somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোড টু মোঘল- আগ্রা

২৮ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিল্লী মে কাট দিয়া - সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদের কোন বইয়ে পড়েছিলাম । পথা চলার সময় কালো বিড়াল সামনে দিয়ে অতিক্রম করায় এমন একটা ডায়ালগ দেয়া হয়েছিল, এবং ব্যাপারটাকে ভাল চোখেও দেখা হয়না , কিছুটা অমঙ্গলের প্রতীক । কিন্তু এটার যে বাস্তবতা আছে সেটা শতবর্ষ ধরে মোঘলদের রাজধানী থাকা আকবরাবাদ তথা আগ্রা না গেলে সম্ভবত জানা হতোনা । সন্ধ্যার আগ্রা দেখতে বের হয়েছি মারুতির ছোট্ট মাইক্রোবাস টাইপের গাড়িতে ছড়ে, ড্রাইভার ছোটুর সাথে গল্ল করছি , হঠাত এমন সময় একটা কালো বিড়াল গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড় দিল । ছোটু সাথে সাথে গাড়ি থামিয়ে ফেলল, তারপর গাড়িটা অনেকটা পেছনে নিয়ে গেল এবং বিড়ালটা ঠিক যে জায়গাটায় গাড়ির সামনে দিয়ে গিয়েছিল তা পাশ কাটিয়ে বাম পাশ দিয়ে যাত্রা শুরু করল আবার !!!





ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রাভেল সার্কিট হচ্ছে গোল্ডেন ট্রায়াংগেল তথা দিল্লী-আগ্রা-জয়পুর ট্যুর । মোটামুটি ভারতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের প্রথম পছন্দ এই প্যাকেজ ,ভারতের ঐতিহ্যের বড় একটা অংশ কাভার হয়ে যায় তাতে । খেয়াল করে দেখলাম সবাই ট্যুরটা শুরু করে দিল্লী থেকে । দিল্লী দেখা শেষে সবাই যায় পৃথিবীর মানুষকে দুভাগে বিভক্ত করা (যারা দেখেছে আর যারা দেখেনি ) তাজমহল দেখতে তারপর সব শেষে রাজপুতদের ঐতিহ্যবাহী পিংকসিটি তথা রাজস্হান । গুগল, উইকি আর নেটে ঘোরাঘুরি করে আমার কাছে মনে হল ব্যাপারটা শেষ থেকে শুরু করলেই বরং ভাল হবে । প্রথমে রাজস্হান দেখে তারপর আগ্রা এবং সবশেষে দিল্লী , এর পেছনে যুক্তি ছিল জৌলুস আর সৌন্দর্য বিবেচনা । পরবর্তীতে নিজের বিবেচনাবোধের প্রশংসা করে নিজেকেই ধন্যবাদ দিলাম । কারন রেড ফোর্ট আর আগ্রা ফোর্ট দেখার পরে এমার ফোর্ট দেখলে সেটাকে খুব একটা আহামারি মনে হতোনা , তার সৌন্দর্যও খুব একটা আর মনে গেঁথে থাকতোনা । এমার থেকে শুরু করার ফলে প্রত্যেকটাকে তার নিজের সময়কার কথা আর ক্ষমতার বিবেচনা করে মূল্যায়ন করা সহজ হয় । আর তাজমহল আসলে বাকি কোনটার সাথে তুলনা করলে সেটা অপরাধ হবে , তাজ কে শুধু শুধুই দেখতে যাওয়া যায় । একসময় তাজমহলকে ভাবতাম পৃথিবীর সবচেয়ে ওভার রেটেড সমাধিক্ষেত্র । এটাকে ছুঁয়ে দেখার পর, ৪২ একরের এই সুবিশাল এলাকায় পদচারনার পর মুগ্ধতার অপার বিষ্ময় মনে চেপে না বসার কোন কারনই থাকবেনা ।

