somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"সান্টা ক্লজ" - তুমি কে ? কোথা থেকে এসেছে ?

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বলতে আপত্তি নেই আমি সান্টা ক্লজের অন্যতম একজন ফ্যান । আমি চিরকালই কার্টুনের ফ্যান আর কার্টুনে সান্টা ক্লজের উপস্থিতি খুব স্বাভাবিক । ফলে সেই শৈশবেই সান্টা আমার শিশু মস্তিস্কে আসন গেড়ে ফেলেছে । তাই ক্রিসমাস ডে উপলক্ষ্যে এই সান্টা ক্লজ গবেষণা । তাই শুরুতেই বলে ফেলি সান্টা ক্লজ এক কাল্পনিক চরিত্র হলেও এর উৎস কিন্তু এক সত্যকারের ব্যক্তি হতেই । তবে শত শত বছরে বিবর্তনে আজকের সান্টা সাথে সেকালের সান্টা মাঝে অনেক পার্থক্য রচেছে । তার আসল পরিচয় দেওয়ার আগে এই ভূমিকারও পর আরো কিছু ভূমিকা দেওয়া অবশ্যক ।
.
আমরা যে সান্টাকে চিনি সেই সান্টা খুবই স্থুলদেহী এক , মুখভর্তি সাদা দাড়িগোঁফ, যে কিনা টকটকে লাল রংয়ের কোট, লাল রংয়ের প্যান্ট, কোমরে চওড়া কালো বেল্ট, কালো বুটজুতা, মাথায় লাল টুপি পরা, পিঠে থাকে বিরাট এক ঝোলা যার মধ্যে থাকে বাচ্চাদের জন্য উপহার। সান্টা বাচ্চাদের ভালোবাসে, তার কাছে লক্ষ্মী ও দুষ্ট ছেলেমেয়েদের লিস্ট থাকে। ক্রিসমাস ইভনিং-এ নর্থ পোল থেকে সান্টা ক্লজ তার আটটি রেইন ডিয়ার নিয়ে আকাশে উড়ে উড়ে ভালো বাচ্চাদের বাড়ির চিমনি দিয়ে ঘরে ঢুকে গিফট রেখে যায়। আর সব বাড়িতেই দুধ আর কুকি খায় । বোধ হয় এই কারণেই সান্টা দেখতে মাশাল্লাহ সাইজ ।



অফটপিক - একবার "যেমন খুশি তেমন প্রশ্ন করো" নামে এক প্রতিযোগিতায় এক বাচ্চা মেয়ের সান্টার ডাইবেটিস আছে কিনা প্রশ্নে সান্টা ক্লজের টয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্টানকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলো ।
.
মিথ অনুসারে, সান্টাক্লজ সুদূর উত্তরে এক চিরতুষারাবৃত দেশে বাস করেন। আবার সান্টা ক্লজ সংক্রান্ত আমেরিকান উপাখ্যান অনুসারে, তাঁর নিবাস উত্তর মেরুতে। সান্টাক্লজ তাঁর স্ত্রী মিসেস ক্লজ, অসংখ্য জাদুকষমতা সম্পন্ন এলফ, এবং আট-নয়টি উড়ন্ত বলগা হরিণের সঙ্গে বাস করেন। তার দেওয়া অন্যতম উপহারগুলো হলো, চকোলেটের বর্ণ (সাধারণত বাচ্চার নামের আদ্যক্ষর) পেপারনোটেন (pepernoten), ক্রাউডেননোটেন (kruidennoten), স্পেকুলাস (speculas), কমলা, চকোলেট কয়েন্স, ইত্যাদি।

এই সান্টা ক্লজকে বিশ্বজোড়া পরিচিত করে তোলে আমেরিকানরা । যদি এই সান্টা ক্লজকে প্রথম এই দেশে আনে ওলন্দাজরা বা ডাচ অধিবাসীরা । ২। এখন আসি আসল সান্টা ক্লজের খোঁজে । কয়েকশ বছর আগে সেইন্ট নিকোলাস নামের এক প্রিস্ট/বিশপ/পাদ্রী/ফাদার ছিলেন । তিনি ছিলেন খুবই দয়ালু । ইতিহাসবিদরা বলেন তার জন্ম আধুনিক তুরস্কের নিকটবর্তী 'পাতারা' নামক কোনো এক গ্রামে। কথিত আছে, সেইন্ট নিকোলাস উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সব সম্পত্তি গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। সেইন্ট নিকোলাস এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা, এক দেশ থেকে আরেক দেশ চষে বেড়াতেন, যেখানেই কাউকে দুস্থ দেখতেন অথবা কাউকে বিপদগ্রস্ত দেখতেন, তিনি সাহায্য করতেন । উনি বাচ্চাদের ভীষণভাবে সাহায্য করতেন । চুপিচুপি তাদের জন্য গিইফ রেখে যেতেন । বাচ্চাদের অবাক করা হাসিমুখ তার খুব পছন্দ হতো । তার এই জনদরদী মনোভাবে এক সময় সারা ইউরোপে তার নামে জয়জয়কার শুরু হতে থাকে। সেইন্ট নিকোলাস পরিচিতি পেতে থাকেন বাচ্চাদের পরম বন্ধু ও সবার দুর্দিনের সাথী হিসেবে। এভাবেই একসময় সেইন্ট নিকোলাস সারা ইউরোপে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেইন্ট হিসেবে স্বীকৃতি পান এবং তার মৃত্যুর পর ৬ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদিনটি একটি শুভদিন হিসেবে পালন হতে থাকে । তার অনুসারীরা এই দিনটিকে সেইন্ট নিকোলাসের স্মরণে বাচ্চাদের চুপিচুপি গিইফ দেওয়ার প্রথা চালু করেন ।



