somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেলুকাস লিফলেট

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি তখন টেনেটুনে ক্লাস টেনে পড়ি। রোজই আমাকে শহরের সবচেয়ে লোকস্য-লোকাল বাসটাতে ঝুলে ঝুলে আসা যাওয়া করতে হতো। বলাবাহুল্য, দেশে তখন যৌন রোগের মহামারি দশা চলছিলো।
পথে, অলিতে-গলিতে,খবরের কাগজের ভাজে, বাজারের ব্যাগে, বাসের জানালার ফাঁক গলে, মুড়ির ঠোংগায়, ৫০ পেরুনো বৃদ্ধের অফিস ফাইলে কিংবা রিক্স্বায় হুডের ছায়াতলে বিশেষ মুহূর্তে থাকা কপোত-কপোতীর কোল জমে যেত যৌন রোগের মহৌষধের বিজ্ঞাপনী লিফলেটে। এদের সবাই ই আবার ভীষণ প্রকৃতি প্রেমিক, উল্লেখ্য হারবাল ছাড়া তারা আর কোন চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতেন না (ex: ক*কাতা হারবাল)।

সে সময়টায় লোকাল বাসের মাঝবয়সীদের আড্ডার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকতো সেই সব রঙচটা বিজ্ঞাপনের ভুলভ্রান্তি শোধরানো, সেসব ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, এদের বিরুদ্ধে কি ব্যাবস্থা নেয়া উচিত পুলিসের ইত্যাদি ইত্যাদি...।
স্কুলগামী উঠতি বয়সী ছেলেটাও চাইতো পাশে থাকা মুরুব্বির চোখ এড়িয়ে একটা লিফলেট ব্যাগের ভেতর পগার-পাঁড় করে দেয়া, অতঃপর টিফিনের ফাকে সেই লাল-নীল লিফলেটের ব্যবচ্ছেদ বিন্যাস এবং হাসির স্রোতে গড়াগড়ি খাওয়া বিজ্ঞাপনে থাকা নানান 'non-sensored' শব্দ গুলো নিয়ে।
অফিস পাড়ায় বন্ধুসুলভ সহকর্মীর সাথে কানাকানিতে উঠে আসত ফিসফিসিয়ে, “অমুক সাহেব, ওরা যে লিফলেটে লেখে যেগুলা,আসলেই কি কাজ করে ওইরকম,আপনার কি মনে হয়??!!” (ল্যাও ঠ্যালা!)
এমনকি চারপাশ দেখে পা সরিয়ে জুতার সোলের নিচে চাপা পড়া লিফলেটটা একটু-আক্তু দেখে হয়তো সোনালি অতীতে ফিরে যেতেন কিছু দিবাস্বাপ্নিক দাদুরা।

সব কিছু ছাপিয়ে ধিক্কারের পাত্র/পাত্রী হয়েছিলেন কারা সবচেয়ে বেশি জানেন? সেই মানুষ গুলো যারা সমস্ত দিন কাঠ ফাটা রোঁদে পুড়ে এই বিব্রত কর লিফলেটের স্রোত বয়ে বেড়াতেন আমাদের মাঝে শহরের নানা প্রান্তে আর রাতে ঘরে ফিরতেন মাত্র ১০০ টাকার সম্বল হাতে। ভদ্রতার খাতিরে অনেকেই হয়তো থুতুটুকু ছুড়তে বাকি রেখেচিলেন তাদের প্রতি, প্রচণ্ড আক্রোশে অনেকেই “চটির” ভাষা ছাড়িয়ে করেছেন গালিগালাজ। আমি বলছি , খুব ভালো করেছেন, সুশীল সমাজের শার্ট-প্যান্ট পড়ুয়া সুসভ্য সদস্য হিসেবে আপনারা যথার্থই করেছেন। কিন্তু কই, এরা এই কাজ ছেড়ে দিলে পরে রোজ রাতের ১০০ টাকার চাল খড়ির হিসেবটা আপনাদের তো কোনদিন করতে দেখি নাই। ‘বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা’ নামক একটা বস্তুর দোহাই দিয়ে কয়েকজন ভদ্দর লোককে গলার রগ ছিড়তে দেখেছি, কিন্তু আদৌতেও তারা একটা শূন্য কোঠার খোজ দিতে শুনি নাই কোনদিন।
জানি না, কথার শুরু কিংবা শেষ প্রাসঙ্গিক হচ্ছে কিনা, তবুও একটা ছোট্ট ঘটনা মনে দিয়ে শেষ করছি,
-মতিঝিলের চত্বরে বাস থেমেছে মাত্র, জানালা গলে এক মহিলা যেই একটা লিফলেট দিতে গেল, এক ভদ্দর লোক মহিলার হাতটা ধরে চেঁচিয়ে উঠলেন, “লজ্জা করে না এই কাম করতে? এর চেয়ে ভিক্ষা কইরা খাইতে পারস নাহ??” ৫ মিনিট পরেই ইত্তেফাক মোড় থেকে একজন ভিক্ষারী উঠলেন বাসে, ঠিক সেই ভদ্দর লোক বরাবর আসার পর এবারও তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, “ভিক্ষা করস কেন? কিছু একটা কইরা খাইতে পারস নাহ???”

সুখবর!! সেই দিন আর নাই, ডিজিটালাইজেশনের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে লিফলেটের যুগ, ফিরে এসেছে সুশীল সমাজে শান্তি, আর সেই সমস্ত যৌন রোগের মহান সব মহৌষধের ঠাই জুটেছে মঠেল কন্যাদের হৃদ কাপান বিলবোর্ডের পাশে, ডিভিডি বক্সের ব্যাক কাভারে, ডিস চ্যানেলের ট্যাগ লাইনে, আরও কত কই...
এখন তো সব ঠিকঠাক সুশীল সমাজ? তবে ওই ১০০ টাকার দিনমজুররা কোথায় কি করছে জানেন? খোজ রাখেন? আমি জানি আপনারা আংরেজি কপচে আমায় উত্তর দিয়ে বসবেন, “thats not a part of our business”

Isn't it?
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×