মহাকবি 'আখতারুজ্জামান আজাদ' । 'আমিত্ববাদ' সংস্কৃতির নতুন সংস্করণ । বন্ধু মহলে তার এই আমি আমি'র কথা শুনে তাকে ফেইসবুকে এড করলাম । এবং কদিনেই বুঝলাম এ ব্যাটার নিজেকে জাহির করা ছাড়া কোন কাজ নাই । এসব দেখে এক প্রকার মজাই লাগে । যেখানেই ঘাস আছে সেখানেই মহাকবির গরু আছে । মহাকবির লিখা থেকে জানা যায় । মহাকবি ঢাঃবিঃ এর আইন বিভাগে পড়ালেখা করেন, মহাকবি সারাদিন চা খান । চা খাচ্ছেন এমন ডজন খানেক ছবি তার ফেসবুক ওয়ালে । মহাকবির অনেক বড় একটা জুলফি আছে । সে জুলফি মহাকবির অহংকার । একদা তার জুলফি টানতে চাওয়ায় তিনি বলেছেন তার জুলফি কয়েকজন নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ টানতে পারেন । আমার আর তার জুলফি খানা টানা হলো না ।
নাম যেহেতু মহাকবি , স্বাভাবিক ভাবেই তিনি কবিতা লিখেন । বাজারে কবির কয়েকখানা বই আছে । তার প্রায় কবিতা কাম,নারী এবং ধর্ম নিয়ে । তিনি নিজেই নিজেকে কাম্যবাদী ঘোষনা করেছেন । তিনি রমনী প্রিয় । এ ব্যাপারটা নিয়ে পরে লিখছি । তার স্ট্যাটাস পড়ে এত দিনে এ বুঝতে পারলাম নার্সিসাস এ কবি নিজের খুব ভক্ত । তিনি সারাদিন মানুষের বানান ভুল খুঁজে বেড়ান কিন্তু তার ভুল ধরিয়ে দিলে আপনি শেষ ! না না উনি আপনার সাথে বেশিক্ষন তর্কে জড়াবেন না । উনি আপনাকে ব্লক মারবেন । একটু আগে এ মহাকবি আমাকে এবং কয়েকজনকে ব্লক করিয়াছেন । আমরা মহাকবির মিথ্যাচার নিয়ে সামান্য আগ্রহ প্রকাশ করিয়া ছিলাম বলে । মহাকবির সাথে কদিন আগে লাগলো তার স্ট্যাটাসের ভাষা এবং লিখা নিয়ে ।
কবি ঘোষনা দিলেন " It's totally prohibited to comment in 'Bangla in English letters' on any of my facebook posts. Please comment either in 'Bangla in Bangla letters' or in 'English in English letters'. The comments made in 'Bangla in English letters' will be deleted by me.
['Bangla in English letters' can be used in inbox chatting and in mobile SMS.]"
শেষ লাইনটা আবার পড়েন । কিন্তু ভাই এটা ছেলেদের জন্যে না । ওটা তার সাবালিকাদের জন্যে ।
সেই স্ট্যাটাসে তিনি নিজে ভাইকে 'bhai' লিখায় তার সমালোচনা করায় তিনি তার আইন বাতলালেন ।
'' একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্যে একটি বিদেশী শব্দ সেই ভাষাতেই লিখতে হয়, যে ভাষাতে বাক্যটি লেখা হয়। বেহুদা ছিদ্র খুঁজবেন না। আমি যে জাতীয় লেখা লিখতে বারণ করেছি, তা নিশ্চয়ই আপনি বুঝে গেছেন।
@একটি কাল্পনিক চরিত্র "
October 20 at 12:56pm via mobile"
ছবি
ভাই আমি আপনার আইনের ছিদ্র খুঁজে পেয়ে এমন করলাম । কিন্তু আপনি যে অন্য ছিদ্রের পাগল !!
একই স্ট্যাটাসে কবির জনৈক সাবালিকা বাংলিশে কমেন্ট করলে কবি তা সে রমনীর অতি আবেগের বহিঃপ্রকাশ বলে ঘোষনা করেন ।
ছবি
এসব কোন কিছুই না বলেই ধরে নিলাম ।এসব প্রায় প্রতিদিন দেখি । বলতে ইচ্ছা করে না । ধরে নিলাম তার কাম বোধ বেশি বলে তিনি এমন করেন ।
কিন্তু আজ সকালে 'সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়' এর মৃত্যুর পর বেশ ঘটা করে একখানা স্ট্যাটাস দিলেন মহাকবি । স্ট্যাটাস টা দেখে মাথাটা টং করে উঠলো । অলৌকিক এ স্ট্যাটাসে কবি ঘোষনা দিলেন
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করেছিলাম (২১ জানুয়ারি ২০১০/ বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি), "কবি হতে চাই, কী করতে হবে, দাদা?"
তিনি বলেছিলেন, "বেশি বেশি প্রেম করো, বেশি বেশি ছ্যাঁকা খাও!" পালটা প্রশ্ন করলাম, "একটি প্রেমই তো করতে পারলাম না, বেশি বেশি প্রেম কীভাবে করব?" সুনীল বললেন, "করার মতো একটি প্রেম করো, খাওয়ার মতো একটি ছ্যাঁকা খাও!"
