনুভূতি তা আসলে লিখে বোঝানো যাবেনা, এটার জন্যই আরো অনেক অনেক দিন বেঁচে থাকার সাধ জাগে মনে । সারাদিনের সব ক্লান্তি একেবারে উড়ে যায় । তোরা দুইজন একসাথে বাবা বলে দরজার কাছে ছুটে আসছিস, ভাবতেই কেমন জানি লাগছে । অবশ্য তুই যখন বাবা বলে ছুটে আসবি তখন আলফী আর এমনটা করবে কিনা কে জানে, সেত তখন আরেকটু বড় হয়ে যাবে । এই জন্য বাসায় সবসময় একটা ছোট বাচ্চা থাকাটা মনে হয় মন্দ হয়না !!!
আলফীকে নিয়ে আমরা ব্যাপক পরিমান এক্সপেরিমেন্ট করেছি , অনেকটা বলা যায় নিজেদের স্বার্থে । আমাদের যেহেতু ঘুরতে ভাল লাগে তাই তাকেও ঘুরাঘুরিতে অভ্যস্ত করে নেয়াটা জরুরী ছিল । ঠিক যেদিন তার দুমাস হল সেদিন দুপুরের ফ্লাইটে তাকে নিয়ে আমরা কক্সবাজার চলে গেলাম । এয়ার হোস্টেস তো এতটুকুন বাচ্চা দেখে বলে , আল্লাহ আপনার এই বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন , এয়ার প্রেশারেত ওর কস্ট হবে । আল্লাহর রহমতে ওর তেমন কোন কস্ট হয়নি, বিকালে তাকে সাগরের পাড়ে আরাম চৌকিতে শুইয়ে দেয়া হল সাগরের বাতাস গায়ে মাখার জন্য । সাত-আট মাস পার করার পর তাকে নিয়ে আমরা গেলাম শরীয়তপুর, তোর বড় মামীর গ্রামের বাড়িতে । সেখানে তাকে উঠানের মাটিতে ছেড়ে দেয়া হল মনের মত ঘুরে বেড়ানোর জন্য । মোটামুটি যতটা সম্ভব স্বাধীনতা পেয়ে সে নিজেকে মনের মত গড়িয়ে নিয়েছিল মাটিতে । এরপর নয় মাসের মাথায় সিলেটে - লালাখাল, জাফলং, মাধবকুন্ড, আমার ভার্সিটি - ঝড়ো বেগের একটা ট্যুর ও সে দিয়ে এসেছিল । এটার ফলাফল হয়েছে এখন ঘোরাঘুরির জন্য আমাদের চেয়ে তার আগ্রহ বেড়ে গেছে কয়েকগুন, কিছুদিন পরপরই সে বলে উঠে, আমরা অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যায়না, চল ঘুরে আসি । তোকেও ইনশাআল্লাহ ঘোরাঘুরির জন্য ফিট করে তুলতে হবে দ্রুত । ।

তোমার মার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই এই সুযোগে আমরা সব বন্ধুরা একটা ব্যাচেলর ট্যুর করে ফেললাম সাজেকে । এর আগে আলফীর সময় ও এমন একটা ট্যুর করেছিলাম হামহাম জলপ্রপাতে । এবারও আসলে একই অনুভূতি । সেবার তোর মাকে একা রেখে গিয়েছিলাম, এইবার সাথে আলফীও আছে । তাকেও একগাদা ভুল বিঝিয়ে, যে অফিসের কাজে আমি যাচ্ছি বলে বের হতে হয়েছে । বন্ধুদের সাথে অনেক মজার সময় কাটলেও ক্ষনে ক্ষনে আসলে তোদের তিনজনের কথায় মনে পড়েছে বারবার । এর কিছুদিন পর ছিল আমাদের স্কুলের রিইউনিয়ন । সেটাতে আমি যাব, আলফীকে জিজ্ঞাসা করলাম সে যাবে কিনা । আমাদের অবাক করে দিয়ে সে ঘোষনা করল সেও যাবে ।

সত্যি সত্যি সে একা একা, এই প্রথম তোর মাকে ছাড়া কোথাও যাচ্ছে, সেখানে সে রাত কাটাবে তাও তিন রাত পরপর । আমার অফিসের পরিকনিকে সে গিয়েছিল তা ছিল সারাদিনের । আমাদের অবাক করে দিয়ে সে রওয়ানা দিল আমার সাথে, এই তিনদিন তোর মামনী তোর নানীর কাছে থাকবে । ব্যাপক আনন্দ নিয়ে ট্রেন জার্নি শেষ করে সে দাদআ-দিদার কাছে গিয়ে পৌঁছাল । তাদের আনন্দ দেখে কে , খেলনা -কাপড়চোপড় কিনে রাখা থেকে শুরু করে আমাগামী তিনদিন তাকে নিয়ে তারা কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে তার বিশাল পরিকল্পনাও তাকে জানানো হল । প্রথমদিন কেবল ঘুমানোর সময় একটু কান্নাকাটি করলেও পরে ঘোরাঘুরির কারনে কান্নকাটির কোন সুযোগই পায়নি সে । তোর জন্যও জমা থাকল এমন একটা এ্যাডভেঞ্চার , হা হা হা !!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×