somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেভিডের প্যাড (ছোট গল্প)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড্রেসিং রুমে অপেক্ষা করছিল ডেভিড। প্রতিপক্ষ টিম খুব শক্তিশালী, এক একটা ইয়া বড় ফাস্ট বোলার। ডেভিডের টিমও কম যায়না, পিওর প্রফেশনাল। কিন্তু যখন থেকে প্রতিপক্ষের বাউন্সারে বাউন্সারে একে একে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে সব বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যান, তখন তার ইস্পাতের মত নার্ভও একটু যেন কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু সহজেই নিজেকে সামলে নিল। অন্তত মুখ দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। জয়ের খুব কাছাকাছি তারা। যদিও টিমের সমন্বয়ের তখন ছেড়াবেড়া অবস্থা। দলের এই অবস্থাতে ডেভিড উত্তেজনায় থরথর কাঁপছে, রাগে শরীরে আগুন ধরে গেছে। যদিও মিডল অর্ডারে সে পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান, মিস্টার কুল।
ফোর্থ ডাউনে যখন সিমন্সও ক্লিন বোল্ড হয়ে ফিরে আসল তখন ডেভিডের পুরোই মাথা খারাপ অবস্থা। ব্যাট হাতে নিয়ে এক ছুটে বেরিয়ে গেল ড্রেসিং রুম থেকে। সারা মাঠভর্তি উল্লাস। অনেক সময় লেগেছে ডেভিডের এই উল্লাস অর্জনে। অনেক অপেক্ষা আর সাধনা। ডেভিডও অনেক সাহসী। কিন্তু এখন ক্রোধে তার শরীর টগবগ করছে। রক্ত গরম। সে জানে প্রতিপক্ষ, মাইন্ড গেমে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। যদিও ইনিংসের শুরুতে এমনটা কারোরই মনে হচ্ছিল না। প্রথম দুই উইকেট টিকে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল জয়ের খুব কাছাকাছি। এদিকে প্রতিপক্ষ টিমের স্ট্রাইকিং বোলার, ইয়া লম্বা ডিকচেনি তখন লম্বা রানআপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছয় ওভার বল করার পরও শক্তি যেন বেড়েই চলেছে। কোথাও ক্লান্তির চিহ্ন নেই। ক্রীজে ব্যাটসম্যান সেটেল হবার আগেই, আম্পায়ার দোদীর ইশারা তোয়াক্কা না করেই গতি দানব এগিয়ে আসতে থাকল। আম্পায়ার কিছুটা বিরক্ত হলেও খুব উচ্চবাচ্চ করলো না। সারা পৃথিবীর মানুষ দেখছে। এদিকে ডেভিডও প্রস্তুত। শক্ত করে গ্রীপ করেছে হ্যান্ডেল। একটা ছক্কা মারার ট্রাম্প কার্ড তার হাতেও আছে। এটা দিয়েই প্রতিপক্ষের মোরাল ভেঙ্গে দিতে হবে। সমস্যা শুধু একটাই। একবারই এই কার্ড সে ব্যবহার করতে পারবে। বল হাতে এগিয়ে আসছে চেনি। কিন্তু রানআপ এত দ্রুত শেষ করে ফেলছে যে সবকিছুকেই ছায়ার মত দেখা যাচ্ছে। আম্পায়ার কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুশ করে বেরিয়ে গেল চেনি।

