somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পুরোধা মনীষী আবুল হুসেনের আজ ৭৩তম মৃত্যুবার্ষিকী: বাংলার দ্রোহী,প্রণমি তোমারে...

১৫ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘হে জমিদার!...তুমি পশ্চিমের ডেমক্রেসিকে কে হুবহু এনে বসিয়ে দিও না। তুমি মানুষ হিসেবে চাষার সঙ্গে বসে-যেতে পারবে কি? তুমি তার সঙ্গে বসে মাটির বুকের গরম সহ্য করতে পারবে কি? তুমি চাষার ভগ্নকুটিরের মগ্ন আতিথ্যকে গ্রহণ করতে রাজি হতে পারবে কি?...তুমি চাষার কেশে নিজ কেশ বোধ করতে পার কি? যদি এসবের কোনটীর শক্তি তোমার না থাকে তবে আর পশ্চিমের ডেমক্রিসির কথা তুমি বল না-ভোটের জন্য টাকা ব্যয় করে তোমার প্রজা বাংলার চাষাকে আর বিব্রত করো না।’
বিশ শতকের গোড়ার দিকে এই কথা গুলো বলেছিলেন মনীষা ও সংস্কারক আবুল হুসেন। পল্লীর গেয়ো চাষাদের দুর্দশা আর রাষ্ট্র ও সরকার কর্তৃক প্রতারণার বিষয়টি উপলব্দি করে বুকের বাংলার মুসলমানের বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রধান সংগঠক ও পৃষ্টপোষক এই কৃষকবন্ধুর আজ ৭৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী। যশোর জেলার পানিসারা গ্রামে মাতুলালয়ে ১৮৯৭ সালের ৬ জানুয়ারি তার জন্ম। মৃত্যু ১৫ অক্টোবর ১৯৩৮। এই চিন্তক শুধু নিজেই নন তার পূর্ব পুরুষরাও ছিলেন যুক্তিপ্ররায়ন মানুষ। তার পিতা মুহম্মদ মুসা এবং মাতা আসিরুন নেসা খাতুন।
বাঙ্গালি মুসলমানের প্রথম দ্রোহী আবুল হুসেন বৃটিশদের দোসর জমিদারদের উদ্দেশ্য করে উপরোক্ত কথা তার ‘বাংলার বলশী’ গ্রন্থে উল্লেখ করলেও পশ্চিমের গণতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত আমাদের আজকের সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারের ক্ষেত্রেও কথাগুলো এখনো সময়োপযোগী। আজকের দিনেও পল্লীর কৃষক সমান দুর্দশাগ্রস্থ। সামান্য ঋণের জন্য শক্তিশালী রাষ্ট্র তার কোমরে দড়ি বেধে কোর্টে তোলে। এনজিওরা সামান্য কিস্তির টাকা দিতে না পারায় কৃষক বধুর বালা, নাকের নোলক ও ঘটিবাটি নিয়ে যায়। ভোটের দলের কাছে প্রতিনিয়ত প্রতারিত কৃষক। সার বীজের জন্য চলছে লড়াই। গুলি লাগছে কৃষকের বুকে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে কৃষিতে সুবজ বিপ্লবের নামে শুরু হয়েছে কৃষির বানিজ্যিকীকরণ। অতি ফলনের আগ্রাসী বিজ্ঞাপন কৃষকদের প্রলুব্ধ করে দেশীয় বীজ ও প্রজাতিকে হটিয়ে হাইব্রীড নিয়ে আসা হয়েছে। রাসানিক বিষ বিক্রি করে ফুলেফেপে ওঠছে বহুজাতিক কোম্পানি। এতসব প্রতারণা, বঞ্চনা ও নিপীড়নের পরও এখন পর্যন্ত কৃষকই জাতীয় উন্নয়নের অগ্রগতির চাবিকাটি হিসেবে বিবেচিত! বাংলা বীর্যবান কৃষকের দুর্দশায় ব্যতিত আবুল হুসেনের ক্ষুরধার লেখনিতে ভদ্রলোক দাবিদারদের একহাত দেখিয়েছেন তিনি। জাতীয় উন্নতির জন্য কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের বিকল্প নেই বাঙ্গালির পিতা এই বিষয়টি অনেক আগেই বুঝে তা থেকে উত্তরণের পথ খুজছিলেন। তার লেখায় মুক্তবুদ্ধির বাঙ্গালি মুসলমানের নবজাগরণের সঙ্গে নিগৃহিত কৃষকদের উঠে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতটিও ষ্পষ্ট ছিল। তার পথ ধরেই আমরা পরবর্তীতে এসএম সুলতানের ক্যানভাসে বাংলার বীর্যবান কৃষকের সাহসী অবয়ব দেখতে পাই।
