ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে ছেলেটিকে মারায় মর্মাহত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেটিকে মারায় হতবাক। বাংলায় পড়ায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারদের সাথে আমার টুকটাক মেশা হতো,এখনো আড্ডায় আসরে বসা হয়। অনেক স্যার বলতেন ১৪/১৫ তে, তুই কেন ছাত্রদল করিস? উত্তর মার্জিত আচরণের জন্যে। জি জেনারেশনের কাছে কথাগুলো গল্প। গল্প হওয়ার কারণ দেখেনি ছাত্রদলের সাধারণ ও সম্প্রীতিভিত্তিক রাজনীতি।
এ্যানি-সোহেল-দুদু ভাইয়েরা বক্তব্য রাখলে,মঞ্চের চারপাশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভীড় লেগে যেতো কথা শুনতে। তাদের বক্তব্যে অনেক কিছু শেখার থাকতো। মানুষ ছাত্রদলের শ্লোগান শুনে নিজে স্লোগানও অনুশীলন করতো, গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে সেই স্লোগান নিজেদের মতো দিতো। প্রসংশা পাবে ছাত্র ইউনিয়ন যারা গানে গানে শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে আহ্বান করতো। গল্পগুলো চাচা,মামা, বড় ভাই-বোনদের কাছে শুনতাম। ঢাকায় কেমন কি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ বাড়ি গেলে তাদের কাছে এলাকার রাজনীতি সচেতন মানুষ শুনতে যেতো।
রাজনৈতিক এ মিথস্ক্রিয়া নষ্ট হয়েছে হাসিনা ও ছাত্রলীগের হাত ধরে ১৬/১৭ বছরে। চোর ধরলে কি আচরণ হয়, কিভাবে আচরণ হয়, প্রতিপক্ষকে কিভাবে ডিল করতে হয়। এগুলো আচরণ। এ আচরণগুলোতে সব সময় আওয়ামী লীগ পিছিয়ে থাকে। বিএনপি; জামাত-শিবিরকে এতদিন যেভাবে ডিল করেছে, সাথে নিয়ে আন্দোলন করেছে তা মহাভারত জয় করার মতো।
উল্লেখ্যযোগ্য কয়টা ঘটনা ১. ১/১১ এ বিএনপি পতনে জামাত ব্যাপক দাঁত কেলিয়ে হাসতেন। এবার জরিপ কাজে দেবে। বিএনপি শেষ তারা বিরোধীদলে। আসন পাবে ৩০/৩৫ টা বিএনপি পাবে ৫/৬ টা। তো ইলেকশনে যেতে হবে, যেতেই হবে। দেশনেত্রী ২০০৮ সালে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, জামাত জোট হিসেবে বলে বসে ইলেকশনে যাবে। বিএনপি না গেলেও। ফোরামে দেশনেত্রীর আপত্তি সত্যেও নির্বাচনের সিদ্ধান্তের হয়। ফলাফল ও পরবর্তী রাজনীতির ভেতর দিয়েই গেলাম আমরা ১৬/১৭ বছর।
২. ১২/১৩ তে আন্দোলনে বিএনপি জোর দিলো সরকার পতনে / জামাত জোর দিলো নেতাদের মুক্তিতে। কেন? উনাদের নেতাদের ভেতরে রেখে বিএনপি নির্বাচন গেলে বিএনপি আবারও ২০০১ সালের মতো করবে, ওদের শুধু রাজনীতির ধার টানতে হবে। সরকার পতন আন্দোলন করলে হয়তো নেতারাও বেঁচে যেতো। নেতাদের মুক্তির জন্যে আরামবাগ-মতিঝিল-রাজশাহীতে যে ম্যাসাকার করে সে ম্যাসাকার থেকেই শুরু হয় সরকারের চরমপন্থী প্রশাসনিক উদ্ভব। টিকতে হবে। টিকলো মারাত্মক স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় ও ধ্বংসাত্মক আত্মঘাতী প্রক্রিয়ায়।
৩.সম্প্রতি ২৮ তারিখের বিএনপির সরকার পতন সমাবেশে জামাত তার প্রোগ্রাম ৩ টায় ক্লোজ করে, তখন বিএনপির উপর চলে নির্মম দমন-পীড়ন। পুরো রাজনৈতিক বাস্তবতা স্তব্ধ করে দেয়। চলে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন, হয় ২৪-এর নির্বাচন।