তখনি সমস্যাটা চোখে পড়ল। কালো স্ক্রীণটা একটু দূরে সরে গেছে, বেশি হলে এক হাত। কিন্তু এই চূড়ান্ত মুহূর্তে এক হাত অনেক কিছু। ক্রীজের খুব কাছাকাছি চেনি, ডান পা শূণ্যে ভেসে উঠল আর তখনি বলের লাইন থেকে সরে এল ডেভিড। আম্পায়রকে ইশারা করল যে সে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে না। আম্পায়ার হাত ওঠালেন। ধপ! করে মাটিতে পা পড়ল চেনির। একটুর জন্য সংঘর্ষ হওয়া থেকে বাঁচল দুজন। সমস্ত ক্রোধ যেন আম্পায়ারের উপর। ধাতস্থ হতে ২০ সেকেন্ড সময় নিলেন দোদী, একবার তাকালেন ভিআইপি গ্যালারীর দিকে। চেনির হাত থেকে বল প্রায় বেরিয়ে যাচ্ছিল। তবুও আশ্চর্য্য নিয়ন্ত্রণে থেমে গেল চেনি। ক্রীজের অর্ধেকটা পর্যন্ত চলে এসে রক্তচক্ষু দেখালো, মুখে ক্রুর হাসি। পরিষ্কার বুঝিয়ে দিল যে পরের বলে কোন মায়াদয়া করবে না। ডেভিডও কম যায়না। চোখে চোখ রেখে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিল লড়াইটা সেও কম জানেনা। তবে মনের মধ্যে একটু শংকা; একমাত্র ট্রাম্প কার্ডটা সে ব্যবহার করে ফেলেছে। প্রশ্ন একটাই, মেন্টাল গেম এ কি সে জিতেছে?
আবার লম্বা রানআপের প্রস্তুতি। এগিয়ে আসছে চেনি। পুরো স্টেডিয়াম নিশ্চুপ। সবাই যেন বাতাসে টের পেয়ে গেছে, বিষয়টা আর শুধু ক্রিকেটে নেই। কেউ আর সিটে বসে নেই। পুরো স্টেডিয়াম দুই পায়ের উপরে। আগের চেয়েও লম্বা রানআপ নিল চেনি। এগিয়ে আসছে ছয় ফুট আট ইঞ্চির গতিদানব। স্তব্ধ স্টেডিয়াম। ধারাভাষ্যকাররাও নিশ্চুপ! ভিআইপি গ্যালারীতে বসা একটা বাচ্চা মুখ খুলতেই খপ! করে মুখ চেপে ধরলেন মা, বললেন, “এখন না”। আম্পায়ার ডান দিকে সরে গেলেন। ক্রমশ কমে আসছে দূরত্ব। দৃশ্যটা ক্যামেরা বন্দী করার জন্য সবগুলো লেন্স জুম করে আছে। স্ট্যাম্পের কাছাকাছি আসতে দুই পা-ই যেন শূণ্যে উঠে গেল চেনির। আম্পায়ার শুধু বুঝলেন একটা ঝড় যেন চলে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। হিংস্র শক্তিতে লাল বলটা ছুড়ে দিল চেনি। ভিআইপি গ্যালারীতে বসে থাকা মা, তার বাচ্চার মুখটা ছেড়ে দিয়ে একটুখানি হাসল। বলল, “এখন চীৎকার করো।”
…………………
…………………
…………………
হাসপাতালে জ্ঞান ফিরল ডেভিডের। কোমরের নীচ থেকে কিছু অনুভব করতে পারছেনা সে। দপদপ করছে মাথাটা। সময়জ্ঞান নেই। শুধু বুঝলো
দামী একটা হাসপাতালে শুয়ে আছে। রুমের দেয়ালে শেষ বিকেলের আভা। আর মনিটরের শব্দ। ব্যাথানশকের প্রভাবে এখনো পরিষ্কার হয়নি চেতনা। শুধু বুঝলো একজন নার্স ন্যাপকিন দিয়ে বারবার তার মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে।

রোগী, জ্ঞান ফিরে পেয়েছে দেখে নার্স ছুটে যেয়ে ডাক্তারকে ডেকে আনলো। কোমল চেহারার ডাক্তার কাছে আসলেন। ভদ্রলোককে খুব চেনাচেনা লাগলো লাগলো ডেভিডের। বয়স্ক ও জ্ঞানী। ডাক্তার কুশল জানতে চাইলেন নরমভাবে। কিছুটা আশ্বস্ত হয়েও চট করে ডেভিডের চোখেমুখে উদ্বেগ ফিরে এল।
খপ! করে ডাক্তারের হাত ধরে বলল, “আমার কি হয়েছে?”