সুনীলের সুনীলবাক্যটি আমার মনে সেই থেকে গেঁথে আছে এবং নিজেকে প্রায়ই জিজ্
ঞেস করি -- আমি কি করার মতো একটি প্রেম করেছি? আমি কি খাওয়ার মতো একটি ছ্যাঁকা খেয়েছি?
কিন্তু এ মাসের প্রথমে তিনি এক স্ট্যাটাসে একই দিনের ঘটনার কথা লিখলেও সেখানে এ কথোপকথনের ব্যাপারটা উল্লেখ ছিলো না । তিনি সেখানে লিখেছিলেন
" ২০১০ সালের ২১শে জানুয়ারি। বন্ধু জহির চৌধুরী আমাকে নিয়ে চলল কেন্দ্রীয় শিশু অ্যাকাডেমিতে, গিয়ে দেখি খেলাঘরের একটি অনুষ্ঠান চলছে। প্রধান অতিথি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ঐ বছর প্রকাশিতব্য আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোর কমপোজকৃত কপি সেদিন আমার হাতে ছিল। একটি কবিতা সুনীলকে দেখানোর লোভ সামলাতে পারলাম না। প্রাথমিক আলাপের পর তাকে বললাম
- দাদা, দয়া করে আমার একটি লেখা পড়ে দেখবেন?
: না, আমার সময় হবে না।
- (লজ্জা পেয়ে বললাম) ঠিক আছে, দাদা! কাগজটি রেখে দেন দয়া করে। পরে সময় পেলে একটু পড়ে দেখবেন নাহয়।
: না, পরেও আমার সময় হবে না!
খানিক বাদে সুনীলকে মঞ্চে ডাকা হলো। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সুনীল বললেন, "শিশু-কিশোর-তরুণরা জাতির ভবিষ্যত্কাণ্ডারি। আমাদের প্রবীণদের উচিত তরুণদের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করা, উত্সাহিত করা..."
মহাকবির আজকের স্ট্যাটাস
মহাকবির সেদিনের স্ট্যাটাস
অথচ মারুফ রাসুল এর একটা পোষ্ট থেকে জানলাম আশে পাশে যাবার কোন উপায় সেদিন ছিলনা
কিন্তু সেখানে তিনি গেলেন এবং যে সুনীল তার কবিতা পড়েন নি এবং পড়বেনও না বলে তাকে তাড়িয়ে দিলেন সে সুনীল তাকে প্রেমের রসায়ন শিখাচ্ছেন ? বললেন "করার মতো একটি প্রেম করো, খাওয়ার মতো একটি ছ্যাঁকা খাও!" হাউ ফানি !
সেপ্টেম্বরের ছয় তারিখে সুনীলের তাকে অবহেলা করা নিয়ে স্ট্যাটাস আর আজকের স্ট্যাটাসের মধ্যবর্তী সময়ে আজাদ মিয়া নিজেকে আমাদের কাছে মহাকবি হয়ে গেলেন ।
আজ লিখলেন
"এই আমি অর্বাচীন এক পদ্যকার; আমাকেই ফেসবুকে অনেকে কবিতায় ট্যাগ করে, ইনবক্সে কবিতা পাঠায়, পাঠিয়ে অনুরোধ করে যেন তাদের কবিতাখানি একটু পড়ে দেখি, একটু মন্তব্য করে দেই কেমন হয়েছে; অনেকে দেখা করে নিজের সমস্ত কবিতার পাণ্ডুলিপির ফটোকপি দিয়ে যায় দেখে দেয়ার জন্যে, কেউ বা গছিয়ে দিয়ে যায় স্বরচিত বইয়ের 'সৌজন্য কপি'! পাঁচ শতাংশের লেখা পড়ি, বাকিদেরটা পড়ি না; পড়ার সময় বা ধৈর্য হয় না, পড়া সম্ভবও না। এখন বুঝি -- কবিদের প্রতি মানুষের শত চাওয়া, সহস্র আবদার; আবদার রক্ষা না করলেই অভিমানের খেয়া!"
বাহ ! কি সুন্দর । এ স্ট্যাটাস তার সুনীল শোকগাঁথার অংশ ! কদিন আগে ইউনিএইডের লেকচার শিটে নিজের কবিতা লিখে দিয়ে বেপুক বিনোদন দেয়া এ কবি এখন আমি আমি করতে করতে মহাকবিতে রূপান্তরিত হয়েছেন । এসব আহাম্মকদের জন্যে পাবলিক কবি দের খারাপ চোখে দেখে । যে কবি তার বিরূদ্ধে আনা অভিযোগের সামনা সামনি হতে পারেননা । ভয়ে সমালোচকদের ব্লক মারেন , গালাগালি করেন তাদের থেকে দেশ ভালো কিছু আশা করতে পারে না । তার কবিতাগুলো কোন কামার্ত পুরুষ মধ্যরাতে তার কামার্ত নায়িকাকে শুনিয়ে যৌনাভূতি জাগিয়ে তুলবে শুধু ।
এর বেশি তার থেকে আশা করিনা । শুধু আশা করি আমাদের তরুনদের এ 'আমিত্ববাদ' বা 'আমি আমি' রোগটা সেরে উঠূক ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