বিংশ শতাব্দিতে তিনি জ্ঞান বিজ্ঞান বিমুখ গোড়া মুসলমানদের পাশে দ্বীপশিখা হাতে দাঁড়িয়েছিলেন। বাঙালি মুসলমানের মনের বদ্ধঁিগট খুলে দিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরই অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিভাগে মাসিক ১২৫ টাকা বেতনে লেকচারার পদে যোগ দেন। ১৯২৭ সালে ঢাকায় গঠিত মুসলিম সাহিত্য সমাজ ও বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পুরোধা তিনি। এই সময় প্রকাশ করেন শিখা পত্রিকা। তার ঢাকা ত্যাগের পরেই শিখা পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায; মুসলিম সাহিত্য সমাজের কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়ে। তিনি ‘অ্যন্টি পর্দা লীগ’ গঠন করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলমানদের মনে কুঠারাঘাত করেন। শিখা ছাড়াও তরুণপত্র, অভিধান, জাগরণ পত্রিকার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালে একটি প্রকাশিত প্রবন্ধ নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীলদের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। ‘নিষেধের বিড়ম্বনা’ এবং ‘আদেশের নিগ্রহ’ নামক দুটি প্রবন্ধের জন্য তাকে ঢাকার নবাবরা পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় বিচারের নামে চরম অপমান করে। পরে আইনপেশায় যোগ দিয়ে বাঙ্গালি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম মাস্টার অব ল’ লাভ করেন। আবুল হোসেন এখনো প্রচার প্রচারণার আড়ালে। তার প্রকাশিত রচনাবলি এখনো সহজলভ্য নয়। নতুন প্রজন্ম এমনকি পূর্ব প্রজন্মও তার সম্পর্কে তেমন অবহিত নয়।
আবুল হুসেন বাংলার সংগ্রামী কৃষকদের নিয়ে বাংলার বলশী গ্রন্থে কৃষকের সংগ্রামকে তুলে ধরেছেন জাতীয় কর্তব্যজ্ঞানে। জমিদারী শোষন পীড়ন থেকে কৃষকের মুক্তি ও কৃষির উন্নতি নিয়ে তার মৌলিক চিন্তার পরিচয় মিলে এই গ্রন্থে। এসবের পাশাপাশি বাঙালি মুসলমানের শিা সমস্যাকে একজন আধুনিক চিন্তকের ভূমিকায় প্রত্য করে এ থেকে মুক্তির পথ খুজেছেন তিনি। মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপত্র শিখা পত্রিকায় শিখাগোষ্ঠীর মৌলিক চিন্তার পরিচয় শিখা সমগ্রে প্রত্য করা যায়। মুসলিম সাহিত্য সমাজের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘ আজ আমাদের সকল শুভ চেষ্টা আমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিকে মুক্ত করা’। সমাজের অন্ধ বিশ্বাসী গোড়া ধার্মিকদের ভয়ে স্বজনরা তার রচনা প্রকাশ না করে কলকাতায় নিয়ে যান। সেখানে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গায় রতি স্থানে অগ্নিসংযোগ হলে তা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
আমাদের জাতীয় জীবনে তার ‘বাংলার বলশী’ রাজনীতিক তথা পল্লী সংস্কারকের পাঠ করা এখন জরুরি। এমন একজন মনীষার সৃষ্টি সম্ভার ও চিন্তা থেকে দূরে থাকলে আমাদের আরো পিছনে পড়ে থাকতে হবে বহুদিন। দৈন্যতা আমাদের এমনভাবে ঘিরে ধরেছে যে বাঙ্গালির বুদ্ধির মুক্তির আন্দোলনের পুরোধাকে আমরা ভুলতে বসেছি।
মনীষী আবুল হুসেনের ৭৩ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সুনামগঞ্জে মুক্ত সমাজের মুখপত্র লিটলম্যাগ ‘প্রতিস্বর’ ক্ষুদ্র পরিসরে আবুল হুসেন স্মরণ সংখ্যা বের করেছে। আজ সন্ধ্যায় প্রতিস্বরের উদ্যোগে সুনামগঞ্জ প্রেসকাবে আবুল হুসেন স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।
##



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×