somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজাকার শব্দের বিতর্কে ফ্যাসিজম শক্তিশালীকরন

১৬ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাজাকার শব্দটা ব্যবহার নিয়ে যে অযাচিত বিতর্কটা হচ্ছে এটা ফ্যাসিজমকেই শক্তিশালী করবে। যারা ইনায়া বিনায়া 'আমি রাজাকার' শব্দটার ব্যবহার নিয়ে আপত্তি তুলছেন তাদের অনেককেই দেখেছি শাহবাগ প্রশ্নে ফ্যাসিজমের পক্ষ অবলম্বন করতে। অল্প বয়সে আমিও শাহবাগ আন্দোলনের স্পিরিটকে গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু এর রাজনৈতিক ও কালচারাল প্রজেক্টটা তখনো বুঝি নাই।

ওয়ান এলিভেন পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ থেকে কার্যত সকল অপজিশন দূর করার কালচারাল প্রজেক্ট হিসেবে শাহবাগ কাজে লেগেছে। যুদ্ধপরাধের বিচার এটার জাস্ট আইনি অংশ৷ কিন্তু এর কালচারাল পার্টটা বিবেচনা করতে হবে।

শাহবাগ বাংলাদেশে কিছু কৃত্রিম পরিচয় নির্মান করে। কিন্তু সমস্যা হল এ পরিচয়ে কারা পড়বে সেটা ডিফাইন করার এখতিয়ার নেয় তারা। 'রাজাকার', 'জামাত', 'শিবির' - এ আইডেন্টিটিগুলোকে শুধু মত্রই একটি দলীয় পরিচয়ের বাইরে নিয়ে গিয়ে একটি গ্রুপ আইডেন্টিটিতে পরিণত করে। অর্থাৎ, কেউ রাজনৈতিকভাবে এখন আর জামাত, শিবির, রাজাকার হওয়ার দরকার পড়েনা, বরং যে কেউই 'রাজাকার', 'জামাত', 'শিবির' হতে পারে শুধু নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে থকলেই।
এ বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নরূপ-
১. যে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে এবং বিচার করবার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে সে সরকারই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি; তাই, এ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলা মানেই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যাওয়া এবং রাজাকার, জামাত, শিবির হয়ে ওঠা। শুধু তাই নয়, এই সরকারকে টিকিয়ে রাখছে যেসব এজেন্ট (ভারত একটি), তাদের বিরুদ্ধে বলাও একই আচরণের সামিল।
২. যে কালচারাল এলিটরা এই আন্দোলন করেছে, তাদের সাংস্কৃতিক বয়ানের বাইরে, তাদের প্রচারিত আইডেন্টিটির বাইরে যাওয়া মানেই, জামাত, শিবির, রাজাকার হয়ে যাওয়া।
৩. ইসলাম এবং ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকেও মুক্তিযুদ্ধের সাথে যুক্ত করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের আইডেনটিটির প্রতিপক্ষ করা হয়েছে। যদি কেউ ইসলাম এবং ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট ধারণ করে তবে সেটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আইডেন্টিটির বাইরে চলে যাওয়ার সামিল। পাকিস্তান বিরোধীতাকে ইসলাম বিরোধীতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এখন, মূল ঝামেলাটা হয়েছে- যদি কেউ রজাকার, জামাত, শিবির হয় তবে তার সাথে সকল মানবাধিকার লঙ্ঘন করা জায়েজ এই সেন্টিমেন্ট সমাজে নির্মান করেছে শাহবাগ। এই পরিচয়কে একটা জুজু বানানো হয়েছে। ফ্যাসিজমকে ফ্যসিস্ট হয়ে ওঠার যত অস্ত্র তার মধ্যে এই অস্ত্রটি সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে৷

সকল অপজিশন বাংলাদেশ থেকে খেদানো হয়েছে এই পরিচয় দিয়ে বা এই পরিচয়ের সাথে সংযুক্তি দেখিয়ে। ডানপন্থী সকল শক্তিকে বশীভূত করা হয়েছে এই জুজুর ভয় দেখিয়ে। ফ্যাসিজম বামপন্থীদের মৌন সমর্থন আদায় করেছে এই জুজুকে কেন্দ্র করে। সাধারণ ছাত্রদের বহু আন্দোলন বানচাল করা হয়েছে এই পরিচয়কে ব্যবহার করে। নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হলেও, অবৈধ হামলা-মামলা হলেও, সবাই চুপ থেকেছে শুধু সেই জুজুর সংযুক্তির কারণে।