নিজস্ব রাজনৈতিক গ্রুপিং ও বাস্তবতা এবং অবৈধ সরকারের ষড়যন্ত্র। সবমিলিয়ে বিএনপিকে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পথ চলতে হয়৷ পথচলা বিরাট চ্যালেঞ্জ, পা ফেলতে হয় সাবধানে। ভারত চায় বিএনপি ধ্বংস হোক, রীতিমতো বিনিয়োগ। এদিকে আওয়ামী ফ্যাসিজম ও মাফিয়াতন্ত্রের রাজনৈতিক দায়মুক্তি, জনগণের বড় অংশ মেনে নিলেন দাবি আদায় মানে চাটুকারিতা, সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা নয়, সরকারের রূপ যে ফ্যাসিস্ট এ বিবেচনা নয়। কোটা আন্দোলন ব্যর্থ হলেও বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন করেই যেতো, কোটা সংস্কার আন্দোলন মেনে নিলে সাধারণ শিক্ষার্থী ঘরে ফিরতেন, ঈদের পর আন্দোলন নিয়ে ট্রল করায় ব্যস্ত হতো।
কোটা সংস্কারের প্রথমদিককার শ্লোগান--" বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোটা বৈষম্যের ঠাঁয় নাই "
ছাত্রদল কৌশলে জুড়ে দেয় "লাখো শহীদের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁয় নাই।"
বহুমত এক হয়ে আন্দোলন ভালোই জমে। অস্তিত্ব সংকটে পরে "তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার" স্লোগানে। ছাত্রদল আন্দোলনে গতি দেয় " কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার " স্লোাগনটি যোগে।
-এটা রাজনৈতিক দর্শন। রাজাকার শব্দটিই থাকলে বাংলাদেশের প্রগতিশীল ধারার, সাধারণ নামতো একাত্তরের সংগ্রাম ও স্বাধীনতা বাঁচাতে।
বহুরূপী আচরণেও দোষ জনগণকে দেয়া যায় না। রাজনীতি আবর্তিত হয় জনগনকে ঘিরে। রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ "সিদ্ধান্ত"। কোন সময়,কোন ঘটনায় কি সিদ্ধান্ত আবর্তিত হবে রাজনৈতিক নেতাকে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
এতগুলো বিষয়-ঘটনার আলোচনার কারণ রাজনৈতিক ও ব্যাক্তিক সিদ্ধান্ত কখন কি হবে? কিভাবে হবে তুলে ধরা।
চোর ধরা খেলে দেখা ক্ষুধার জন্যে চুরি করেছে কি না? সবাই লজ্জিত হওয়া, তাকে সাহায্য করা। ক্ষুধায় চুরি করলে রাষ্ট্রের সর্বনাশ, জনগণের মানবিক আচরণেরও সর্বনাশ। এতে রাজনীতির স্বার্থকতা নেই।
আসি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের মারধর ও মৃত্যু। বিএনপির কড়া নির্দেশ আইন নিজের হাতে তোলা যাবে না। হচ্ছে বহিষ্কার। বড় দল কার্যক্রম চোখে পড়ছে। মানুষের ক্ষোভ প্রশমন ও রাজনৈতিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। পুরোটাই আচরণগত বিষয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আচরণ। চর্চা করে শিখতে হয়।
আসি মূল কথায়, দীর্ঘ ১৬/১৭ বছরে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতি ছাত্রলীগ দেখিয়েছে তা ধরো-মারো-ছাড়ো। প্রেক্ষাপট পাল্টালেও আচরণ পাল্টায়নি। দীর্ঘ সামাজিক ও রাজনৈতিক আচরণের কুশিক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকান্ড। ওঁৎ পেতে থাকা ফ্যাসিবাদের স্বরূপ। এদের নির্মূল করতে হবে, করতেই হবে। হলে হলে টিকে যাওয়া ছাত্রলীগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে জোড়ালোভাবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকান্ডকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? জাহাঙ্গীরনগরে নেই ছাত্রদল। কারা আছে? ছাত্রলীগ, সাধারণ শিক্ষার্থী এবং গুপ্তধন। গুপ্তধনেরা প্রকাশ্যে সাধারণ ক্ষমা করে দিলেও আক্রোশ ও জিঘাংসায় একেকজন তীব্র ড্রাকুলা। ধাপে ধাপে মারতে যাওয়া মুখগুলো গুপ্ত হলেও আচরণ গুলো চিহ্নিত। ছাত্রদল নেই ক্যাম্পাসে, এত জিঘাংসা কার?