জয়পুর দেখার তৃপ্তি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম আগ্রার পথে বাসে করে । রাজস্হান প্রদেশ থেকে উত্তর প্রদেশ । যতই আমরা উত্তর প্রদেশের দিকে আগাতে থাকি ততই ভূমির রুক্ষতা কমতে থাকে , মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ চোখে পড়ে , যার পুরোটা জুড়ে আসলে আলু ক্ষেত , শতকোটি লোকের দেশের প্রধানতম সবজি এই আলু , আলু ছাড়া আর কোন সবজি খুব বেশি একটা হোটেলগুলোতেও পাওয়া যায়না । ভরতপুরের মধ্য দিয়ে আমরা চলে আসলাম আগ্রা । ফতেপুর সিক্রিও সময়াভাবে লিস্টি থেকে বাদ দিতে হল , ২৪০ কিলো পথ পাড়ি দিতে বাস এত সময় লাগাবে কেন সেটা মাথায় আসলোনা । ইন্ডিয়ান বাস সার্ভিস খুব একটা সুবিধার মনে হলোনা , জয়পুর থেকে ননএসি বাস আর আগ্রা থেকে দিল্লী এসি বাসে যাত্রা করার পর এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত । তবে যে ব্যাপারটা মুগ্ধ করার মত সেটা হল তাদের সড়কপথ । এই ২৪০ কিমি পথের কোথাও একটা খানা খন্দ চোখে পড়লোনা , মসৃন সড়ক তার উপর পুরোটা পথের রোড ডিভাইডার রঙ্গীন হয়ে আছে নানান ফুলের গাছে , চোখে পড়ল সেগুলোর যত্ন আত্মিও চলছে সমানতালে পুরোটা পথ জুড়ে । ব্যবস্হাপনা আসলে একটা চর্চার বিষয় , এটা ধারন করতে হয় ফলাফল পেতে হলে ।

আগ্রার হোটেলে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই । ঘোরাঘুরির জন্য শীতকাল আমার খুব একটা পছন্দ না , কারন দিনের সময় খুবই কম, গরম কালে কষ্ট হলেও হাতে অনেক সময় পাওয়া যায় । চেক ইনের পর হোটেলের ম্যানেজার আমাকে বলল আপনাদের ঘুরার প্ল্যান কি ? বলার পর সে বলল ঠিক আছে আমি আপনাদের ঘুরার জন্য একটা মিনি মাইক্রোবাস ঠিক করে দিব, আর দিল্লী যাবার বাসের টিকেট কেটে দেয়ার ব্যবস্হা করে দিব । ইনটুইশন বলছিল এই বেটার মতলব সুবিধার না, সেটা প্রমানিত হল যখন সে দিল্লীর ভাড়া প্রতিটিকেটে বেশ অনেকটা বাড়িয়ে বলল, ইন্টারনেটে আগে দেখে যাবার কারনে আমি সাথে সাথে তার মতলব বুঝেগেলাম । পরে জানাব বলে রুমে চলে আসলাম । রাতের খাবার আর আগ্রা শহরে একটা চক্কর দেয়ার জন্য বের হব এমন সময় সে একটা গাড়ি দেখিয়ে বলল ও আপনাদের শহরের সেন্টারে নামিয়ে দিবে । আমাদের যেকোন জেলা শহরের মতন ছোট শহর আগ্রা , একসময় মোঘলদের জৌলুসে ভরা রাজধানী হলেও আজ যদি ঐ তাজমহল না থাকত তাহলে এই শহরে কেউ যাত্রাবিরতির জন্য হলেও থামত না । পনিরের টিক্কা আর চিতই পিঠার মত দেখতে পিঠা ওমামাম যার উপর টমেটু ধনে পাতা দিয়ে ভিন্ন একটা স্বাদ আনা হয়েছে , সাথে অসম্ভব টেস্টি ফ্রাইড রাইস দিয়ে রাতের ডিনার সারলাম । রাস্তায় দাঁড়িয়ে লাচ্ছি খেয়ে ঠান্দায় কাঁপতে কাঁপতে হোটেলে ফিরে আসতেই দেখা হয়ে গেল মালিকের সাথে । নেটে রিভিউ পড়েছিলাম , ভদ্রলোক নাকি ভীষন হেল্পফুল । সাথে সাথে যেন তিনি তার প্রমান দিলেন, ঘুরে বেড়ানোর গাড়ি ভাড়া তার ম্যানেজারের বলা ভাড়ার অর্ধেক হয়ে গেল, বাসের টিকেট বললেন তিনি আনিয়ে দিবেন নির্ধারিত দামে । সাথে বললেন আমরা চাইলে কাল দুপুরে তিনি খাবারের ব্যবস্হা করে রাখতে পারেন হোটেলের রেস্টুরেন্টে, বললেন হানিফ ভাইয়ের কাছ থেকে হালাল মুরগীর মাংস আনানোর ব্যবস্হা করবেন । ক্যাসুনাট দিয়ে বানানো মুরগীর কোরমা খেতে বেশ হয়েছিল ।


