somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[ DREAM HAS NO LIMIT ! ]

২৮ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়ঃ মধ্যদুপুর
স্থানঃ প্রবর্তক মোড়

দুই বন্ধু (আমি আর অমি ) বসে চা খাচ্ছি । অমি বেচারা চায়ের সাথে পেইনও খাচ্ছে । আমার ২.৩০ থেকে ক্লাস । তার কেনাকাটা সংক্রান্ত কাজে সাহায্য করার খেসারত দিচ্ছে আমার সাথে আকাইম্মা বসে থেকে । চা খাওয়া শেষ । এ টপিক থেকে ও টপিক ঘুরে এসে অমি আমাকে জিজ্ঞেস করলো “ ওই! তোর HSC এর পয়েন্ট যেন কত? আমি তাকে আমার ঐতিহাসিক রেজাল্টটা বলার পর পাশ থকে একজন মধ্য বয়স্ক লোক,মুখে অল্প কাঁচা পাকা দাড়ি ; এতক্ষন বসে ছিল হয়ত খেয়াল করিনি, বলে উঠলো “আমার ছেলেমেয়ের চেয়েও তো কম” ।
আমি বুঝে উঠতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম । “মানে”? লোকটি এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো “আপনার রেজাল্ট আমার ছেলেমেয়ের চেয়েও কম”।
আমি ঠিক লজ্জা নয়, অনেকটা কৌতুহলেই জিজ্ঞেস করলাম, কত পয়েন্ট? A+? তিনি বললেন A+ তো পাইছেই A+ চেয়ে বেশি পাইছে । ততক্ষনে বুঝে গেছি তিনি রিকশা চালান । জানলাম তার এক ছেলে সরকারি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছে কদিন আগে, মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সায়েন্সে তৃতীয় বর্ষে পড়ে আর ছোট ছেলে চট্টগ্রাম কলেজে HSC দ্বিতীয় বর্ষে । বাংলাদেশে অনেক রিকশাওয়ালা বাবার সন্তান সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছে,অনেক কষ্টে সংসার চালিয়েছে কিংবা চালাচ্ছে এসব আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি ।তার মধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাও আছেন । আমাদের আরো দুর্ভাগ্য যে এ সংখ্যাটা নেহাতই কম নয় । এসব কথা যেকোন বাবা মায়েরই পড়ালেখা ফাঁকি দেয়া সন্তানদের উদ্দেশ্যে বলা প্রিয় টপিক । বিশেষ করে দুই প্রধান পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার পর পেপারে কয়েক মাস এসব যা নিয়ে লিখা হয় তা আমাকে বাবা শুনিয়ে শুনিয়ে পড়তেন । কিন্তু সামনাসামনি কখনো দেখা হয় নাই বলে অনেকটা কৌতুহলেই তাকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকি । যা শুনেছি তা ধারাবাহিক ভাবে বলতে গেলে এমনটি দাঁড়ায় … ‘ লোকটির নাম সুলতান ।গ্রামের বাড়ি রাজশাহী । বর্তমানে চকবাজারে থাকেন । ১৯৮০ সালে ইন্টার পাশ করার পর চট্টগ্রাম আসেন চাকরির উদ্দেশ্যে । পেয়ে ও যান । কিন্তু ঘুষের টাকা না দিতে পারায় তার সে চাকরি আর আশার মুখ দেখেনি । কিন্তু কদিন পর তিনি এমন একজনের সাথে পরিচিত হন যে তাকে নিজ খরচে ‘ওমর গনি এম ই এস কলেজে’ ভর্তি করিয়ে দেন । পরবর্তি চার বছর সে লোকটার বাসার গ্যারেজে রাতে ঘুমাতেন । বিএ পাশ করার পরও তিনি কোন চাকরি না পেয়ে হয়তো সে ক্ষোভেই রিকশাকে বেছে নেন জীবন সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে । সেই থেকে আজও রিকশা চালান । তার ছেলেমেয়েদের কখনো প্রাইভেট পড়াতে দেননি ।ভোর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পড়িয়েছেন । কখনো কখনো নিজে বুঝিয়ে দিয়েছেন ।“রাতে ঘুমানোর আগে ছেলেমেয়েদের মাঝে মাঝে বলতাম “ DREAM HAS NO LIMIT !”
তাকে প্রশ্ন করলাম, আপনার ছেলে তো চাকরি পাইছে । তবুও রিকশা চালান কেন ? তিনি বললেন এ বছরের পর আর চালাবেন না , বয়স হচ্ছে, এখন মাঝে মাঝে রিকশা টানতে কষ্টও হয় । ছেলেমেয়ে এবার তার দেখভার করবে । কথাবার্তার মাঝে আরো জানতে পারলাম তিনি রাতে দুইটা টিউশনি করান । তার স্ত্রী হাউজিং সোসাইটির একটা বাসায় কাজ করে । যে রিকশাটা এখন চালান তা তার নিজের । তার মেয়ে কে ল’ তে পড়ানোর স্বপ্ন ছিলো । আমি তার ছেলেকে পড়িয়ে সে স্বপ্ন পূরনের জন্যে বললাম । তার জীবনে কিছু মানুষের অবদানের কথাও বললেন । আরো অনেক কিছু ।

সব কথপোকথনের একসময় শেষ আসে ।এ ক্ষেত্রেও তাই । তিনিও একসময় রিকশাটা চালিয়ে দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেলেন । আমি ভাবলাম এ রকম ঘটনা আমি আগেও অনেক শুনেছি,পড়েছি । এইতো মাত্র কদিন আগেই খুব কাছের একজনের মুখেও এরকমই একটা ঘটনা শুনেছি এবং তা ভুলে যেতেও সময় লাগেনি । কিন্তু এ লোকটাকে ভুলতে আমার কষ্ট হবে তার ঐ কথাটার জন্যে … “রাতে ঘুমানোর আগে ছেলেমেয়েদের মাঝে মাঝে বলতাম “ DREAM HAS NO LIMIT !”

জীবন যুদ্ধে আপাত জয়ী একজন রিকশাচালকের মুখে এ কথাটুকু আমার জীবনে তাকে একটি চিরস্থায়ী স্মৃতিতে পরিনত করে দিলো । আমি জীবনে খুব কম স্বপ্ন দেখেছি । এমনকি, বড় হয়ে কি হবো ? এ স্বপ্নও কখনো দেখিনি আমি । কেউ জিজ্ঞেস করলে চুপ করে থেকেছি । কখনো কখনো হ্যাবলার মত বলেছি “ এখনো ঠিক করিনি” ।
কিন্তু আজ এ কথা শুনার পর মনে হলো , স্বপ্ন তো দেখতেই পারি আমি । সীমাহীন সে স্বপ্নের সীমানা হয়তো চিরকালই অধরা । কিন্তু হাতটা তো আমরা বাড়াতেই পারি !
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৩৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×