somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেইহ্যাম

২৬ শে আগস্ট, ২০১০ ভোর ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্ল্যাক মেটাল এর নাম শুনেছেন? হেভী মেটাল সঙ্গীত এর এক প্রজাতি আছে, এক্সট্রিম মেটাল, ব্ল্যাক মেটাল এরই অন্তর্গত। ব্ল্যাক মেটাল নিয়ে কথা শুরু করলে, মাস কাবার হয়ে যাবে। এইটুকু বলে রাখি, এই বস্তুর উদ্ভব ব্রিটেইন হলেও, আসলে এর উপস্থিতি নর্ডিক দেশ গুলোতেই।অত্যন্ত হিংস্র এই সঙ্গীত ও তার চর্চাকারীদের দর্শন, মূলতঃ প্রাক-ক্রিশ্চীয়ান ভাইকিং আগ্রাসনবাদ ও পেইগানিজম (paganism) এর সাথে আধুনিক রেইসিজম্ ও কট্টর জাতীয়তাবাদ এর মিশ্রণ বলা যেতে পারে একে।

বলা বাহুল্য, আমার খুব ই প্রিয় একটি সঙ্গীত ধারা (নাইলে আর এই প্যাচাল পারতে বসছি কেন্…)।তাদের দর্শন এর সাথে একমত না হলেও, গান গুলো অসাধারণ লাগে।
যাই হোক, ব্ল্যাক মেটাল নিয়ে আরেক দিন, আজকে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্ল্যাক মেটাল ব্যান্ড এর গল্প বলতে চাই আপনাদের।আগে ই বলে রাখি, হার্টের ব্যারাম থাকলে তফাত জান। সিরিয়াসলি।

জী, এই ব্যান্ডের নাম ই মেইহ্যাম (Mayhem)।শুরু করি তাইলে কাহিনী।
অনেকদিন আগে (১৯৮৪) নরওয়ে নামের এক দেশে অসলো শহরে এক ব্যান্ড গঠিত হয়, যার নাম রাখা হয় মেইহ্যাম। সদস্যসংখা ৩, উদ্দেশ্য ব্ল্যাক মেটাল এর জগতে তোলপাড় সৃষ্টি।তারা নিজেরাও সম্ভবত চিন্তা করে নাই, তোলপাড়টা কতখানি বিজাত হবে।

ভদ্রলোকদের নাম শুনেন আগেঃ
গীটার/ভোকালঃ নরকের পিশাচ ইউরোনীমাস (Euronymous, আসল নাম Øystein Aarseth)
বেইজ গীটারঃ লাশের কসাই (Necrobutcher, আসল নাম Jørn Stubberud)
ড্রামঃ মানহাইম (আসল নামই Kjetil Manheim)

এরা তিনজনে বাইর করলো প্রথম ডেমো, Pure Fucking Armageddon. এক্কেরে খাঁটি কেয়ামত যারে বলে, শুনলেই বুঝবেন।
এরপর ইউরোনীমাস নিজের গায়কী বিষয়ে সন্দিহান হয়ে উঠলেন এবং, এক সাথে নতুন দুইজন ভোকাল নিযুক্ত করলেন। তাদের নাম ও কম যায় না, একজন পাগলা (Maniac, আসল নাম Sven Erik Kristiansen), অন্যজন পয়গম্বর (Messiah আসল নাম Eirik Nordheim)
এই লাইন-আপ এ একটাই অ্যালবাম বের হয়, Deathcrush। এর পরপরই মানহাইম চাকরির খোঁজে (বেচারা মনে হয় কিছুটা ভদ্রলোক ছিলো, দেখেন না, নাম পালটায় নাই…) এবং পাগলা পাগল হয়ে (সত্যি! আল্লার কসম!) ব্যান্ড ছেড়ে দেন।