আগ্রা শহরে প্রবেশ, রাতে ঘোরাঘুরি সারাক্ষন মাথায় ঘুরছিল হঠাত করে যদি একনজর তাজমহল দেখা হয়ে যেত । পরে তাজমহল দেখে বুঝলাম তার আসলে কোন উপায়ই নেই । আগামীকাল তাজমহল দেখব , বিল ক্লিনটনের পৃথিবীর মানুষকে ভাগ করা সৌভাগ্যবান গ্রুপে (যারা তাজ দেখেছে আর যারা দেখেনি )পা দিব এই ঘোর লাগা ভাব নিয়ে ঘুমাতে গেলাম আর এলার্ম এ যখন ঘুম ভাংল তখন কনকনে ঠান্ডা । নাস্তা খাবার পর ড্রাইভার ছোটু বলল আরেকটু পরে বের হলে ভাল হবে এখন কিছুই ভালভাবে দেখা যাবেনা কুয়াশার জন্য , ছবিও ভাল আসবেনা । সে পরামর্শ দিল আগে আগ্রা ফোর্ট দেখে পরে তাজমহল দেখতে গেলে ভাল হবে, কারন ততক্ষনে কুয়াশা কেটে যাবে ।

পার্কিং থেকে যখন আগ্রাফোর্ট চোখে পড়ল তখন থেকেই আসলে বিস্ময়ের শুরু । পনের শতকে কি করে এই জিনিস বানানো হয়েছিল এই জনপদে !!! ৭০ ফিট উঁচু ওয়াল ঘেরা ৯৪ একর জায়গা নিয়ে যার বিস্তৃতি , বস্তুত প্রাচীর ঘেরা এক শহরই ছিল এটা বলা চলে যা আকবরের হাত ধরে পূর্ণ রুপ লাভ করেছিল । মোঘলদের দূর্গ গুলোর একটা বৈশিষ্ট ছিল এদের প্রবেশ পথটা কখনোই সরাসরি ছিল না । ঘুরে যেতে হত, গাইডের ভাষ্য মতে যুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুর হাতি যাতে দৌড়ে এসে দূর্গের দরজায় আঘাত করতে না পারে সেজন্য এইভাবে তৈরি করা , যুক্তি সংগত বটে , সাথে পালানোর জন্যও আরেকটা গেট থাকত !! মোঘল/মোগল মানে আসলে কিন্তু মোঙ্গল , পারস্যের লোকজনের উচ্চারনে চেঙ্গিস খানের বংশধর মোঙ্গলদেরকে মোঘল/মোগল বলা হত । বস্তুত মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিস্ঠাতা বাবর পিতার দিক থেকে তৈমুর লং আর মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর ।







শুরুতেই চোখে পড়বে শাহজাদা সেলিম তথা সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্যালেস যেটা আজ বানরের অভয়ারন্য । প্যালেসের সামনেই রয়েছে বিশাল মার্বেলের বাথটাব,যোধা বাঈ পুত্র শাহজাদা সেলিম কে তার রাজপুত মামা উপহার হিসেবে দিয়েছিল । প্যালেস পার হবার পরেই শুরু শাহজাহানের প্যালেস । শাহজাহানের সবকিছুতেই শ্বেত শুভ্র মার্বেলের ছোঁয়া । সম্ভবত পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে পরাজিত হবার পর উদয়পুরে যে রাজপুতদের আশ্রয়ে সে ছিল সেখানকার মার্বেলে তৈরি প্যালেসগুলো শাহজাহানের এই মার্বেল পাথরের প্রতি দুর্বলতার কারন । তার সবকিছুতেই মার্বেলের ছোঁয়া । আগ্রা ফোর্টেও শাহজাহানের সময়কার বানানো সবকিছুই ঐ মার্বেলে তৈরি । নিজের কন্যাদের প্রতিও তার স্নেহ ছিল অতুলনীয় , তাই অন্যকোন সম্রাটের এমন স্হাপনার উপস্হিতর কথা জানা না গেলেও সেখানে নিজের বাসস্হানের দুইপাশে দুই মেয়ের (জাহানারা আর রওশন আরা) জন্য দুটি শ্বেত পাথরের প্যালেস বানিয়েছিল সে । মমতাজ মহলের মৃত্যুর পর কন্যা জাহানারাই ছিল সাম্রাজ্যের প্রধানতম নারী বা সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী । এই দুর্গেই শাহজাহান তার জীবনের শেষ আটটি বছর বন্দি অবস্হায় কাটিয়ে দিয়েছিল । অসুস্হ পিতার সেবা করার জন্য কন্যা জাহানারাও স্বেচ্ছা বন্দীত্ব বরণ করে নিয়েছিল । সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকে মোঘল প্রিন্সেসদের সারাজীবন অবিবাহিত থাকার রেওয়াজ চালু হয়েছিল , সাম্রাজ্যের নতুন নতুন আরো উত্তরাধিকার যাতে তৈরি না হয় সেজন্য বলা চলে এই অমানবিক ডিক্রি চালু ছিল ।











