বাসায় গেলে আমার খুব রাগ হয়!! মহিলাটা যে কী করে না!!
আমি বাসায় যাওয়ার আগেই কোর্মা, দই বড়া, কাস্টার্ড- যেগুলো যেগুলো আমার পছন্দ, আম্মা সেগুলো বানিয়ে রাখে। বাসায় পৌছুলেই প্রথমে শরবত আছেই। এরপর রাতের খাবারের পর এক গ্লাস দুধ। এই বুড়ো বয়সে দুধ খেতে ভাল্লাগে বুঝি?
আবার কথা নেই বার্তা নেই, কিছুক্ষণ পর পর পানির গ্লাস নিয়ে হাজির।
আর সময়ে সময়ে ফল-ফলাদি তো আছেই। “বাবা, এটা খেয়ে নে, ওটা খেয়ে নে।”
বেঢপ সাইজের ভুঁড়ির ভাস্কুলার বান্ডল কি আর সাধে বাড়ে!!
ঘুমানোর আগে এক বাটি আঙ্গুর পাশে রেখে বলেন,” বেশি ল্যাপটপ গুতাস না। কানা হয়ে যাবি। আর রাতে কম্পিউটার গুতাতে গুতাতে ক্ষিদে পেলে রাতে খেয়ে নিস। এত করে বলি, রাতে কিছু খাইস না। কথা তো শুনস না।“
“আর হুম, রাতে ঘুমানোর আগে বাবা মশারি টানাস। টাঙ্গিয়ে নিবি, নাকি আমি টাঙ্গিয়ে দিব?”
আমি নাছোড়বান্দার ঘ্যানঘ্যান থেকে বিরক্তি এড়াতে বলি, তুমি ঘুমাতে যাও, আমি টানিয়ে নিব।
রাতে ঘুমের চোটে ভুলে মশারি না টাঙ্গিয়ে শুয়ে পড়লে ভোররাতের দিকে ঘুমের ঘোরে দেখি কেউ একজন এসে মশারি টাঙ্গিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
আবার বাসার বাইরে যাওয়ার সময়ও সমস্যা। শীতের কাপড় নিয়েছি কিনা। মাফলারটা গলায় ঠিকমত পেঁচানো কিনা। আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে ফুঁ দিয়েছি তো! মানিব্যাগে টাকা আছে কি না! মোবাইল খোলা আছে তো- এরকম হাজারো প্রশ্ন।
আর বাইরে গিয়ে তো আরো বেশি প্রশ্ন। ঘণ্টায় ঘন্টায় ফোন। কোথায় আছিস, সাথে কে আছে! বাড়ি কখন আসবি। রাতে বাসায় ডিনার করব নাকি বাইরে খেয়ে নিব!
পুরাই ইন্টেরোগেশন!
হাবিজাবি!!
বড় হয়েছি ঠিক, এখনও আমাকে বাচ্চা মনে করে তাঁর করা আচরণ আর গেল না।
অদ্ভুত জ্বালা তো দেখি!!
রাতে লাইট নিভালে অনেক ভাবনা খেলে মাথার ভিতর। ভাবি এই মহিলা বেঁচে আছেন দেখেই এসব মধুর জ্বালা সইতে হচ্ছে। আর কার ঠ্যাকা পড়বে, আমার জন্য এত কিছু করার!
মহিলার কথামত, আমি আর আব্বা মিলে নাকি তাঁর জীবন কয়লা বানিয়ে দিসি। আমি বলি, “আমার জ্বালাই সইতে পারতেস না, আমার বাচ্চা-কাচ্চাগুলো কে পালবে!! ওগুলার পিছনেও তো খাবার নিয়ে দৌড়াতে হবে তোমাকে!!”
এসব বললে আম্মা হেসেই উড়িয়ে দেন। বলেন, “এখন যে কয়টা বছর পাচ্ছিস, সবই হল বোনাস।“
আমি আম্মার সামনে কিছু বলিনা।
সত্যিই তো! ভাবতে খারাপ লাগে।
আমার জীবনের পঁচিশ বছর তো চলে গেল। আম্মার সাতান্নো ছুঁই ছুঁই। আর কয় বছরই বা বাঁচবেন এ মহিলা!!
হয়তো আর দশ, বা বেশি হলে পনের-বিশ।
একটা দীর্ঘশ্বাস চলে আসে বুক থেকে।
আচ্ছা, মারা গেলে এ মহিলাগুলো কোথায় চলে যায়? রাতের আকাশের তারা হয়? তারাগুলো তো অনেক বছর বাঁচে।
এই মহিলাগুলো কেন যে একশো বছর বাঁচে না!!
আমি আম্মার সামনে কিছু বলিনা।
আমার চোখের কোণায় পানি চিকচিক করতে থাকে।
আড়ালে এসে চোখ মুছি।
বাসায় গেলে আমার খুব কান্না পায়!! মহিলাটি যে কী করে না!!
২৪ ১২ ১৬
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৯