somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরআন ও জেফারসন

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে উইলিয়ামবার্গের একমাত্র বইয়ের দোকানটিতে কোরআনের একটি ইংরেজি অনুবাদ বিক্রি হয়েছিল। সময়টা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র লেখার ১১ বছর আগে। সেই অনুবাদটির ক্রেতা ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের মূল লেখক এবং তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন। আজকের দিনে ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষদের অন্যতম নেতার কোরআন ক্রয়ের বিষয়টি নিঃসন্দেহে আমাদের বহু প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। জেফারসনের কেনা কোরআন অনুবাদটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের দুর্লভ বইয়ের শাখায় সংরক্ষিত আছে।


জেফারসনের সেই কোরআনের অনুবাদক ছিলেন জর্জ সেল। মূল আরবি থেকে এ অনুবাদ করা হয়েছিল। জেফারসনের কেনা অনুবাদ বইটি ছাপা হয়েছিল ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে।


ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের ইতিহাস ও মধ্য পূর্বাঞ্চলীয় অধ্যয়ন বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডেনিস এ. স্পেলবার্গ জেফারসনের কোরআন ক্রয় এবং ক্রয়ের উদ্দেশ্য বিষয়ে গবেষণা করে 'থমাস জেফারসনস কোরআন' নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন। স্পেলবার্গ খেয়াল করেন, মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে দেখতে পাওয়ার দূরদৃষ্টি ছিল জেফারসনের। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময়কালে মুসলিমদের প্রতি জেফারসনের ধারণা নেয়ার প্রচেষ্টা এবং সে উদ্দেশ্যে কোরআনের অনুবাদ ক্রয়কে বিস্তারিতভাবে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেন স্পেলবার্গ। এর মধ্যে জেফারসনের কোরআন নতুন করে আলোচনায় আসে যখন দেশটির প্রথম মুসলিম কংগ্রেসম্যান কেইথ এলিসন ২০০৭ সালে শপথ নেয়ার জন্য জেফারসনের কোরআন ব্যবহার করেন।


ধর্মের পরিচয়ে মানুষের মধ্যে কোনো ভেদ না করার পক্ষপাতী ছিলেন জেফারসন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এ মতামতকে খুব তাৎপর্যপূর্ণ না মনে হলেও আমাদের খেয়াল রাখা উচিত সময়টা ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দ। জেফারসন ধর্ম থেকে রাষ্ট্রকে পৃথক করার বিষয়টিও সামনে আনেন। তিনি ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে দার্শনিক জন লকের একটি উদ্ধৃতিকে নিজের লেখায় ব্যবহার করেছিলেন; 'তিনি (জন লক) বলেছেন, প্যাগান, মোহামেডান (মুসলিম) বা ইহুদি কাউকেই তার ধর্মের কারণে কমনওয়েলথের কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।' জেফারসন তার কাজে ও ধর্ম প্রশ্নে উদারতা দেখিয়েছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার সময়ে উত্তর আফ্রিকার মুসলিম জলদস্যুদের আমেরিকান জাহাজে হামলার বিষয়টিকে কোনো ধরনের ধর্মীয় রঙে না ডুবিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবেই দেখেছেন। নিজে প্রেসিডেন্ট হয়ে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে ত্রিপোলি এবং তিউনিসের শাসকদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে, তার দেশে ইসলামবিরোধী কোনো চিন্তা বা মত নেই। এমনকি তিনি এটাও বলেছিলেন যে, তারা সবাই প্রকৃতপক্ষে একই স্রষ্টাকে বিশ্বাস করেন। তবে ইসলাম নিয়ে তার মধ্যে কোনো নেতিবচাক ধারণা ছিল না- এমনটা বলা সঠিক নয়। ভার্জিনিয়ায় সরকার থেকে ধর্মকে পৃথক করার পক্ষে বিতর্কে তিনি ইউরোপে জন্ম নেয়া ইসলাম সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক চিত্রকে ব্যবহার করেছিলেন।




ইসলাম এবং মুসলমানদের সম্যকভাবে বুঝতে জেফারসন কোরআনের অনুবাদটি কিনেছিলেন। ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে মায়ের বাড়িতে আগুন লেগে জেফারসনের সব বই এবং কাগজপত্র পুড়ে যায়। বর্তমানে সংরক্ষিত কোরআনটির টিকে থাকা সম্পর্কে গবেষক স্পেলবার্গ দুটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন; হতে পারে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে কেনা কোরআনটি আগুন থেকে বেঁচে গিয়েছিল অথবা জেফারসন একই সংস্করণের আরেকটি কোরআন কিনেছিলেন। ১৭৬৫ থেকে ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে জেফারসন মুসলিম এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্ব নিয়ে চার সিরিজে নোট লিখেছিলেন। এ সময় এক জায়গায় জেফারসন লিখেছিলেন, 'তুর্ক (মুসলমান) বা অবিশ্বাসীরা কোনো মারাত্মক শত্রু নন।' থমাস জেফারসন ১৮০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। এ নির্বাচনে প্রতিপক্ষরা জেফারসনকে মুসলমান বলে অপপ্রচার চালিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে জেফারসন ত্রিপোলির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন। স্বাধীন হওয়ার পর এটাই ছিল কোনো বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সামরিক অভিযান। ত্রিপোলির সঙ্গে শান্তি চুক্তিতেও জেফারসন তার উদারতা এবং দূরদৃষ্টির স্বাক্ষর রাখেন। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, 'the government of United States of America is not in any sense founded on the Christian Religion… As the government of United States of America has in itself no character of enmity against the Laws, Religion or Tranquility of Musselmen.' মৃত্যুর এক বছর আগে বন্ধুর ছেলেকে উপদেশ দিয়ে জেফারসন লিখেছিলেন, 'প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসো আর দেশকে ভালোবাসো নিজের চেয়ে বেশি।' গবেষক স্পেলবার্গ তার বইয়ের শেষভাগে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হলে, তা হবে দেশটির প্রতিষ্ঠাতাদের ওয়াদার বরখেলাপ।

Source : Spellberg, Denise A, Thomas Jefferson's Qur'an :Islam and the Founders, Vintage Books, New York, 2014.
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×