মোঘলদের সিগনেচার পরিচয় ছিল বাগান । তারা যেখানেই গিয়েছে সেখানেই বাগান বানিয়েছে । তাদের সবগুলো দুর্গেই বিশাল জায়গা জুড়ে আছে বাগান। ফোয়ারা আর তাতে পানি প্রবাহের জন্য সুন্দর ব্যবস্হা । আগ্রা, দিল্লী ,কাবুল, লাহোর, কাশ্মীর যেখানেই তাদের পদ চিহ্ন পড়েছে সেখানেই দেখা যাবে তারা বাগান বানিয়ে রেখেছে । শহরের বিভিন্ন প্রান্তেও তারা সাধারনের জন্য বাগান বানিয়েছিল । শুধু আগ্রাতেই এমন বেশ কয়েকটি বাগান রয়েছে , দিল্লীর উপকন্ঠে রয়েছে শাহজাহান কন্যা রওশন আরার বানানো রৌওশনাবাগ, দিল্লীর লাল কেল্লায়ও রয়েছে অনেকগুলো বাগান ।


















আমার ব্যক্তিগত একটি মত হচ্ছে মোঘল সাম্রাজ্য আজকের এই সময়ে এসেও প্রাসংগিক থাকা, মানুষের আলোচনায় থাকা সবকিছুর কারন কেবলমাত্র সম্রাট শাহজাহান । তার বানানো স্হাপত্য কীর্তির উপরই মোঘলরা এখনও টিকে আছে । না হলে পৃথিবীর আরো অনেক জনপদ শাসন করে হারিয়ে যাওয়া শাসকদের মতনই হত মোঘলদের পরিনতি । শাহজাহানের এই স্হাপত্য প্রেম যদিও অনেকের কাছে অকারন ব্যয় আর বিলাসিতার নামান্তর , তথাপি ততকালীন সময়ে পৃথিবীর চার ভাগের একভাগ জিডিপির আধিকারী শাসকের এমন বিলাসিতাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখা যায় । মোঘলদের এই সাম্রাজ্য আওরঙ্গজেবের আমলে সমগ্র পৃথিবীর জিডিপির ২৭ শতাংশের অধিকারী ছিল ।

আগ্রা ফোর্ট এ শাহজাহানের বানানো আরেকটি শ্বেত শুভ্র স্হাপনা সংস্কার কাজ চলার কারনে দেখা হলোনা , মতি মসজিদ , রাজ দরবারের সদস্যদের জন্য বাবানো হয়েছিল এই মসজিদ । আগ্রা ফোর্ট দেখে বের হয়ে যাব , তখনও মনের মাঝে খচখচ করছিল একটা বিষয় , এখান থেকে তাজমহল দেখতে কেমন দেখাত সেটা দেখা হলোনা , বন্দী শাহজাহান তাজমহলের কোন রুপ দেখে নিজের জীবনের শেষ আটটি বছর কাটিয়ে দিয়েছিলেন । তাই বের হতে গিয়েও আবার ফিরে আসলাম । ব্যর্থ মনোরথেই ফিরতে হল, কুয়াশার চাদর তখন ঢেকে রেখেছে যমুনা নদী , ফলাফল অদৃশ্য রয়ে গেছে তখনও তাজমহল । একসময়ের পরাক্রমশালী সম্রাট , শাহজাহানের ওত এমন অবস্হার মধ্য দিয়ে যেতে হল শীতকালে , কেমন লাগত তার অদৃশ্য তাজের দিকে চেয়ে থেকে !!!