নতুন ভোকাল আর নরওয়েতে না পায়া, সুইডেন থেকে এক মরা ভোকাল জোগাড় হইলো। আসলে মরা না, নাম মরা (Dead, আসল নাম Per Yngve Ohlin) আর ড্রামার আসলো, নারকীয় হাতুড়ী (Hellhammer, আসল নাম Jan Axel Blomberg).
এই Hellhammer কে অনেকেই ব্ল্যাক মেটাল, তথা হেভী মেটালের শ্রেষ্ঠ ড্রামারদের একজন হিসেবে মানেন।

এইটাই ধরা হয় মেইহ্যাম এর সেরা লাইন-আপ, কারণ এই লাইন-আপই জন্ম দেয় De Mysteriis Dom Sathanas, ব্ল্যাক মেটাল ধারার ঐতিহাসিক এক অ্যালবামের।

এইবার শুরু হইলো কাহিনী।
মরা কিন্তু De Mysteriis Dom Sathanas এর চেহারা দেখে যেতে পারেন নাই।অ্যালবাম বের হওয়ার আগেই তিনি হাত কেটে ও শটগান দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন।সুইসাইড নোট এ সেরেফ লিখে যান যে ঘরের ভেতর গুলি বর্ষণ ও রক্তে মেঝে নোংরা করায় তিনি দুঃখিত।
এই অবস্থায় তাকে খুঁজে পেয়ে পুলিশ ডাকার আগেও ইউরোনীমাস প্রথম যে কাজটি করেন তা হইলো দৌড়ে গিয়ে পাশের দোকান থেকে একটা ডিসপোজেবল ক্যামেরা কিনে নিয়ে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে রাখা। এই ছবি পরে মেইহ্যামের Dawn of the Black Hearts অ্যালবামের কভার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
মরার উপর খাঁড়ার ঘা কিন্তু শুরু মাত্র। মরাকে কবর দেয়ার আগে, ইউরোনীমাস তার মাথাটা কেটে রাখেন, বন্ধুর প্রতি সম্মান রুপে। এই মাথার ঘিলু দিয়ে অতি উপাদেয় স্যুপ তৈরি করে তিনি ওই রাত্রে ডিনার করেন এবং খুলির অংশ দিয়ে নিজের জন্য একটি নেকলেস তৈরি করেন। আফসোস, আমার এমন বন্ধু নাই!

মরার আত্মহত্যায় মন ভেঙ্গে যাওয়ায় লাশের কসাই দলত্যাগ করেন।দলে যোগ হয় নতুন ভোকাল Attila Csihar ও বেইজিস্ট Varg Vikernes।
ভার্গের সাথে ইউরোনীমাস এর এমনই খাতির হয়, তারা দুইজনে মিলে চাইরখানা চার্চে আগুন লাগান এবং কয়েকদিনের মধ্যেই ইউরোনীমাসের কুখ্যাতিতে ঈর্ষাপরায়ণ ভার্গ, তাকে ২৭ বার স্ট্যাব করে হত্যা করেন!

এরপর আর কি, ভার্গ গেলেন জেলে। ব্যান্ড কিন্তু আজো আছে।Hellhammer, Attila এর সাথে নতুন গীটারিস্ট Blasphemer এবং পুরান সদস্য Necrobutcher মিলে আজো মেইহ্যাম জারি রেখেছেন।
কাহিনি একটু বাকি।

ওইযে জেলের ঘুঘু - ভার্গ, সে কিন্তু এর মধ্যে জেলের ভিতর থেকেই আরেক কিংবদন্তী সম ব্ল্যাক মেটাল ব্যান্ড বারযাম (Burzum) এর জন্ম দিয়ে ফেলছে। বারযাম এর আবার ও একাই সব, গীটারিস্ট, বেইজিস্ট,কী-বোর্ডিস্ট ভোকাল, ড্রামার! জ়েলে তো লাইভ পারফরম্যান্সের ব্যাপার নাই, তাই চিন্তাও নাই। মেইহ্যামের অ্যালবাম যেখানে ৬টা, বারযামের সেখানে ৭ টা!

শেষ কথা, এর মধ্যে ভার্গ একবার জেল ও পালাইসেন এবং ধরাও খাইসেন।গত বছর মে মাসে প্রবেশন এ রেহাই মিলছে তার।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×