ডাক্তার, এড়িয়ে যেতে চাইলেন প্রথমে। কিন্তু ডেভিড কোনভাবেই ছাড়বে না। তীব্র ব্যাথাটা আবারো দপদপ করছে। কিন্তু ডেভিড নাছোড়বান্দা। অগত্যা ডাক্তার জানালো যে ডেভিডের মেটাটারসাল গুড়োগুড়ো হয়ে গেছে আর লেফট ফিমার তিন টুকরা। অন্তত ছয় মাস লাগবে হাঁটার চেষ্টা করতে। সে সময়টা সবকিছু এডাল্ট ডায়াপার পরেই কাটাতে হবে, স্যানিটারি সব কাজ করতে হবে শুয়েশুয়েই। ডাক্তারের হাতটেনে কানের কাছে যেয়ে ডেভিড জানতে চাইল আরো একটা কিছু। জরুরি কিছু। নার্স সরে গেল। অনেক চেষ্টা করেও মুখে হতাশার ভঙ্গি লুকাতে পারলেন না ডাক্তার। ডুঁকরে উঠল ডেভিড।

সেদিন ড্রেসিংরুম থেকে উত্তেজনায় বেরিয়ে যেতে গিয়ে প্যাড পড়তে ভুলে গিয়েছিল ডেভিড। আশেপাশের কয়েকজন তাকে সতর্ক করে দিতে চাইলেও মুখ আটকে রাখে কয়েকজন।

হাসপাতালের নীচে তখন লাখো মানুষের ভীড়, ভীষণ ক্ষুব্ধ। দেশি বিদেশী টেলিভিশনগুলি ঝাঁকের মত গিজগিজ করছে। ডেভিডের চেতনা ফিরে পাবার খবরে ঢলের মত মানুষ হাসপাতালের দিকে রওনা দিয়েছে। এদিকে ক্ষুব্ধ জনতাকে ঠেকাতে জড়ো হয়েছে বিশাল মিলিটারী বাহিনী। দূর থেকে দেখা গেল ভিআইপি গ্যালারীতে বসে থাকা সেই শিশু আর তার মা মুখ ঢেকে আস্তে আস্তে হেটে আসছে।
শিশুটি প্রশ্ন করল, “মা, আমরা এখন কি করবো?”। “খেলার জন্য প্রস্তুতি নেবে।” মা জানালেন।

শরৎ চৌধুরী, ২/১৬/২০২৫। হাতিরঝিল, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:০২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=১। কে বা চিনে আমায় ২। চলো যে যার মত ভালো থাকি =

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:২৭


©কাজী ফাতেমা ছবি
#ভাবনা'রা
যত্ন করে লাগানো পাতাবাহার
কিংবা বারান্দার ঝুলে পড়া ঘাস ফুল
আর মানি প্লান্ট, কাঠ বেলী ওরা আমাকে চিনে,
রোজ বসে যেখানে দেখে নেই মুখশ্রী
ড্রেসিং টেবিলের আয়না সে আমাকে চিনে।

যে গ্লাসটায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীতে ফিরলেন বুচ ও সুনিতা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:৩৫

মহাকাশ স্টেশনে ৯ মাস আটকে থেকে পৃথিবীতে ফিরলেন বুচ ও সুনিতা


আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) দীর্ঘ ৯ মাস কাটিয়ে অবশেষে পৃথিবীতে ফিরতে সক্ষম হলেন দুই বিশিষ্ট মার্কিন নভোচারী... ...বাকিটুকু পড়ুন

'ওরা' পারেও....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭

'ওরা' পারেও....

২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর ফজরের ওয়াক্তে আমাকে আর Zahid Hassan কে র‍্যাব-১০ থেকে মিরপুর থানায় হস্তান্তর করে। সেই দিনই আমাদের কোর্টে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আনে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার রক্তাক্ত রমজান: বিশ্ব দেখছে নিরবে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২



রমজানের পবিত্রতা উপেক্ষা করে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন। এই হামলায় গাজার ডি-ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী ইসাম দা'আলিসসহ চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নুরের চে গুয়েভারা

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:২৯



(১)
কয়েক দিন যাবত রাজীব নুরের মারাত্মক ধরনের মন খারাপ, তাঁর সেলফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছে এখন আর চার্জ নিচ্ছে না, অনও হচ্ছে না! মনে হয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একদিকে ভালোই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×