শাহজাহানের অন্যতম পছন্দের একটা জায়গা ছিল বোরহানপুর , যেখানে তিনি লম্বা সময় কাটিয়েছেন । প্রিয়তমা মমতাজের জন্য এই বোরহানপুরেই শাহজাহান বানিয়েছিল রাজকীয় গোসলখানা, যেটার দেয়াল জুড়ে ছিল নানা কারুকার্য আর ছাদ ছিল পেইন্টিং দিয়ে ভরা । সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে এই বোরহানপুরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মমতাজ মহল যিনি ছিলেন তার পূর্ববর্তী সম্রাজ্ঞী বিদূষী রুপবতী নূর জাহানের ভাইয়ের কন্যা , শাহজাহানের সাথে নূর জাহানই মমতাজ মহলের বিয়ে ঠিক করেছিলেন । যদিও পরবর্তীতে নিজের আগের সংসারের কন্যার সাথে শাহজাহানের আরেক সত ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে তাকে সিংহাসনে বসাতে গিয়ে শাহজাহানের বিপক্ষে চলে গিয়েছিলেন তিনি । মমতাজ মহলের প্রথম সমাধি এই বোরহানপুরেই । এর ছয়মাস পর সেখান থেকে তার কবর সরিয়ে আগ্রায় নিয়ে আসা হয় । প্রচলিত মিথ হচ্ছে শাহজাহান যখন মমতাজের জন্য তাজমহল বানানোর জন্য মনস্হির করলেন তখন দেখা গেল আশে পাশে কোথাও সাদা মার্বেল পাথর পাবার সম্ভাবনা নেই ,আর তাই মমতাজ এর দেহাবশেষ সরিয়ে নিয়ে আসা হল ৮৫০ কিমি দূরের আগ্রায় ,যদিও নিকটবর্তী মার্বেল পাথরের জন্য যেতে হয়েছিল ৩৬০ কিমি দূরে রাজস্হানের মাকরানায় , শ্বেত শুভ্র মার্বেলের জন্য যার খ্যাতি এখন পৃথিবীজুড়ে ।







তাজ মহলের সৌন্দর্য আসলে শুরু এর প্রবেশ পথ থেকেই । অবশ্য তাজে প্রবেশের পূর্বে (পশ্চিম গেট) চোখে পড়বে শাহজাহানের আরেক স্ত্রী ফতেপুরীর নামে তৈরি করা মসজিদ, স্হাপত্য শৈলীর জন্য দর্ষহনীয় হলেও এটা এখন পরিত্যক্ত , তাজের পূর্ব পাশেই রয়েছে আরেক স্ত্রী কান্দাহারী বেগমের কবর । মূল গেট টিও অপরূপ কারুকার্যখচিত । এখান থেকে প্রথম চোখে পড়বে তাজ মহল , মজার ব্যাপার হল এর আগ পর্যন্ত তাজমহল একবারের জন্যও চোখে পড়েনি । তাজমহল দেখার সময় আামর অনুভূতিও কেমন যেন ফ্লাকচুয়েট করতেছিল । কখনো মনে হচ্ছিল ওয়াও , কখনোবা এ আর এমন কি - অঢেল টাকা ছিল তাই বানাতে পারছে । পরক্ষনেই তাজের ডিজাইন , বানানশৈলী, বিন্যাস,মোদ্দাকথা এর সৌন্দর্য আসলে আপনাকে বিমোহিত না করে পারবেনা , সর্বোপরি প্রিয়তমা স্ত্রীর বিরহে তার স্মৃতির জন্য এমন একটি জিনিস বানানো যা শতশত বছর ধরে মানব ইতিহাসে ভালবাসার আইকন হিসেবে চিহ্নিত, এমন একটা জিনিস চোখে দেখার মাঝেও অন্যরকম একটা অনুভূতি আছে ।