আমেরিকান কালচারে সেইন্ট নিকোলাসের অন্তর্ভুক্তি হয় ১৮০০ শতকের শেষ অর্থাৎ ১৭৭৩-১৭৭৪-এর দিকে। নিউইয়র্ক পত্রিকায়ই প্রথম প্রকাশিত হয় একদল ওলন্দাজ ফ্যামিলি সেইন্ট নিকোলাসের মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সমবেত হওয়ার কথা । প্রকাশিত হয় 'সান্টা ক্লজ' নামকরণের ইতিহাস । এখানে বলাই বাহুল্য স্যান্টা ক্লজ নামটি কখনো সেইন্ট নিকোলাস হতে আসতে পারে না । এটা এসেছে মুলত নিকোলাসের ডাচ নাম "সিন্টার ক্লাস" থেকে ।
.
ঘটনাক্রমে লিখাটি চোখ পড়ে । বিখ্যাত লেখক ওয়াশিংটন আরভিং । ১৮০৯ সালে আরভিং তার লেখা বই 'নিউইয়র্কের ইতিহাস'-এ সিন্টার ক্লাসকে নিয়ে গল্প লেখেন, যা পরবর্তীতে 'সান্টা ক্লজ'কে আমেরিকায় জায়গা করে দেয় । অথচ এই সান্টা ক্লজের সাথে যিশু খ্রিষ্টের জন্মের কোন সম্পর্ক নেই ।
.
এই সান্টা ক্লজের গল্প শুনতে শুনতে পড়তে পড়তে বড় হয় টমাস নাষ্ট । যার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৮৮১ সালে টমাস নাস্ট একে ফেলেন তাঁর কল্পনাতে অবয়ব পাওয়া সান্টা ক্লজের কার্টুন । ব্যস এটাই এখন হয়ে গেলো সান্টা ক্লজ বর্তমান রূপ । হারিয়ে গেলো ছিপছিপে আলখেল্লা পরহিত সেইন্ট নিকোলাস ।



সময়ের সাথে সাথে এভাবেই উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ক্রিসমাস উপলক্ষে উপহার বিনিময় এক ধরনের সামাজিক প্রথায় রূপান্তরিত হতে থাকে। বিষয়টাকে ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী উদিয়মান ব্যবসাহীরা একে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে দিতে প্রচুর অর্থলগ্নি করা শুরু করে । কাঁটুন থেকে শুরু করে মুভি , ষ্টিকার , কার্ড , জ্যামিতি বক্স কিছুই বাদ রইলো না । ক্রমশ এটি সারা বিশ্ব ছড়িয়ে পড়তে লাগলো । উপহার প্রথাকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে নানা রকম সম্ভব-অসম্ভব স্টোরি তৈরি করতে লাগলো । তখন থেকেই দোকানে দোকানে পুতুল সান্টা ক্লজকে সাজিয়ে রাখা হলো । পত্রিকাগুলোতে নানা বাহারি রংয়ে এডভার্টাইজ করা হতো নভেম্বরের থ্যাঙ্কস গিভিং ডে পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় ক্রিসমাসের সিজন। শপিং মলে, যে কোনো স্টোরে বিশাল সাইজের ক্রিসমাস ট্রি, সান্টা ক্লজ, রেইন ডিয়ার, নানা ডিজাইনের টুনি বাল্ব দিয়ে সাজানো থাকে এমনভাবে যে সবার মনেই উৎসবের আমেজ চলে আসে। মানুষ নিজের থেকে বাড়ির আঙিনায়, বাগানের ভেতর-বাইরে সর্বত্র আলোক উজ্জল সান্টা ক্লজের পাপেট, রেইন ডিয়ার, স্লেজ গাড়ি, সান্টার ব্যবহারের লাঠি পর্যন্ত আলোকমালায় সাজিয়ে তোলে। দোকানে দোকানে বিক্রি হতে থাকে নানা ডিজাইনের কুকি, সান্টা ক্লজের লাল মোজা, সান্টার লাঠির আদলে তৈরি হয় ক্যান্ডি কেইন, চকোলেটের কত বাহার। আর থাকে নানা রকমের গিফট সামগ্রী। এক কথায় বিশাল ব্যবসা । আর আমরাও এই বিশাল ব্যবসার বাহিরে নয় । কত বান্ধবীকেই দেখলাম ক্রিসমাসের টুপি দিয়ে প্রোফাইল পিক দিতে । বুঝায় যাচ্ছে তার ব্যবসা প্রায় শতভাগ সাকসেসের পথে ।



সব মানলাম এবং বুঝলাম । উৎসবের আনন্দ নিলাম । কিন্তু সেইন্ট নিকোলাসের সেই আর্দশকে তারা কেউ বুকে ধারন করলো না । চে গুয়েবারার মত সেইন্ট নিকোলাসেও এখন ব্যবসার বস্তুতে পরিণত ।


তথ্যসুত্র- নেট জগৎ :)
মাঝে মাঝে আমারো সান্টা হতে ইচ্ছে করে

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×