একটা গান বলি ---- ফখরুল সাহেব আপনার বাসায় কাউয়া কাদের গেছেনি,
ঠাকুরগাঁওয়ের বাসায় আপনি থাকতে তারে দিছেন নি
তার সাথে যে হিসেব বাকি, আছে কোটি জনতার...
তার পাশাপাশি আরেকটি গান দাঁড় করাই
--- মনে করো রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে দেশ পেয়েছি
দেশ দেশ দেশ বাঁচাতে রক্ত দিতে রাজি আছি
--- সংস্কৃতি ও চিন্তা অবচেতন মনের বিরাট বহিঃপ্রকাশ। যারা নিজেদের বুদ্ধি ও বিদ্যার স্টেকহোল্ডার দাবি করেন, তাদের মৌলিক চিন্তা ও সুর আছে? নেই। যে সুর আছে তা হিসাব-নিকাশের এবং প্রতিশোধের। কাক ময়ূরের পালক লাগালেই ময়ূর হয়ে যায় না।
শুনতে ভালো শুনায়, জনপ্রিয়তা পায় বলেই গানটি মহান মনোবৃত্তি তুলে আনে না। শীলা কি জোয়ানিতে ব্যাপক জোশ আসে, আমরা শীলাকে নিয়ে ঘর করি না। কেউ হয়তো উন্মাদনা মেটায়। শীলা জীবনের কথা বলে না, সংসারের কথা বলে না। অথচ কাজী নজরুলের আলগা করো গো খোপার বাঁধন ---
এখানে যে মানসী সে আমাদের চির লালিত।
এই যে চির লালিত বাংলাদেশ! এই বাংলাদেশ বিএনপি ধারণ করে,বিশ্বাস করে। এখানেই জীবনের গান। আভাস ও আহবান। পুরো ১৬/১৭ বছরের নির্যাতনে যার ঐক্যবদ্ধ মৌলিক সুর আসেনি, ত্যাগের মহিমা জাগেনি। তারা গান গায় হিসাব-নিকাশের। ১/১১ তে প্যারোডি গান গেয়েছিলো।
-- জলিলটা জেলেতে বাবরটা সেলেতে ১৭ বছর হবে সাজা তার, আমাদের বাবরের সাজার ১৭ বছর শেষ হয়েছে, জীবনের কাছে ফিরে আসবেন, রাজনীতি ও সংস্কৃতির কাছে ফিরে আসবেন। প্যারোডিরা প্যারোডিই থেকে যাবে। মৌলিক ও সাধারণ হতে পারবে না।
জ্ঞান জিনিসটাকে প্রজ্ঞায় পরিণত করতে হয়। এটি করতে বেষ্যার মনও বুঝতে হয়। লাঠি দিয়ে মেরে মেরে তাকে বিতাড়িত করতে হয় না। বেষ্যা হওয়ার পেছনের গল্প শুনতে হয়, জানতে হয়, রাতে সেই গল্প মনে করে চোখের জলে বালিশ ভেজাতে হয়।
যে মহান তার রিজিকের ব্যবস্থা ঐ পন্থায় করেছে! কি ভুলে! কি মহান উদ্দেশ্যে! বা কি শিক্ষা দিতে! সিজদাহ্য় পড়ে সেই অপরাধের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে হবে। কওমিপন্থীই বলেন, জামাত-শিবিরই বলেন। যে হুংকার ছাড়েন, আর যে বিদ্যা-বুদ্ধি ছাড়েন। রহমত ছাড়া জীবনে এসবের কোনকিছুই কাজে লাগে না।
আপনি যত একতরফা করতে চাইবেন, ততই স্বৈরাচার হবেন। ততই হারিয়ে যাবেন। চিন্তা করেন, আছেন যত ছাত্রলীগ, আছেন যত জামাত-শিবির,আছেন যত সমন্বয়ক ; সিদ্ধান্ত আপনার। ক্যাম্পাসে পুরোপুরি বিতাড়িত হবেন নাকি বহুমতের বিস্তার হতে দেবেন?
সাময়িক হয়তো আপনারা সুবিধায় আছেন, কিন্তু বিতাড়ন বড় করুণ ও লজ্জার ব্যাপার।
শামসুল আরেফিন, জবি