বিশাল বাগান আর লন পেরিয়ে যেতে হয় তাজমহলে । উস্তাদ আহমদ লাহোরির ডিজাইনে বানানো ২৪০ ফুট উঁচু তাজমহল চোখে পড়ার সাথে সাথেই আসলে বিমোহিত হওয়া শুরু হয় । কি করে ঐ আমলে এটা বানানো সম্ভব হয়েছিল সে বিষ্ময়ের ঘোর আসলে দেখে ফেরার পরও কাটবেনা । বাম পাশে মসজিদ , ডান পাশে মেহমান খানা রেখে ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে তাজমহল, পেছনে বয়ে চলেছে বর্তমানে শীর্ণকায়া যমুনা । যেদিক থেকেই দেখা হউকনা কেন তাজ মহল দেখতে একই রকম , বানানোর এই কৌশলে চমতকারিত্বত আছেই । যে চারটি পিলার/মিনার আছে সেগুলো নাকি এমন ভাবে তৈরি যে কোন অবস্হায়ই তা ভেঙ্গে পড়লেও মূল ভবনের গায়ে পড়বেনা ।

বিশালাকার গম্বুজের নিচে রয়েছে কবর । এখানে দুটি চেম্বার , একটি নিচে যেখানে অরিজিনাল কবর রয়েছে মমতাজ ও শাহজাহানের । গৃহবন্দী অবস্হায় মৃত্যুর পর পিতাকে সম্রাট আওরঙ্গজেব তাজমহলে মমতাজ মহলের পাশেই সমাধিস্ত করেন । দর্শনার্থীদের জন্য যে অংশটুকু খোলা রয়েছে সেটি আসলে মূল কবরের ডামি , পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো এ অংশটুকুতে এসে পড়ে আর এর গায়ে মার্বেলের উপর খচিত রঙ্গীন পাথরগুলো জ্বলজ্বল করতে থাকে । ভেতরে থাকা কেয়ার টেকার টর্চের আলো ফেলে দেখাল সে জ্বলজ্বলটা কেমন । আলো আসার জন্য যেভাবে ডিজাইন গুলো করা হয়েছে তাতে আপনার মাথা নস্ট না হয়ে আসলে উপায় নেই । পুরো তাজমহলের মাঝেই একটা এলিগেন্ট আর রাজকীয় ব্যাপার রয়েছে । আমার কাছে মনে হয়ছে পুরো একটা দিন এই স্হাপনার দিকে তাকিয়ে থেকে পার করে দেয়া সম্ভব , কারন সময় বদলের সাথে সাথে এর গায়ের রংও যে বদলাতে থাকে । তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে আইয়ুব বাচ্চুকেও খুব মনে পড়ছিল- এক তাজমহল গড় হৃদয় তোমার হারালে , মনে মনে গুনগুন করছিলাম । তাজমহল আসলে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে দেখতে হবে, ছুঁয়ে দেখতে হবে, ঘুরে ঘুরে দেখতে হবে - লেখা পড়ে, ছবি দেখে আসলে এটা অনুধাবন করা সম্ভব নয় ।























আমাদের তাড়া আছে দিল্লীর পথ ধরব, ড্রাইভার ছোটু বলল আগ্রার বিখ্যাত পিঠা না খেয়ে গেলে এ ঘুরাই ইনকমপ্লিট থেকে যাবে । তার কথায় সায় দিলাম, যদিও সতর্ক আছি , কোন ফাঁদে পা দেয়া যাবেনা । বড় এক মিষ্টির দোকানে নিয়ে গেল , মাল্টিকালারের মিষ্টির মত জিনিস সারিসারি সাজানো । ভীড় ও আছে বেশ , এক সেলসম্যান আমাকে টেস্ট করার জন্য কয়েক রকম পিঠা এগিয়ে দিল । মুখে দেয়ার সাথে সাথেই আমি চিনে গেলাম এটা কি জিনিস । চাল কুমড়ার মোরব্বা - আমাদের বিয়ে বাড়িতে জর্দায় যে জিনিস দেয়া হয় । পিঠা কি জিনিস যেহেতু বুঝে গেছি, তাই খুব সামান্য পরিমানে কিনলাম , বেচারার চেহারা দেখে বুঝলাম সে খুশি হতে পারলোনা । তারে খুশি করে কাজ নেই , আমাকে দিল্লীর পথ ধরতে হবে...............
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×