শিবির হওয়ার জন্য আবরার ফাহাদকে শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকতে হয় নাই, বরং উপরের বৈশিষ্ট্য গুলো ধারণ করতে হয়েছে। জাবিতে হিন্দুকে শিবির শুনতে হয়েছে শিবিরের সাথে সংযুক্তি থাকার খতিরে নয় বরং উপরের বৈশিষ্ট্যগুলোর কোন একটি ধারণ করার জন্য। বিশ্বজিৎ হত্যার শিকার হয়েছে অই একই কারণে।

একজন হিন্দুকেও যখন জামাত-শিবির-রাজাকার বলা হয় তখন এটা প্রমাণ করে জামাত-শিবির-রাজাকার এগুলো আর দলীয় পরিচয় না বরং গ্রুপ আইডেন্টিটি।
.
এখন, 'আমি রাজাকার' স্লোগান এই ঐতিহাসিক ভুল শোধরানোর একটা স্লোগান হয়ে উঠেছে। এই স্লোগান বাংলাদেশে ফ্যাসিজমের সবচেয়ে বড় টুলকে অকেজো করে দিচ্ছে।
'আমি রাজাকার' স্লোগান কখনোই বাংলাদেশে আসল রাজাকারদের নরমালাইজ করছেনা, কখনোই জামাত-শিবিরের পক্ষে জন সমর্থন তৈরি করছেনা। এত সোজা না এগুলা।
বরং যে জুজু পরিচয় দিয়ে সব করে ফেলা যায়, সে জুজু পরিচয়টাকে ভাঙছে। এই আন্দোলনের পর ধীরে ধীরে এই ফ্যাসিস্ট টুলের কার্যকারিতা কমে যাবে।
.
তাই, এই স্লোগানের মানে হল- আমি জনি তুমি কিছুক্ষণ পর আমাকে কী বলবা। আসো, আমি আগেই বইলা দিলাম আমি সেটা। পরবর্তী কথায় আসো, আসল আলাপে আসো। মানলাম আমি রাজাকার। বসো এবার কোটার আলাপ করি, অধীকারের আলাপ করি। আর কান খাড়া কইরা শোনো- আমি রাজাকার হইলেও তুমি স্বৈরাচার।
লিখাঃ জাহিদুল ইসলাম, আলোর শিক্ষণ, জাবি, অনুমতিক্রমে দেয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ৭:৫৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্রেকিং: তেহরানের আকাশ এখন ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৬ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:২৫



মধ্যপ্রচ্যের সিংহ বলে খ্যাত ইরান এর তেহরানের আকাশ এখন ইসরায়েলের হতে, চালছে আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণ, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইরানের ছোড়া মিসাইলে এখন পর্যন্ত ইসারায়েলে সর্বমোট ২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

Statement by Humayun Kabir, Secretary General of United for Victims of Enforced Disappearances (UVED), at the Meeting with the Human Rights Working Group on Enforced or Involuntary Disappearances, Office of the High Commissioner of the United Nations,

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৬ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:১৬

Statement by Humayun Kabir, Secretary General of United for Victims of Enforced Disappearances (UVED), at the Meeting with the Human Rights Working Group on Enforced or Involuntary Disappearances,
Office of the... ...বাকিটুকু পড়ুন

নেতানিয়াহু কেন ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নিলেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই জুন, ২০২৫ রাত ১১:০৯


যখন এই লেখা পাবলিসড হবে সে সময় ইরানের তেহরানে মারাত্মক হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। অবস্থাদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ইসরায়েল অল-আউট এটাকে নেমেছে ইরান কে শেষ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হযরত আলীকে (রা.) মাওলা বলতে বন্ধু বুঝানো হয়েছে, শিয়া ইরানী বা অন্য শিয়াদের দাবী অনুযায়ী তাঁকে নেতা বা খলিফা বুঝানো হয়নি

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৭:০৯




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

somewherein blog টিম এর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:৫৪


ব্লগ ব্যবহারের শর্তাবলী ২খ. যেকোন ধরণের মন্তব্য, যার মর্মার্থ আমাদের কাছে গঠনমূলক না হয়ে সংঘাতপ্রয়াসী / উস্কানীমূলক অথবা সমালোচনামূলক না হয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ মনে হলে তা নীতিমালা অনুযায়ী সরিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×